ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন পিছিয়ে ২৬ জানুয়ারি নির্ধারণ

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদার আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদার আবেদন খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে শপথ আইন ‘না মানার’ কারণ দেখিয়ে ৩২ জনের সাক্ষ্য ফের নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রিভিশন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্যদিকে, বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদনে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন ফের পিছিয়ে ২৬ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছেন বিচারক। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ৩২তম ও শেষ সাক্ষী হিসেবে মামলাটির প্রথম অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের তখনকার সহকারী পরিচালক নূর উদ্দিন আহমেদকে জেরা করছে আসামিপক্ষ। পুরান ঢাকার বকশীবাজারে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এ দুই মামলার বিচার কাজ চলছে। হাইকোর্টের আদেশে ভবিষ্যতে যে কোন মামলায় সাক্ষ্য নেয়ার ক্ষেত্রে শপথ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করতে আইন সচিব ও সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতে খালেদার আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। পরে বদরুদ্দোজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ‘গড’ এর নামে শপথ করতে হয়। বেগম জিয়ার ৩২ সাক্ষীর ক্ষেত্রে এটা করা হয়নি।’ আবেদন খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপীল বিভাগে যাবেন বলে জানান এই আইনজীবী। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ২০০৯ সালে সুপ্রীমকোর্ট সাক্ষ্য নেয়ার বিষয়ে যে সার্কুলার জারি করেছিল সেটা নিশ্চিত করতে আইন সচিব ও রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে এবং ফের সাক্ষ্য নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে বাতিল হওয়ার পর ৬ ডিসেম্বর রিভিশন আবেদন করা হয়। বিচারিক আদালতের কার্যক্রম ॥ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর পর প্রথমে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে গত ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন খালেদা। ওই ট্রাস্টের তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান তিনি। এরপর মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সন। শপথ আইন ‘না মানার’ কারণ দেখিয়ে ৩২ জনের সাক্ষ্য নতুন করে নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই আবেদনে। ১৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য ২২৫ জনের তালিকা আদালতের কাছে জমা দেয়া হয়। কিন্তু খালেদা পর পর দুটি ধার্য দিনে উপস্থিত না হওয়ায় তার অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি পিছিয়ে যায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন ৫ জানুয়ারি আদালতে হাজির হলে হাইকোর্টে তার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়ে শুনানি পেছানোর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে বিচারক ১২ জানুয়ারি মামলার দিন রাখেন। কিন্তু খালেদার আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার একই বিষয় তুলে আবারও সময়ের আবেদন করলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে বিচারক খালেদার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২৬ জানুয়ারি নতুন দিন ঠিক করে দেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা ॥ এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়। তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
×