ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেএমসি হ্যান্ডবল দলের গোলরক্ষক শিলা রায়

আত্মবিশ্বাস ছিল শিরোপা আমরাই জিতব

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

আত্মবিশ্বাস ছিল শিরোপা আমরাই জিতব

রুমেল খান ॥ ‘জানতাম আমরাই জিতব, তারপরও আমি শুরু থেকেই প্রচ- নার্ভাস ছিলাম। এটা আমার চিরকালের সমস্যা। ছোটবেলায় পরীক্ষা দিতে গিয়েও সবসময়ই নার্ভাস থাকতাম। খেলার সময়ও একই সমস্যা। তবে ফাইনালে যখন দল ভাল অবস্থায় চলে যায়, তখন আস্তে আস্তে নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠি।’ কথাগুলো যার, তার নাম শিলা রায়। বিজেএমসি হ্যান্ডবল দলের নির্ভরযোগ্য গোলরক্ষক। বুধবার জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ আনসারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বিজেএমসি। খেলায় প্রতিপক্ষ দলের প্রচুর আক্রমণ প্রতিহত করে দর্শকদের নজর কাড়েন ২৫ আগস্ট, ১৯৯২ সালে পৃথিবীতে আসা শিলা। তিনি বিজেএমসিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে। এর আগে খেলেছেন মাদারীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে। মজার ব্যাপারÑ তার গ্রামের নাম, থানা ও জেলা ... সবগুলোর নামই মাদারীপুর। ঢাকায় বড় বোনের মিরপুরের বাসায় থাকেন। নয় ভাই-বোন (তিন ভাই, ছয় বোন) তারা। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। বোনদের মধ্যে চতুর্থ। ছোট বোন শিপ্রা রায় আগে বিজেএমসির হয়ে খেলতো। হ্যান্ডবল খেলায় আসা প্রসঙ্গে শিলা বলেন, ‘শৈশব থেকেই খেলাটি খেলতাম। খেলার ব্যাপারে মা-বাবার পূর্ণ সমর্থন-সহযোগিতা পেয়েছি। না পেলে এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। এছাড়া মাদারীপুরের হ্যান্ডবল কোচ ত্রিনাথ দাসের অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া বিজেএমসিতে আসার পর সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি ডালিয়া আপুর (ডালিয়া আক্তার)।’ বাবা কার্তিক চন্দ্র রায়। মাদারীপুরের জজ কোর্টে চাকরি করেন। মা গৃহিণী, মনি রায়। ৬০ বছর বয়সে গত বছর ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতে এসএ গেমস চলাকালীন তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে গেমস চলাকালীনই দেশে ফিরতে হয় শিলাকে। তবে ফিরতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাকে। কোচ লাভলুর সহযোগিতায় তিনি বাস্কেটবল দলের সঙ্গে দেশে ফেরেন মাদারীপুরের নাজিমউদ্দিন সরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে অনার্স থার্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী শিলা। ২০০৭ সালে বিজেএমসিতে যোগ দেয়ার পর শিলা এ নিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতলেন ১১ বারের মধ্যে ছয়বারই। বুধবারের ফাইনালে বলতে গেলে একতরফা খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয় বিজেএমসি। জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ^াস কেমন ছিল? উত্তরে লেখা শুরুর কথাগুলো বলেন শিলা। বিজেএমসিতে চাকরি ও খেলাধুলার পাশাপাশি ঢাকার বসুন্ধরায় প্লে-প্লেন স্কুলে শিক্ষকতাও (গেম টিচার) করে থাকেন শিলা। ক্লাস নেন নার্সারি থেকে এ’ লেভেল পর্যন্ত (বছর দুয়েক ধরে)। স্কুল থেকে পল্টনের হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে এসে এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি খেলাই খেলেছেন। ‘বসুন্ধরা থেকে পল্টন পর্যন্ত আসতে যে কি পরিমাণ জ্যামের ঝক্কি থাকে, তাতেই জান বেরিয়ে যায়। প্রতিটি খেলা শুরুর মাত্র আধঘণ্টা আগে আমি স্টেডিয়ামে চলে এসেছি। এটা অনেক টেনশনের ছিল। এভাবেই দারুণ চাপ নিয়ে ও কষ্ট করে টুর্নামেন্টটা খেলেছি।’ ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘এই খেলাটিকে দারুণ ভালবাসি। যতদিন ফর্ম-ফিটনেস থাকবে ততদিনই খেলে যেতে চাই। হয়তো বিয়ের পরও খেলব।’ স্মরণীয় ম্যাচ? ‘২০০৭ সাল। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। এই স্টেডিয়ামেই খেলা। তখনও স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়নি। তখন এটা বালুর মাঠ ছিল। এই মাঠে আনসারের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জিতেছিলাম ফাইনালে। ওই ম্যাচের কথা এখনও মনে আছে। এছাড়া মাসখানেক আগে বিজয় দিবস হ্যান্ডবলের ফাইনালে ইনজুরি থাকায় ডালিয়া আপু খেলেননি। সাসপেন্ড থাকায় আরও তিন খেলোয়াড় খেলতে পারেননি। সেদিন ভেবেছিলাম আমরা বুঝি পারব না। সেদিন আরও বেশি নার্ভাস ছিলাম। তারপরও আমরা সেদিন লড়াই করে খেলে আনসারকে হারিয়ে শিরোপা জিতি ভগবানের কৃপায়।’ আদর্শ হ্যান্ডবলার? ‘ডালিয়া আক্তার।’ অবসরে যে কোন ধরনের যে কোন শিল্পীর গান শুনতে পছন্দ করেন শিলা। আর ভালবাসেন ঘুরতে। এ পর্যন্ত দেশের বাইরে গিয়েছেন ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং নেপালে। ইনজুরি? ২০১৪ টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দুই হাঁটুতেই চোট পান শিলা। সেই চোট নিয়েই খেলে চ্যাম্পিয়নও হন। এই আসরের জন্য কোচ নাসিরউল্লাহ্ লাভলুর অধীনে একমাস অনুশীলন করেছেন শিলারা। জাতীয় দলের হয়েও খেলেছেন শিলা। আগামীতে বিজেএমসি এবং জাতীয় দল ... দুই দলের জার্সিতেই পেতে চান আরও অনেক সাফল্য।
×