ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;প্রসিকিউশনকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ

‘মৃত’ ওয়াজউদ্দিনের বিচার শুরু করায় ক্ষুব্ধ ট্রাইব্যুনাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

‘মৃত’ ওয়াজউদ্দিনের বিচার শুরু করায় ক্ষুব্ধ ট্রাইব্যুনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার মৃত ওয়াজউদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে বিচার শুরু করায় প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আসামি মারা যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রসিকিউশনকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ এই আদেশ দেয়। এ সময় আদালতে চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, সৈয়দ হায়দার আলী, হৃষিকেশ সাহা, মোঃ মোখলেসুর রহমান বাদল, সায়েদুল হক সুমন, শেখ মুসফেক কবীর, জাহিদ ইমাম, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি উপস্থিত ছিলেন। মামলার প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা বলেছেন, আমরা আসামির মৃত্যুর খবর জানতাম না। এটি আমাদের জানার বিষয় নয়, কারণ তিনি পলাতক ছিলেন। পলাতক থাকায় আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। ধরা পড়লে তো আমরা জানতাম। এখন আইন অনুয়ায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি। পরে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের একটি মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় সেটা হয়নি। এরই মধ্যে একটি অনির্ধারিত বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, তারা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছে, একজন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা চলছে? জবাবে আমরা বলেছি, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’ ‘এ বিষয়ে আদালত বলেছে, এটি আইনবিরুদ্ধ কাজ।’ ‘অপরদিকে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর বিষয় ট্রাইব্যুনাল আমাকেও খতিয়ে দেখতে বলেছে।’ এই মামলায় তিন আসামি ছিল, একজন মারা গেছেন, আসামি রিয়াজউদ্দিন ফকির কারাগারে আছেন। অপর আসামি ওয়াজউদ্দিন পলাতক দেখিয়ে বিচার কার্যক্রম চলছিল। এর আগে বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেলে ‘মৃত ওয়াজউদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের নজরে আসার পর ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ দেখিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ৭ মাস আগেই মারা গেছেন তিনি। একাত্তরের হত্যা, গণহত্যা মামলার আসামি ওয়াজউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের অক্টোবরে তদন্ত শুরু করে, তদন্ত সংস্থা। শুরু থেকেই পলাতক দেখিয়ে তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর ওয়াজউদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে, তার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু সনদে বলা হয়, প্রায় ৮ মাস আগে ২০১৬ সালের ৭ মে ওয়াজউদ্দিন মারা গেছেন। মৃত্যুর ৯ দিন পর তাকে আদালতে হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আদেশ আসে ট্রাইব্যুনাল থেকে। পরে তাকে হাজির করতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এই মামলার অপর আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির কারাগারে আছেন। আসামির ভাই জানান, আমার বড় ভাই ওয়াজউদ্দিন মারা গেছে। তার নামে যুদ্ধাপরাধের মামলা আছে শুনেছি। এখন কী অবস্থায় আছে এটা আমরা জানি না। মারা যাওয়ার দুই দিন পর ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামিকে আদালতে হাজির করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আদেশ দেয়া হয়। ২১ সেপ্টেম্বর এই মামলায় দুজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। দুই আসামির মধ্যে রিয়াজউদ্দিন ফকির (৬৫) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আরেক আসামি ওয়াজউদ্দিন (৭০) পলাতক। এর আগে এক আসামি আমজাদ আলী (৮৮) গ্রেফতারের পর দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা ও শেখ মোসফেক কবির। তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর তদন্ত শুরু করেন। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ গ্রাম থেকে আমজাদ হোসেন ও ভালুকজান গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ১২ আগস্ট তাদের ঢাকায় নেয়ার পথে গাজীপুরে পুলিশের পিকআপের সঙ্গে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই আসামি ও ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমজাদ হোসেন ওরফে আমজাদ হাজী (৯০) মারা যান।
×