ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ৯ বৈশাখ ১৪৩১

কপাস্ট সার বদলে দিচ্ছে নীলফামারীর কৃষি

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

কপাস্ট সার বদলে দিচ্ছে নীলফামারীর কৃষি

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ কেঁচো ক¤েপাস্ট সার বদলে দিচ্ছে নীলফামারীর কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা। এই সার ব্যবহারের মাধ্যমে কম খরচে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে। আবার কেঁচো ও সার বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।আর অরগানিক এই চাষ পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মানুষজন। আর এর সঙ্গে যুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হয়েছে উঠেছেন। ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে প্রকৃতিনির্ভর এই চাষ পদ্ধতি। গত কয়েক বছর ধরে সংসারের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি তারা এ কাজ করছেন। একদিকে কেঁচো ও সার বিক্রি করে প্রতিমাসে মোটা টাকা আয় করছেন, অন্যদিকে কৃষিজমিতে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত ফসল উৎপাদন করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা,জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ ও সৈয়দপুরসহ ছয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কেঁচো ক¤েপাস্ট সার তৈরিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। জেলার সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর গ্রামের সেকেন্দার আলী ও জাহানারা বেগম দ¤পতি এক বিঘা জমিতে রবিশস্যের আবাদ করেন। শুরু থেকে তারা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) তাদের জৈবসার তৈরির উপকরণ সরবরাহ করে। এরপর থেকে এই দ¤পতি বাড়িতে জৈব সার তৈরি করছেন। এ সার দিয়ে তাঁরা জমি চাষাবাদের পাশাপাশি কেঁচো বিক্রি করে বাড়তি কিছু রোজগারও করছেন। ওই দ¤পতির পাশাপাশি খালিশা বেলপুকুর গ্রামের কিছু মানুষ কেঁচো দিয়ে সার তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এলাকার বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালের দিকে জাহানারা জমিতে কেঁচো ও জৈবসারের ব্যবহার শুরু করেন। নীলফামারী কৃষি বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মোঃ ইদ্রিস জানান, কেঁচো দিয়ে তৈরি ক¤েপাস্ট সার আমাদের দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন ঘটাতে চলেছে। কৃষি জমিতে এই কেঁচো ক¤েপাস্ট পর পর তিন থেকে চার বছর ব্যবহার করলে আর রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। এমনকি কোনো জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করেই চাষ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের উর্বর মাটিতে যেসব উপাদান থাকে তার চেয়ে কেঁচো ক¤েপাস্ট সারে নাইট্রোজেন পাঁচ গুণ, ফসফরাস সাত গুণ এবং পটাশ ১১ গুণ বেশি। এছাড়া সালফার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, এ্যালুমিনিয়াম ও জিঙ্কসমৃদ্ধ। ফলে মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী প্রতিবছর শতকে পাঁচ থেকে দশ কেজি কেঁচো ক¤েপাস্ট ব্যবহার করা হয় তাহলে তিন থেকে চার বছরে মাটির পূর্ণতা ফিরে আসবে। তখন আর জমিতে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। এমনকি কোনো ধরনের জৈবসার এবং কীটনাশক ছাড়াই সাচ্ছন্দে চাষাবাদ করা যাবে। সিভিল সার্জন আব্দুর রশিদ বলেন, বিষমুক্ত সবজি মানেই রোগমুক্ত থাকার নিশ্চয়তা। কীটনাশক ছিটানো সবজি ১৪ দিনের আগে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যে কারণে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি ও ফসল সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য উত্তম।
×