ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দাম ২০০ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা

‘কাশ্মীরী’ নামে চায়না শালের ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

‘কাশ্মীরী’ নামে চায়না শালের ছড়াছড়ি

ওয়াজেদ হীরা ॥ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে প্রথম দশটি দিন। মেলার সময় যেন দ্রুতই চলে যাচ্ছে। দর্শক সমাগমও বাড়ছে বটে। তবে ক্রেতাদের চাহিদা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না বিক্রেতারা। বিশেষ করে শাল ব্যবসায়ীরা যেন আরও একটু বেশি অসহায় ক্রেতাদের পছন্দের কাছে! অবশ্য ব্যবসায়ীরাও কম ফন্দিবাজ নয়। এক জায়গার শাল আরেক জায়গার বলে দেদারছে চালিয়ে দিচ্ছে তারা। অবশ্য ক্রেতারা কেউ কেউ জেনেশুনেও ঠকছেন। গোটা মেলাই যেন ‘কাশ্মীরী’ শালের এক কারখানা! তবে কাশ্মীরী শাল স্টলে পর্যাপ্ত থাকলেও অনেকেই না চেনার কারণে চায়না শাল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পছন্দের কারণে চায়না শালই কিনছেন। অবশ্য অনেক সময় ‘কাশ্মীরী’ বলে দোকনদাররাও চালিয়ে দিচ্ছেন চায়না শাল। যদিও এবারের মেলা শালের স্টলগুলোতে খুব বেশি ভিড় দেখা যায়নি। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে সাপ্তাহিক ছুটিন দিন শুক্রবার ও শনিবার একটু ভিড় ছিল শালের দোকানে। এছাড়া অন্যান্য দিন বেশ ফাঁকাই দেখা গেছে দোকনগুলো। কোন কোন দিন সকাল থেকে দুপুর পাড় হয়ে গেলে অনেক দোকানে ন্যূনতম বিক্রিও করতে পারেনি অনেক স্টল। বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা গেছে, দেশী-বিদেশী নানা রংবেরঙের শালের সমাহার। একেক শালের একেক রকম দাম। শালভেদে দু’শ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকার শাল রয়েছ ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে শীতের প্রকোপ কম তাই ক্রেতাদের আগমন কম এ সকল দোকানে। ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাদের সাজানো শাল নিয়ে। তবে অধিকাংশ স্টলে দেখা গেছে আগে বা পরে জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘কাশ্মীরী’ শব্দটি। কাশ্মীরী শালের প্রতি ক্রেতাদের একটু আগ্রহ বেশি। বিশেষ করে বয়সে যারা প্রবীণ তাদেও কাশ্মীরী শালের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা, ভালবাসা রয়েছে। সেই সাথে কাশ্মীরী শাল কেনার বেশ আগ্রহও আছে তাদের মধ্যে। অবশ্য অধিকাংশ দোকানেই কাশ্মীরী শাল রাখাও হয়েছে। কেউ কেউ সেই শাল ঝুলিয়েও প্রদর্শন করেছেন। কেউ আবার মজুদ করে রেখেছেন। যারা কাশ্মীরী শাল সর্বদা ব্যবহার করেন বা যারা কাশ্মীরী শাল চেনেন তাদের ক্ষেত্রে পণ্য কিনে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আর না চিনলেও কাশ্মীরীর পরিবর্তে চায়না শাল নিয়ে আসতে হবে। জানা গেছে বর্তমান আধুনিক ডিজাইনের শালগুলো সবই দেখতে একই রকম। তবে দামে বেশ তারতম্য রয়েছে। চায়না শাল ব্যবহার করলে কিছুদিন পর তার উজ্জ্বলতা মলিন হয়ে যায়, সেই সাথে শালের উপর এক ধরনের আলাদা সুতা (যাকে দোকানদাররা বলে পশম) দেখা যায়। তবে কাশ্মীরী শালে এসব কিছুই হয় না। সেই সাথে কাশ্মীরী শালের চেয়ে চায়না শালে লাভও বেশ বেশি বলে জানিয়েছেন একাধিক দোকানদার। মেলায় দেখা গেছে, কাশ্মেরী শাল (স্টল ১৪০), রোদেলা ফ্যাশন (স্টল ১৪১) কাশ্মীরী শাল ঘর (স্টল ১৪৫), কাশ্মীরী শাল (স্টল ১৪৭), কাশ্মীরী শাল (স্টল ১৪৯), কাশ্মীরী শাল (স্টল ১৮৪) ইত্যাদি স্টলে দেখা গেছে কাশ্মীরী শালে পাশাপাশি নানা আধুনিক রংবেরঙের দেশী- বিদেশী শাল বিক্রি হচ্ছে। তবে দোকানদারা কাশ্মীরী নাম বলে চায়না শাল বিক্রির কথা অস্বীকার করেন। স্টল ছাড়াও বিভিন্ন বিদেশী প্যাবিলিয়নে বিক্রি হচ্ছে নানা রঙের বাহারি