ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাফ ফুটবলে রানার্সআপ সাবিনাদের সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

সাফ ফুটবলে রানার্সআপ সাবিনাদের সংবর্ধনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার। পৌষ মাস। শৈত্যপ্রবাহের আঁচ অনুভূত হচ্ছে। ঘড়িতে বাজে বেলা ১২টা। হাল্কা অথচ আরামদায়ক রোদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) টাওয়ারের সামনে ওয়ালটন এবং বাফুফে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে দেখা গেল কারুর জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। একটু পরেই দৃশ্যমান হলো একটি ঘোড়ার গাড়ি এগিয়ে আসছে। তাদের সামনে ব্যান্ডপার্টির সদস্যরা এগুচ্ছেন বাদ্য-বাজনা বাজাতে বাজাতে। একে একে হাজির হলো পাঁচ-পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ি। তা থেকে লাজুক ও হাসিমুখে একে একে নেমে এলেন সাবিনা, কৃষ্ণা, মাসুরা, সানজিদা, আনাই, স্বপ্নারা। এক কথায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। একটু পরেই এনএসসি টাওয়ারের মিলনায়তনের মঞ্চে বেঙ্গল টাইগ্রেস দলকে ডেকে তোলা হলো। সম্প্রতি ভারতের শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উন্নীত হয় এবং রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ দল, যা তাদের ইতিহাসে সেরা সাফল্য। এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেয় ওয়ালটন। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু এবং অন্যান্য কোচিং স্টাফসহ বাকি ২০ ফুটবলারের (মোট ২৬ জন) হাতে তুলে দেয়া হয় পূর্ব ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি ৩২ ইঞ্চি ওয়ালটন এলইডি টেলিভিশন। সংর্বধনা অনুষ্ঠানটি ছিল একেবারেই সাদামাটা, অনাড়ম্বর। ছিল না কোন চোখ ধাঁধানো লাইটিং, বাজেনি কোন গান, মঞ্চসজ্জা বলতে ওয়ালটন ও বাফুফের লোগো সংবলিত বিশাল আকারের ব্যানার। ব্যানারে বাংলাদেশ দল যে রানার্সআপ হয়েছে, সেই রানার্সআপ বানানটিও (ইংরেজিতে) ছিল ভুল। উপস্থাপিকা দিনাত জাহান মুন্নী সাবিনা খাতুনকে সাবিনা ‘আক্তার’ হিসেবে সম্বোধন করেন। আসল সাবিনা আক্তার ভারি টিভি পুরস্কার আনতে গিয়ে টিভি তুলতে গিয়ে ভারসাম্য রাখতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ার উপক্রম হন। উপস্থাপিকা বাফুফে সদস্য শওকত আলী খান জাহাঙ্গীরকে সম্বোধন করেন জাহাঙ্গীর ‘শুভ’ বলে। তবে মেয়েদের সাফল্য ও পুরস্কারপ্রাপ্তি সবকিছুকে ভুলিয়ে দেয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, যুব ও ক্রীড়া যুগ্মসচিব অশোক কুমার বিশ^াস, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) দিল মোহাম্মদ, ওয়ালটনের মহিলা দলের পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটন গ্রুপের স্পোর্টস এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার বিভাগের প্রধান এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বেশ কিছু মজার ঘটনাও ঘটেছে। বীরেন শিকদার ডনের পুরো নাম বলতে গিয়ে ইকবাল ‘আক্তার’ বলে ফেলেন। আরিফ খান জয় বলেন, তিনি নাকি ২০৯৮ সালে ভুটানের বিপক্ষে খেলেছিলেন (১৯৯৮ হবে)। সালাউদ্দিন জয়কে অভিহিত করেন ‘জুনিয়র মন্ত্রী’ হিসেবে। সবাই সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেও ব্যতিক্রম ছিলেন দুই মন্ত্রী। সাধারণত কোন অনুষ্ঠানে এই দুই মন্ত্রীকে একসঙ্গে দেখা যায় না। হয়তো এ কারণেই তারা লম্বা বক্তৃতা দেন। বীরেন আধাঘণ্টা এবং জয় সময় নেন পৌনে এক ঘণ্টা। বরাবরের মতোই এ দু’জনেরই কেউই মেয়েদের জন্য কোন আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দেননি। শুধুই গালভরা প্রশংসা আর মিষ্টি মিষ্টি কথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। অনুষ্ঠান শেষে বীরেন শিকদারকে প্রশ্ন করা হয়, জাতীয় ক্রিকেট দল একটা খেলায় জিতলেই তাদের টাকা-পয়সা দিয়ে পুরস্কৃত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৪ ও ১৬ দল তিনটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলেও এবং জাতীয় মহিলা দল সাফ ফুটবলে রানার্সআপ হবার পরও তাদের কেন পুরস্কৃত করছে না মন্ত্রণালয়? এর উত্তরে বীরেন শিকদার বলেন, ‘ক্রিকেট দল একটা অবস্থানে চলে গেছে। এজন্য আমরা তাদের পুরস্কার দিই। ফুটবলে এখনও তেমন কিছু ঘটেনি। তাই আমরা কিছু দিচ্ছি না।’ প্রশ্ন হচ্ছে, তাই যদি হয়, তাহলে তারা মেয়েদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়ে কেন এবং কোন মুখে গিয়ে হাজির হন? বাংলাদেশ দল ॥ সাবিনা আক্তার, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার, নার্গিস খাতুন, মাসুরা পারভীন, সানজিদা আক্তার, মাইনু মারমা, মিশরাত জাহান মৌসুমী, সিরাত জাহান স্বপ্না, সাবিনা খাতুন, মারজিয়া, কৃষ্ণা রানী সরকার, নিলুফা ইয়াসমিন নীলা, মারিয়া মান্ডা, আনাই মগিনি, ইশরাত জাহান রতœা, আনুচিং মগিনি, রওশন আরা, মুনমুন আক্তার ও মাহমুদা আক্তার; কোচ : গোলাম রব্বানী ছোটন, সহকারী কোচ : মাহবুবুর রহমান লিটু।
×