ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের লড়াই ঠাণ্ডা বাতাসের সঙ্গেও

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশের লড়াই ঠাণ্ডা বাতাসের সঙ্গেও

মিথুন আশরাফ ॥ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাতাসের কাছে হার মেনেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। বাতাসের বেগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০তে হেরেছেন। এবার ওয়েলিংটনেতো সেই বাতাস আরও বেশি বেগে বয়ে চলেছে। সেই বাতাস প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের দুঃশ্চিন্তাই তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমতো কঠিন চ্যালেঞ্জ দেখছেন। সেই চ্যালেঞ্জ ব্যাটসম্যানদেরই বেশি দেখছেন মুশফিক। বুধবার টেস্ট সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যেমন বলেছেন, ‘ঘাসের উইকেটে কিউই বোলারদের সামলান এবং বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে দেয়ার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে ব্যাটসম্যানদের।’ ব্যাটসম্যানদের কথা বলছেন মুশফিক। তিনি নিজেও একজন ব্যাটসম্যান। যার ওপর দল নির্ভর করে। কিন্তু তিনি কি পুরোপুরি খেলার জন্য ফিট। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরির জন্য দুই ওয়ানডে ও তিন টি২০ ম্যাচই খেলতে পারেননি। টেস্ট পাঁচদিনের খেলা। পুরো ফিট মুশফিককেই কী মিলবে? নিজেই জানালেন, ‘আল্লাহর রহমতে শারীরিক অবস্থা ভাল। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে। তারপরও নিজেকে ১০০ ভাগ সুস্থ বা ফিট বলা ঠিক হবে না। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কিন্তু আবারও ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও বলব, খেলার জন্য ফিট।’ বোলারদের নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘সবার আগে মাথায় রাখতে হবে খেলাটা ভিন্ন কন্ডিশনে। আমাদের দেশের আবহাওয়া, উইকেট ও মাঠ কোনটার সঙ্গেই যার কোনই মিল নেই। তবে একটা সন্তুষ্টি আছে আমাদের। শেষ টেস্টে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) আমরা প্রমাণ করেছি যে বোলিং গ্রুপ হিসেবে ২০ উইকেট নেবার ক্ষমতা আছে আমাদের। ইংল্যান্ডকে দুইবার অলআউট করে দেখিয়েছি আমরাও পারি। প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেবার সামর্থ্য আছে আমাদের বোলারদের। সেটা অবশ্যই সন্তুষ্টির। একরকম অনুপ্রেরণাও। তারপরও এটা ভিন্ন পরিবেশ। আমরা শেষ কবে টেস্ট খেলেছি, তাও অনেকদিন আগে। এখানে সিমিং কন্ডিশন থাকবে। পুরো বিষয়টাই চ্যালেঞ্জিং।’ আবহাওয়া প্রসঙ্গে মুশফিক জানান, ‘আমাদের দেশের আবহাওয়া ও উইকেটের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া এবং পিচের চরিত্রগত পার্থক্য অনেক। সম্পূরূর্ণ ভিন্ন। দেশে সেøা ও লো ট্র্যাকে সিরিজ জয়ে মূল ভূমিকা ছিল স্পিনারদের। আর এখানে ঘাসের উইকেটে মূল ভূমিকা রাখতে হবে পেসারদের। তবে আমার মনে হয় না আমাদের পেস এ্যাটাক দুর্বল। আমার বিশ্বাস তারা (পেসাররা) যথেষ্ট সামর্থ্যবান। তাদের সামর্থ্য আছে এই কন্ডিশনে ভাল করার। শুধু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেই নয়, যে কোন ব্যাটিং শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের পেসারদের ভাল করার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে। তারা যদি সেরা বোলিংটা করতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে সুযোগটা থাকবে। এখানে পেসারদের মূল কাজ হলো ভাল জায়গায় বল ফেলা। পিচে ঘাস আছে, তা দেখে আবেগতাড়িত হলে চলবে না। কাজের কাজ করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে ভাল লাইন-লেন্থে বল করে যেতে হবে।’ বাংলাদেশ ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান নেই। তবে তাসকিন আহমেদ আছেন। যার গতি এ মুহূর্তে বাংলাদেশ পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যেটি নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে, উইকেটে কাজে লাগার কথা। যদি লাইন ও লেন্থটা ঠিক থাকে। মুশফিকতো মনে করছেন তাসকিন তার অভিষেকের সেরা জায়গাটাই পাচ্ছেন, ‘আমার মনে হয় তাসকিনের অভিষেকের সেরা জায়গা এটি। নিউজিল্যান্ডের উইকেট এমনিতেই গতিময়, পেসারদের স্বর্গ। আর এখানে তাসকিন নিজের প্রতিভা মেলে ধরতে পারবেন।’ সঙ্গে মুস্তাফিজের অভাববোধ হওয়ার বিষয়টিও জানান মুশফিক। বলেন, ‘মুস্তাফিজের জন্য আফসোসতো থাকবেই। সে এমন এক বোলার যাকে যে কোন ফরমেটে মিস করবেন যে কোন অধিনায়ক।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে মাতিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সিরিজ সেরা হয়েছেন। তার দুর্দান্ত স্পিন ঘূর্ণিতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে আছেন। খেলার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে যেন মিরাজের কাছ থেকে আবার চাওয়ার প্রত্যাশার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া না হয় সেটি মনে করিয়ে দিলেন মুশফিক। বললেন, ‘মুস্তাফিজের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, দারুণ অভিষেকের পর কোন ম্যাচে ২-৩ উইকেট পেলেও অনেকে মনে করে খুব বাজে বোলিং করেছে। আমি এটিই অনুরোধ করব, বেশি প্রত্যাশা যেন না করা হয় মিরাজের কাছে। জাতীয় দলের হয়ে ওর এটা জীবনের প্রথমবার বাইরে আসা। মিরাজ খুব ‘স্মার্ট অপারেটর’। এজন্যই এত দ্রুত টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। বাংলাদেশের উইকেটে স্পিনাররা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় থাকে, এখানে তা হবে অন্যরকম। ও যদি খেলে, এই জায়গাটায় মানিয়ে নিতে হবে। শুধু বোলিং না, ব্যাটিংয়েও ওর কাছ থেকে ভাল কিছু পেতে চাইব।’ ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ব্যাটিং-বোলিং খারাপ হওয়ার সঙ্গে ফিল্ডিংটাও হয়েছে বাজে। শেষ টি২০তে তো ফিল্ডিং ‘যাচ্ছেতাই’ হয়েছে। মুশফিক তাই ফিল্ডিং যেন ভাল হয়, সেদিকেও বিশেষ নজর দিয়েছেন, ‘অবশ্যই ফিল্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমরা চাইব না টম ল্যাথাম, রস টেলর বা কেন উইলিয়ামসনকে সুযোগ দিতে। সব কটা সুযোগ লুফে নেয়ার ব্যাপারটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সিøপ, গালিতে ফিল্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই উইকেটে ক্যাচগুলো পেছনে আসার সম্ভাবনা বেশি। তো কিপার, গালি, সিøপে আমরা যারা থাকি, তাদের দায়িত্ব বেশি।’ সঙ্গে মুশফিক দেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বিদেশেও বজায় রাখতে চান। বিদেশে নিজেদের প্রমাণ করতে চান।
×