ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়নে ৫৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়নে ৫৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ দেশের তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুতের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বিতরণ ব্যবস্থার। এজন্য প্রায় ৫৬৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ১২টি নতুন ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান সাব-স্টেশনগুলোর সংস্কার ও লোড ক্ষমতা বাড়ানো হবে। পুরাতন লাইন সংস্কারের পাশপাশি নতুন করে স্থাপন করা হবে ১ হাজার ৩১০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন। এর ফলে এ তিন জেলার ৫৬ হাজার নতুন গ্রাহক বিদ্যুত সংযোগের আওতায় আসবেন। বিদ্যুত বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৭ নম্বর গোলে সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দিয়েছে। উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা চলমান রয়েছে তাতে তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদেরও যুক্ত করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কেউই পিছিয়ে থাকবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিড ব্যবস্থার সঙ্গে তিন পাবর্ত্য জেলার বিদ্যুত যোগাযোগ নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন হবে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সরবররাহ নিশ্চিত করা যাবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকেই ব্যয় করা হবে ৫৩৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা খরচ করা হবে পিডিবির নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০১৭ হতে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত। সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ২৬টি উপজেলাই প্রকল্প এলাকাভুক্ত। এ এলাকার মোট আয়তন ১৩ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সমাদৃত এ পাহাড়ী এলাকা পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে শিল্প কারখানাও গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। এজন্য বিদ্যুত ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। বর্তমানে এ অঞ্চলে ৮৬ হাজার ৫৬৪ গ্রাহকের জন্য লোড চাহিদা রয়েছে ৫৪ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট। সরবরাহ লাইনের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৯৯ মেগাওয়াট। বার্ষিক লোড চাহিদা বৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ হিসাবে ২০৩০ সালের মধ্যে এ তিন জেলার লোড চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৭৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে গ্রাহক চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১২৮ জনে। এসব বিবেচনায় নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্রমতে, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হলোÑ ১২টি নতুন ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণ, ৪টি বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি পুরাতন সাব-স্টেশন সংস্কার ও ক্ষমতাবর্ধন। এছাড়া রয়েছে ১ হাজার ৩১০ কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন স্থাপন এবং ৩৪৬ কিলোমিটার পুরাতন বিতরণ লাইন সংস্কার ইত্যাদি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মতে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে এটি ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এতে মাথাপিছু বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কিলোওয়াট। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে আসছে ৪৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এছাড়া ভারত থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৩৩টি স্থায়ী বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। চলতি বছর কুইক রেন্টাল বিদ্যুত ছাড়াই ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের আশা করছে সরকার।
×