ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিক পরিবারকে জড়িত করার চেষ্টা

বরগুনায় খুনের মামলায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

বরগুনায় খুনের মামলায় তোলপাড়

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাজারখালী গ্রামের ইদি আমিন (৩৮) নামের এক ব্যক্তির কথিত খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর থেকে এ মামলায় একটি সাংবাদিক পরিবারকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে আশি বছরের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও তার ছয় ছেলেকে। এরই মধ্যে পুলিশ এক ছেলেকে গ্রেফতার করেছে এবং তাকে রিমান্ডে আনারও প্রস্তুতি চলছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অপর এক ছেলেকে। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে এ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা এবং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে একটি প্রভাবশালী মহলের অতিতৎপরতায় কারণেই, এ অপচেষ্টা বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ইদি আমিন নামের ওই ব্যক্তিকে ‘গত ৬ জানুয়ারি রাত এগারোটা থেকে পরদিন ৭ জানুয়ারি সকাল সাতটার মধ্যে যে কোন সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মুখে গামছা বেঁধে শ্বাসরোধে বা অন্য কোনভাবে হত্যা করে ‘মৃত্যুর’ ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য গলায় মাফলার পেঁছিয়ে ‘মৃতদেহ’ বাজারখালী সাইক্লোন শেল্টারের দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়।’ এ ঘটনায় ইদি আমিনের বড়ভাই মোঃ ইয়ামিন মৃধা ওইদিনই আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর- ১২। তারিখ ০৭.০১.২০১৭। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে সাতজনই একটি পরিবারের। এর মধ্যে চার নম্বরে রয়েছেন দৈনিক মানবকণ্ঠ পত্রিকার চীপ রিপোর্টার, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক ট্রেজারার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও পাঁচ নম্বরে রয়েছেন দৈনিক জনকণ্ঠের পটুয়াখালীর নিজস্ব সংবাদদাতা মোঃ মোখলেছুর রহমান। তাদের অপর চার ভাই এবং বৃদ্ধ বাবাকেও আসামি করা হয়েছে। এদের আসামি করা নিয়ে শুরুতেই মামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এলাকাবাসীর মধ্যে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মোখলেছুর রহমানের বাবা আবদুল বারেক মৃধার বর্তমান বয়স প্রায় আশি বছর। ছানিজনিত কারণে তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। নিজে একা চলাফেরা করতে পারেন না। এমন এক বৃদ্ধকে কেন আসামি করা হলো, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকাবাসীর মুখে মুখে। মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ঢাকার সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিদিন তিনি সচিবালয়ে যান। মোখলেছুর রহমান তার বাবাসহ পরিবার নিয়ে বহু বছর ধরে পটুয়াখালী শহরে বসবাস এবং সেখানে দায়িত্ব পালন। তাদের আরেক ভাই মোঃ মিজান বহু বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। অপর ভাইয়েরাও শহরে বাস করেন। এসব প্রশ্নের উত্তর না খুঁজেই পুলিশ মামলার দুই নম্বর আসামি মোখলেছুর রহমানের বড়ভাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্লুগোল্ডে কর্মরত মোঃ আনিছুর রহমানকে মামলা দায়েরের আগেই গ্রেফতার করে এবং তাকে রিমান্ডে আনার প্রস্তুতি নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আগে মোখলেছুর রহমানসহ অন্য ভাইদের এবং বাবাকে গ্রেফতারে পুলিশ একইভাবে তৎপরতা শুরু করায় এর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে, মাঠ পর্যায়ে সরজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ইদি আমিনের এটি স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা নাকি সুপরিকল্পিত হত্যা, এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে যথেষ্ট কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। ইদি আমিন এলাকাবাসীর কাছে মাদকসেবী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিল। যে সাইক্লোন শেল্টারে তার ‘মৃতদেহ’ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানেই মূলত তার সার্বক্ষণিক নেশার আড্ডা ছিল। তার ৪-৫ জন সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল। যারা এলাকায় ইদি আমিনের বডিগার্ড হিসেবে পরিচিত ছিল। মৃত্যুর পরে সে সঙ্গীদের আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তাদের রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে এলাকায় আলোচনার ঝড় বইছে। চাকরি দেয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে ইদি আমিন এলাকার মানুষের কাছ থেকে বহু অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তার অনেক শত্রুর সৃষ্টি হয়েছে। ইদি আমিনের লাশ পাওয়ার সঙ্গে আর্থিক দেনা-পাওনার কোন সম্পর্ক আছে কিনা, এ বিষয়টি এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে গুরুত্ব পায়নি। গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আপন ভায়রার পরিবর্তে অপর এক প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া নিয়েও ইদি আমিন এলাকায় একটি বৈরী পরিবেশের সৃষ্টি করে, যা তদন্তে এখন পর্যন্ত গুরুত্ব পায়নি। এছাড়া, এলাকার মানুষের জমির ফসল, পুকুরের মাছ ও গাছের ফলমূল লুটসহ অসংখ্য অপকর্মে জড়িত ইদি আমিনের কর্মকা-ে অতিষ্ঠ কোন ঘনিষ্ট মহল নিজেদের দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে কিনা, এ নিয়েও মাঠপর্যায়ে নানামুখী তথ্য রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এখনই কথা বলতে রাজি হননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুুরুল ইসলাম বাদল, তবে তিনি লাশের শরীরে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে স্বীকার করেন। আর আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সহিদউল্লাহ সংবাদকর্মীদের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
×