ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোহাম্মদ কামরুল হাসান

বিদায় পারগালী ইব্রাহিম পাশা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

বিদায় পারগালী ইব্রাহিম পাশা

ইব্রাহিম পাশা ডেনিসের পারগা অঞ্চলের অধিবাসী তাই জাহাপনা তাকে ‘পারগালী’ সম্বোধন করতেন। তরুণ বয়স থেকেই ইব্রাহিম সুলতান সুলেমানের একান্ত সহচর ছিলেন। পরবর্তীতে হয়েছেন সুলতানের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়। ইব্রাহিমের মেধা ও প্রজ্ঞার ফলে অধিষ্ঠিত হোন অটোমান সাম্রাজ্যের উজিরে আযম পদে। আজীবন দেউলিয়া আলির সেবা করেছেন। কখনও খাস কামরা প্রধান, কখনওবা সেনাপ্রধান। পারস্য ও মিসর অভিযানে অটোমান সাম্রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। যুবক বয়সে নিজের জীবনবাজি রেখেও জাহাপনাকে রক্ষা করেছিলেন। পরম যতেœ বড় করেছেন শাহজাদা মুস্তাফাকে। পিতা-পুত্রের সম্পর্কে যেন কখনও দূরত্ব তৈরি না হয় সে দিকেও ছিল তার তীক্ষè নজর। কিন্তু হায়! এতসব অর্জন, কৃতিত্ব সব ভূলুণ্ঠিত হলো দাম্ভিকতা ও গরিমার কারণে। ফ্রান্সের দূত মসিয়ে ফোরে কাছে জাহাপনা সম্পর্ক কটূক্তি ও নিজেকে জাহাপনার শিক্ষক দাবি করায় এমন ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে তাকে। জাহাপনা সুলতান সুলেমান অবশ্যই এমন কঠোর সিদ্ধান্তের জন্য কাজী এফিন্দির দ্বারস্ত হয়েছিলেন। কাজীর দেখানো পথেই অর্থাৎ ঘুমের মধ্যেই হত্যা করা হয় ইব্রাহিম পাশাকে। নিজের আদরের ছোট বোন খাদিজার কথাও এক বারও বিবেচনা করলেন না জাহাপনা। ইব্রাহিম পাশার মৃত্যু বাংলাদেশের অগণিত টিভি দর্শককে দুঃখ ভারাক্রান্ত করবে। অনেকেই হয়ত সুলতান সুলেমানকে এখন একজন ভিলেন ভাবতে শুরু করবে। দোষারোপ করবেন হুরাম সুলতানাকে। কিন্তু দর্শকদের ভুলে গেলে চলবে না। ইব্রাহিম পাশা নিজেকে আইনের উর্ধে ভাবতে শুরু করেছেন। এমনকি কাজী এফেলির সঙ্গে তার রয়েছে যথেষ্ট মতবিরোধ। যা ন্যায় প্রতিষ্ঠায় জন্য এক বিশাল অন্তরায়। কে এই ইব্রাহিম পাশা। যিনি লাখো দর্শকের মন জয় করেছেন তার অনবদ্য অভিনয়ে। তুরস্কে জন্ম নেয়া এই পাশার নাম ওকান ইয়ালবেক। জন্মেছেন ১৯৭৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময়ে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন অভিনয়। ভর্তি হোন ইস্তানবুলের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। তার শিক্ষক ছিলেন প্রথিতযশা তুর্কী অভিনেতা ইন্দিজ কেনটার। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনটি টিভি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান ওকান ইয়ালবেক। তবে খ্যাতি কিংবা অর্জনের সবটায় সুলতান সুলেমান। এ সিরিজে অভিনয় করে ওকান ইয়ালবেক ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। এ ছাড়া বেশকিছু সিনেমায়ও অভিনয় করেন এই অভিনেতা। চলচ্চিত্রের অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের পুরস্কারও পান এই শিল্পী। টিভি কিংবা সিনেমায় সাফল্য এলেও ওকান ইয়ালবেক কখনও মঞ্চবিমুখ ছিলেন না। নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেন এই শিল্পী। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তার একটি নাটকের জন্য পুরস্কৃত হোন ওকান। সে নাটকে ওকান দশটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এ ছাড়া হলিউডের বেশকিছু এ্যানিমেশন ছবির তুর্কী ভার্সনে ডাবিং দিয়েছেন ওকান। তবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরভাস্বর থাকবেন এই শিল্পী। সমসাময়িক দর্শকপ্রিয় সিরিজ সুলতান সুলেমানে তার ইব্রাহিম চরিত্রটি আমাদের বিনোদন জগতের একটি নতুন মাত্রা। ভারতের ইরফান খানের মতোই দেখতে এই অভিনয় শিল্পীর অসংখ্য গুণগ্রাহী ইতোমধ্যে ফেসবুকে তার ফাঁসির প্রতিবাদে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ভাই চরিত্র।
×