ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রিঙ্গিতের দরপতনে বাংলাদেশী কর্মীরা ভাল নেই

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

রিঙ্গিতের দরপতনে বাংলাদেশী কর্মীরা ভাল নেই

ফিরোজ মান্না, কুয়ালালামপুর থেকে ॥ মালয়েশিয়ান মুদ্রার সাম্প্রতিক দরপতনে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের প্রকৃত মজুরি কমেছে। যদিও দেশটির কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সম্প্রতি ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়েছে। এতে বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই অনেক কর্মী চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে যাবেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এখানে একজন কর্মী যে বেতন পাচ্ছেন তা জীবন বাঁচাতেই ব্যয় হচ্ছে। মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের মূল্যমান গত ১১ মাসে কয়েক দফা কমে ২৮ টাকা থেকে ১৮ টাকায় নেমেছে। ফলে বাংলাদেশী কর্মীদের মজুরির পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। টেক্সটাইল কারখানা রিক্রন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মী তারিকুল ইসলাম বলেন, বেতন ৯শ’ থেকে এক হাজার রিঙ্গিত করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তারা আগের তুলনায় এখন বেতন অনেক কম পান। কারণ প্রতি রিঙ্গিতে ১০ টাকা করে কম পাচ্ছেন। আগে এক রিঙ্গিতের বিপরীতে ২৮ টাকা পেতেন আর এখন তারা সেখানে ১৮ টাকা পাচ্ছেন। তাদের বেতন বাড়ানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের বেতন কমে গেছে। আগে তারা ৯শ’ রিঙ্গিত বেতন পেয়ে বাড়িতে ভাল অঙ্গের টাকা পাঠাতে পারতেন। এখন এখানে নিজের চলতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। বাড়িতে টাকা আগের মতো আর পাঠাতে পারছেন না। পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন টাকার বিপরীতে রিঙ্গিতের দাম ওঠানামা করছে। এতে কর্মীদের আশঙ্কা হচ্ছে রিঙ্গিতের দাম আরও কমে যাবে। এভাবে কমতে থাকলে অচিরেই অনেক কর্মীকেই চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে হবে। বুকিতবিনতানে বাঙালী খাবার হোটেল রসনাবিলাসের কর্মী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে খাবার খেতে খেতে কথা হয়। এ সময় তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় এখন শুধু জীবনের তাগিদে কাজ করছি। আগে যেখানে প্রতি মাসে নিজের উপার্জন দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ভাল টাকা পাঠাতাম, সেখানে এখন আয়ের বেশি অংশ নিজের পেছনে খরচ হয়ে যায়। ঋণ করে মালয়েশিয়ায় আসতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংক ও এনজিওর কিস্তি পরিশোধের জন্য আবার অন্য জায়গা থেকে ঋণ করতে হচ্ছে। এভাবে বাড়ির লোকজনের ওপর ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া এসেছি। এ টাকা তিন বছরে তুলে নেয়া জুলুম হয়ে যাচ্ছে। অনেক কর্মী এক চাকরি শেষ করে খ-কালীন আরও একটি চাকরি করছেন। তারপরও যদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যায়। মূল কাজের পাশাপাশি দিনে-রাতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা করাতে গেলে এ দেশে অনেক টাকা লাগে। এজন্য অনেকেই চিকিৎসা ছাড়াই নানা রকম অসুখ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। গত এক বছর ধরে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ায় বিদেশী কর্মীদের এখন এ দেশে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকে সহসাই উত্তরণ ঘটবে না বলে মালয়েশিয়ার কারখানা, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য সেক্টরের মালিকরা আশঙ্কা করছেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, একদিকে দরপতনের ফলে কম বেতন পাওয়া, অন্যদিকে প্রতি বছর ভিসা নবায়ন ও লেভি প্রদান করতে গিয়ে কর্মীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশী কর্মীদের জীবন এখানে দিন দিন খুব খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে। রিক্রন গ্রুপের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তা অমিত কে সাক্সেনা বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রম আইন ও কোম্পানির নিয়ম মেনে তারা তাদের কর্মীদের বেতন এক বছর আগেই বাড়িয়েছেন। দেশটির সব কারখানা বা কোম্পানির মালিকরাই আইনের বিধান অনুসরণ করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। মালয়েশিয়ান মুদ্রার মূল্য পতনের ফলে কর্মীদের মতো তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই মুহূর্তে তাদের আর কিছু করার নেই। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে এমন একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দেশটির সরকার বেশ কিছুদিন আগে উন্নয়নকাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে জমি কিনেছে। এসব জমি উন্নয়ন ও বিক্রি করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অনিয়মসহ নানা কারণে উন্নয়ন কর্মকা- এখনও শুরু করা যায়নি। ফলে দেশটির সরকারও অর্থ সঙ্কটে রয়েছে। এ কারণে দরপতনের এ ধারা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
×