শাল। বিক্রয় প্রতিনিধদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা একটি সিঙ্গেল শাল বিক্রি করছেন ২০০-২৫০ টাকা। প্রোডাক্ট অব ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, কাশ্মীরী শালের সমাহার। তারা ৮০০ টাকা থেকে কয়েক হাজার টাকার শাল এনেছেন বিক্রি করার জন্য। বিক্রয় প্রতিনিধি জানালেন, যে শাল হাজার বা বারোশত টাকায় বিক্রি হতো তা আমরা ৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। তবুও মানুষের খুব আগ্রহ নেই। বিরক্তির সুরে একটি স্টলের ম্যানেজার আলিমুদ্দিন জানালেন, নানা অফার দিয়ে শাল বিক্রি করছি। ক্রেতা কম তাই নানা ছাড় দিয়ে খরচ ওঠানোর চেষ্টা করছি। তবে কাস্টমার এমন দাম বলে যে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে মন চায়। নাম প্রকাশ না করে একাধিক দোকানদার জানান, নিজেদের লাভ একটু বাড়াতে কেউ কেউ চায়না শাল বিক্রি করে কাশ্মীরী বলে তবে সবাই নয়। অনেক সময় ক্রেতারা নিজেদের কারণেও প্রতারিত হয় বলে জানান দোকানদাররা। বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা ভাল কিছু দিতে চাই আর কাস্টমার চায় আরেকটু কমের মধ্যে। তখন কাস্টমার যেন না ছুটে যায় সে জন্য কম দামের জিনিসটাই বিক্রি করি নাম ভাঙ্গিয়ে। নিউ ওড়না কালেকশন প্যাভিলিয়নে কথা বলে জানা গেল তারা সাড়ে তিন হাজার টাকার শাল বিক্রি করছে আড়াই হাজার টাকায়। বিক্রি কেমন জানতে চাইলে বলেন, অনেক সময় দুপুর পার হলেও বিক্রি হয় না। তবে গত শুক্রবার বেশ ভাল বিক্রি হয়েছে বলেও জানালেন তারা। আগামীর দিনগুলোতে ছুটির দিনে বিক্রি বাড়তে পারে এমন আশা করছেন তারা। মা এন্টারপ্রাইজ প্যাভিলিয়নে পাওয়া আড়াই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দামে শাল পাওয়া যাচ্ছে। প্যাভিলিয়নে রয়েছে অনেক শাল। কোন কোন শালের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ক্রেতারা এর জবাবে জানা গেল, ক্রেতারা ডিজাইন দেখেন আর কেনেন কোনটা কোন জায়গার অনেকেই জানতে চায় না। বিশেষ করে তরুণীরা শুধু ডিজাইন দেখেন বলেও জানালেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। মিহির আফরোজ ঝুমা ও তার বান্ধবী শাল কিনেছেন। তারা জানালেন, শীত নেই তবে শালের ডিজাইন ভাল, ফ্যাশনেবল তাই কিনলাম। দুটি ৪৫০ টাকা। অবশ্য কেউ কেউ শালকে এখন আর শীতবস্ত্রই মনে করেন না। এটি তরুণীরা ওড়না হিসেবে ব্যবহারও করছেন কেউ কেউ। আধুনিকতায় উন্নত মানের এবং বাহারি ডিজাইনের শালগুলো যেমন শীতের কাজেও লাগে তেমনি কেউ কেউ নানা ‘স্টাইল’ করে ব্যবহার করেন। দোকানদার জানান, তরুণীরা যেমন ওড়না হিসেবে ব্যবহার করেন তরুণরাও অনেকইে পাঞ্জাবির সাথে গলায় ঝুলিয়ে শাল ব্যবহার করেন। এর জন্য একটু পাতলা শাল চান বলে জানান একাধিক দোকানদার। কেউ কেউ হালকা ডিজাইন চান। সেটা কতটুকু মানসম্মত বা দেশী-বিদেশী মুখ্য নয়, পছন্দই মুখ্য বলে জানান একাধিক দোকানদার। হাসনাত বেগম শাল কিনেছেন দেড় হাজার টাকায়। শাল নিয়ে বলেন, কাশ্মীরী শালের যে সুনাম ছিল তার কারণে এখনও আমরা সেই শালই কিনি। পূর্বেও চেয়ে বর্তমান কাশ্মীরী শালে আধুনিকতাও এসেছে বলে জানান এই কর্মজীবী নারী। তিনি দাবি করেন, তার কেনা শাল কাশ্মীরী শালই। একাধিক ক্রেতারা অবশ্য মনে করছেন, ভাল দামের জন্য ভাল পণ্য আর দাম কম হলে পণ্যেও মান নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়। আর বর্তমান যুগে পছন্দই আগে, ঠকা বা জেতার বিষয় নয়। একাধিক স্টলে দেখা গেছে, চাকচিক্যময় বাহারি শাল নিয়ে মত্ত ক্রেতারা কেউ জানতে চাচ্ছে না এটা কি শাল? কোন দেশের শাল? বা শালের মানই বা কেমন। পছন্দ হচ্ছে দামাদামী করে নিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। এ যেন ‘জেনে শুনে বিষ আমি করেছি পান’ এর মতো অবস্থা!
×