ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

যমজ তবে ১ বছরের ছোট বড় যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগোতে এক মহিলা দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। যমজ বোন ওরা। ওদের জন্মদিন পালন করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যমজ দুই বোনের জন্মদিন পৃথক দুই বছরে একজনের ২০১৬ সালে, অন্য জনের ২০১৭তে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক হাসপাতালে জন্ম ওদের। জন্মসাল পৃথক দুটি বছরে হলেও আসলে দুই বোনের বয়সের ব্যবধান কয়েক মিনিটের। প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়। এ বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার কয়েক মিনিট আগে জন্ম নেয় প্রথম বোন। ১২টা পার হওয়ার কয়েক মিনিট পর জন্ম হয় দ্বিতীয় বোনের। একে তো রাত ১২টার পর নতুন বছরের আমার কথা। তার ওপর এবার নববর্ষ এসেছে ১ সেকেন্ড পরে। সে যাই হোক আসলে দুই বোনের জন্মদিন আলাদা আলাদা বছরে তাই বোঝা যাচ্ছে মেয়ে দুটির বাবা মাকে দুই কন্যার জন্য দুটি অনুষ্ঠান করতে হবে একটি বর্ষশেষে, অন্যটি নববর্ষে। বিষয়টি তাদের বাবা মায়ের জন্য খানিকটা হয়ত ঝঞ্ঝাটের হতে পারে। কিন্তু আনন্দের হবে দুই কন্যার জন্য। দুই দিন ধরে তাদের গৃহে চলবে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ এর আনন্দোল্লাস। পেটের ভেতরে দুটো কাঁচি! দিন কয়েক আগে এক ভিয়েতনামী মহিলা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তাকে সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হয় সেখানকার এক হাসপাতালে। ডাক্তাররা শুরু করেন তার শারীরিক পরীক্ষা। হঠাৎ তাদের চোখে বিস্ময়। পেটের ভেতরে কী ওটা! ঘোরতর সন্দেহ হলো ওদের। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার পরীক্ষা করলেন। সিদ্ধান্ত হলো অপারেশনের। দেখা গেল পেটের মধ্যে রয়ে গেছে কাঁচি, একটি নয় দুটি কাঁচি পেট থেকে বের করা হলো। প্রকাশিত এক খবরে জানা গেল এ কথা। আরও জানা গেল ১৯৯৮ সালে এ মহিলার পেটে অপরাশেন হয়েছিল। সে সময় থেকে তার পেটে ছিল কাঁচি দুটি। বলতেই হয়, সেগুলো কেউ ইচ্ছা করে তো রাখে না, রাখে ভুল করে। সে ভুলই যে হয়েছিল এ ব্যাপারে, সেটা পরিষ্কার। এ ধরনের ভুল হয়ত কোন কোন দেশে হয়। এ দেশেও অতীতে এ ধরনের ভুলের ঘটনা ঘটেছে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপত্রে। রোগীর দেহে শল্য চিকিৎসা করেন একদল চিকিৎসক। কেউ হয়ত ছুরি-কাঁচির কাজটি করলেন অন্য এক জনের দায়িত্ব হয়ত কত্তিত স্থান সেলাই করা, যার যেটা কাজ, যার সেটা দায়িত্ব ঠা-া মাথায় তিনি তা করলে চিকিৎসা সুম্পন্ন হয়। কোন একজন তা না করলে তখনই হয় এই বিপত্তি। তখন রোগীর পেটে হয়ত পাওয়া যায় ছুরি, কাঁচি, গজ ব্যান্ডেজ ইত্যাদি। এ ধরনের কাজ যিনি বা যাদের দ্বারা ঘটে, তারা যত বড় চিকিৎসকই হোন না কেন তখন তারা লোকের কাছে পরিচিত হন ‘হন সফদার ডাক্তারের মতো।’ মশার কামড় ও দুর্ঘটনা! ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক ভদ্রলোক ম্যালেরিয়ায় মারা যান। তার একটা বীমা করা ছিল। দুর্ঘটনায় মারা গেলে ঐ বীমা কোম্পানির কাছ থেকে বীমার টাকা পাবেন- এই ছিল শর্ত। ভদ্রলোকের স্ত্রী ওই বীমা কোম্পানির কাছ থেকে বীমার টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন। কিন্তু তার আবেদন নাকচ হয়ে গেল। বীমা কোম্পানির বক্তব্য মহিলার স্বামী কোন দুর্ঘটনায় মারা যাননি। মারা গেছেন ম্যালেরিয়ায় অতএব এ ক্ষেত্রে টাকা দেয়া যায় না। ভদ্র মহিলা আবেদন করলেন তার সংশ্লিষ্ট জেলা ক্রেতা অধিকার সুরক্ষা দফতরে। তারা ভদ্র মহিলার পক্ষে রায় দেয়। এতেও বীমা কোম্পানি টাকা দিতে সম্মত হয়নি, তারা যান জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে। এই কমিশন রায় দেয় ওই ভদ্র মহিলার পক্ষে, কমিশন বলে এই মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে যাতে সেই মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু দুর্ঘটনাই। কমিশনের বক্তব্যের সারমর্ম হলো মশা মানুষকে বলে কয়ে কামড়ায় না। আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে কামড়ে দেয়। এই কামড়ের ফলে হয় ম্যালেরিয়া। সুতরাং এটাও দুর্ঘটনা। অতএব ওই ভদ্র মহিলা স্বামীর করে যাওয়া বীমার টাকা পাওয়ার অধিকারী। প্রকাশিত এক খবরে জানা গেল এই তথ্য। আরও জানা গেল ওই ভদ্র লোকের ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। মশা একটি উপদ্রবকারী ক্ষুদ্র পতঙ্গ এদেরও অবশ্য জাতি ভেদ আছে। প্রধান দুটির একটি হচ্ছে এ্যানোফিলিস এবং কিউলেক্স। আর একটির কথা সবিশেষ শোনা যায় সেটি এডিস। এসব মশা কোথায় নেই! সুপ্রাচীন কাল থেকে গ্রামেগঞ্জে জনপদে এরা হুল ফুটিয়েই গেছে। উপরের ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের। ওই পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় মশার উপদ্রব কেমন ছিল তা কবির এক কবিতায় উল্লিখিত হয়েছে; ‘ রেতে মশা দিনে মাছি/এই নিয়ে কলকেতায় আছি’ আমাদের এই দেশে গ্রামে গঞ্জে শহরে মশার আধিক্য দিন দিনই বাড়ছে। আবর্জনা বাড়ছে শহরে নোংরা জমছে ড্রেনে নর্দমায় মশার প্রজনন ক্ষেত্র চমৎকারভাবে তৈরি হয়ে আছে। মশা ডিম পাড়ছে, বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। মশা মারার ব্যবস্থাটি এতই কম যার জন্য মশক কুলের পোয়াবারো! যা এক তলাতেও মানুষকে কামড়াচ্ছে, চার তলা পাঁচ তলার মানুষ রেহাই পাচ্ছে না। রাজধানী নগরী যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে অধিকহারে হয়েছে নোংরা। এখানে ছোট্ট একটি ইতিহাস স্মরণ করা যায়। ঢাকা একদা ছিল ছোট্ট শহর স্বাধীনতাপূর্ব আমলে। সে কালের সেই ছোট্ট শহরে একটি কথা চুাল ছিল সেটা হচ্ছে ঢাকাকে মশা মুক্ত করেছেন হাবীবুল্লাহ বাহার কথাটি সে কালে বেশ চালু ছিল। এখন সেই ঢাকা আর নেই লম্বায় চাওড়ায়, মাথায়, বহরে ঢাকা এখন সুবিশাল। কত রাস্তা কত ড্রেন কত নর্দমা কত নোংরা কত খোঁড়াখুঁড়ি সে কথা থাক এখানে অন্য একটি কথা বলা যায়। এ দেশে এক সময় দেখা যেত অনেক পরিবহন যানে লেখা থাকত ‘যাত্রীদের জীবন বীমাকৃত’ বোঝা যায় ওই যানে দুর্ঘটনা ঘটলে তাতে কোন যাত্রী মারা গেলে নিহত যাত্রীর পরিবার বীমার টাকা পাবেন। এই লেখাটি এখন দেখা যায় না। ঢাকার বাইরে কোন যানে এমনো কথা লেখা আছে কি না তা ও জানা নেই কিন্তু যানবাহনে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তাতে বহু যাত্রীর প্রাণহানি ঘটছে। আহতও হচ্ছেন অনেকে। এ দুর্ঘটনায় যারা মারা যাচ্ছে তারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হলে তাদের পরিবার নির্ঘাত পথে বসছে। এগুলো যে দুর্ঘটনা তা কি বলার অপেক্ষা রাখে। এই যুগে যাত্রী সাধারণের জন্য কোনরূপ বীমার নিশ্চয়তা দেয়া কি একেবারেই অসম্ভব?
×