ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ পৌষ বিদায় নিচ্ছে। আজ শুক্রবার মাসের শেষ দিন। শনিবার থেকে মাঘ মাসের শুরু। শীতের প্রথম মাসে ঠা-া তেমন অনুভূত হয়নি। দ্বিতীয় মাসটি কেমন যাবে? উত্তর মোটামুটি জানা রাজধানীবাসীর। না, খুব শীতের আশঙ্কা কেউ করছেন না। নানাভাবে সেটি বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোর দিকে তাকালে তো খারাপই লাগে! ক্রেতার অভাবে খা খা করছে। দেশী-বিদেশী জ্যাকেট, সুয়েটার, চাদর সব দিয়ে সাজানো শোরুম। ঢুঁ মারার লোকের অভাব। সাধারণত ফুটপাথগুলোতে কারণে অকারণে ভিড় লেগে থাকে। তা-ও এখন দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ দিয়ে আসার সময় দেখা গেল, যথারীতি শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। হাঁক ডাক চলছে। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফুটপাথের পাশে বেশ কিছু দোকান। এসব দোকান ভর্তি শীতবস্ত্রে। তাকিয়ে যে দেখবে, সেই লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আমিরুল নামের এক দোকানি টুল নিয়ে শান্ত হয়ে বসেছিলেন। বললেন, শীতে আমাদের মাল থাকে বেশি। দুই মাস বিক্রি করি। এবার শীত না পড়ায় বিক্রি কমে গেছে একদম। পৌষ তো শেষ হয়ে গেল। এখন আশা মাঘ নিয়ে। কিন্তু লক্ষণ যা, কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, মাঝে কয়েকদিন একটু শীত নামছিল। ভাল বিক্রি করছি। এখন আবার ভাটা। তবুও মাঘের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে চতুর্দশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ৯ দিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রখ্যাত সিরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ মালাস ও নরওয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা আনিয়া ব্রেইনসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’। উৎসবের অন্যতম ভেন্যু সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন। ছবি দেখানো হচ্ছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, আমেরিকান সেন্টার মিলনায়তন ও স্টার সিনেপ্লেক্সে। ‘বেটার ফিল্ম, বেটার অডিয়েন্স, বেটার সোসাইটি’ সেøাগানে শুরু হওয়া উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, আফগানিস্তান, ইরান, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা, কাতার, ফ্রান্স, মঙ্গোলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চীন, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, কিউবা, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, ইরাক, আফগানিস্তান, নরওয়ে, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর, থাইল্যান্ড, পোল্যান্ডসহ ৫৮ দেশের ১৭৮টি ছবি প্রদর্শিত হবে। স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়া অন্যান্য ভেন্যুতে ৩০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে দেখা যাবে পছন্দের চলচ্চিত্র। রেট্রোস্পেক্টিভ বিভাগে প্রদর্শিত হবে ইরানী নির্মাতা আব্বাস কিওরোস্তামি এবং তুরস্কের নারী নির্মাতা ইয়াসিম ইয়াস্তাওগলু নির্মিত পাঁচটি করে ছবি। এছাড়া থাকছে ৭টি বিভাগে। বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ এশিয়ান কমপিটিশন, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড সেকশন, চিলড্রেনস ফিল্ম সেকশন, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, উইমেন ফিল্ম মেকার সেকশন, শর্ট এ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম সেকশন ও নরডিক ফিল্ম সেকশন। উৎসব উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন ৮৮ জন বিদেশী অতিথি। বাণিজ্যমেলার কথাও বলা চাই। গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। প্রায় সব ধরনের কেনাকাটা সম্ভব এখানে। তাই ঢাকার প্রতি প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন। গত বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় প্রবেশ করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আড্ডা গল্প সামান্যই। সবাই পছন্দের পণ্যের খোঁজ করছেন। প্লাস্টিক পণ্য, ক্রোকারিজ, প্রসাধনী, গৃহসজ্জা সামগ্রীর স্টলগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। দেশীয় নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর প্যাভিলিয়ন খুটিয়ে দেখছেন ক্রেতা। চীন ও হংকংয়ের প্যাভিলিয়নগুলোতে ঢোকা মুশকিল হয়ে যায়। কিছু সময় চেষ্টা করে ঢোকার পর দেখা যায়, এক্সক্লুসিভ গহনা। দামে কম। এ কারণেই ক্রেতার এত আগ্রহ। একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নির্দিষ্ট কোন কেনাকাটা নেই তাদের। এসেছেন ঘুরে দেখতে। পছন্দের কিছু চোখে পড়লে কিনবেন। গুলিস্তানের যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। রবিবার থেকে গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকার ফুটপাথে দিনের বেলা কোন হকার বসতে দেয়া হবে না। হকারমুক্ত কর্মসূচীর আওতায় গুলিস্তান ছাড়াও থাকবে মতিঝিল, পল্টন, জিরোপয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাথ ও সড়ক। কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর তারা বসতে পারবেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বসতে পারবেন যে কোন সময়। এখানেই শেষ নয়, তালিকাভুক্ত হকাররা যদি আবেদন করে তাহলে তাদের বিদেশ পাঠানোসহ বিকল্প কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। এদিকে, বসে নেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও। এক অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার বনানী রেল স্টেশন সংলগ্ন দুটি স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়। স্থাপনা দুটি অনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠেছে জানিয়ে মেয়র আনিসুল হকের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের শুরুতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে দোকান দুটি থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়। পরে ক্যাফে বনানী ও তেহারি অন হুইল নামে দুটি খাবারের দোকান গুঁড়িয়ে দেয় সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার। একইভাবে কাকলীর হোটেল বৈশাখী এবং হোটেল পূরবীর সামনের বর্ধিতাংশ ভেঙ্গে দেয়া হয়। উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলেও এদিন জানান মেয়র আনিসুল হক।
×