ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শঙ্কায় কৃষক

আলু ক্ষেতে পাতাপচা রোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

আলু ক্ষেতে পাতাপচা রোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রাজশাহী জেলায় আলুর আবাদ বেড়েছে। তবে এরইমধ্যে বিস্তীর্ণ আলু ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে লেট ব্রাইট (পাতা পচা) রোগ। ক্ষেতে গাছ বেড়ে ওঠা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে লেট ব্রাইটের আক্রমণ। ফলে ক্রমেই সবুজ ক্ষেত ধূসর আকার ধারণ করছে। এতে শুরুতেই শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন জেলার আলু চাষীরা। এখনই পদক্ষেপ না নিলে এবার আলুর ফলন হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা। জেলার বাগমারা ও পবা এলাকার মাঠে কয়েকদিন ধরে দেখা দিয়েছে এ রোগ। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আলুর আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৯শ’ হেক্টর। তবে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ভাল উৎপাদনের আশায় আলু চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। তবে শুরুতেই লেট ব্রাইটের আক্রমণে চিন্তায় পড়েছেন তারা। জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, তানোর ও গোদাগাড়ি উপজেলা জুড়ে এখন আলুর আবাদ। এসব উপজেলার প্রতিটি মাঠ এখন ভরেছে সবুজের চাদরে। জেলার বাগমারার বালিয়া গ্রামের আলুচাষী ইদ্রিস আলী বলেন, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ডায়মন্ড ও এস্টোরিকস জাতের আলু চাষ করেছেন। সবমিলে এ পর্যন্ত ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গাছও বেড়েছে চমৎকার। তবে হঠাৎ তার আলুক্ষেতে পাতা পচা শুরু হয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই পচন রোগ। আশপাশের ক্ষেতেও একই অবস্থা বলে তিনি জানান। অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জমিতে করমিলসহ দু’-একটি ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনই সুফল পাচ্ছেন না। বলিদাপাড়া গ্রামের আলুচাষী আবু তালেব জানান, তাদের আলুর গাছের পাতা পচন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কীটনাশক কোম্পানির এজেন্টদের পরামর্শে তারা বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু ফল মিলছে না। বাগমারা উপাজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান জানান, আলু চাষাবাদের শুরুতে অতি মাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহার ও ঘনকুয়াশাসহ আবহাওয়াগত কারণে সাধারণত আলু ক্ষেতে লেট ব্রাইট রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। তিনি উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন আলু ক্ষেতে লেট ব্রাইটের আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে জানান, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় ও করণীয় সম্পর্কে প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। লেট ব্রাইট আক্রান্ত জমিতে প্রথম পর্যায়ে মেটালক্সিন পরবর্তীতে মানকোজেব এবং শেষে আবার মেটালক্সিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন এ কৃষি কর্মকর্তা। এছাড়া বেশি পচন দেখা দিলে প্রতিলিটার পানিতে ৬ গ্রাম পটাশ এবং ৬ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে আলুর গাছে স্প্রে করতে হবে। এতে গাছে শক্তি ফিরে আসবে বলে জানা তিনি। নীলফামারী স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টি আর ভারি কুয়াশাপাতের কবলে কিশোরীগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলায় আলু ক্ষেতে লেট ব্রাইট (পচন) রোগ দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দুই উপজেলার আলুচাষীরা। ফলে চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি বছর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় ২ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এ মাসে হঠাৎ করে তাপমাত্রা নিচে নেমে যাওয়ায় দুই দিন দফায় বৃষ্টি, শীত ও ঘন কুয়াশায় কোন কোন স্থানে আলু ক্ষেতে লেট ব্রাইট দেখা দেয়। কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষি কার্যালয়ের পরামর্শে চাষীরা স্বচ্ছ পলিথিনে বীজতলা ঢেকে রাখছেন ও মাঝেমধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে বীজতলা সতেজ রাখছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আলু ও বীজতলা এই ঠা-া ও রোগবালাইয়ের কবল থেকে রক্ষা করতে চাষীরা কীটনাশক ¯েপ্র করছেন।
×