ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাগরে লঘু ও নিম্ন চাপের কারণে পৌষ গেছে হিম হিম ঠাণ্ডায়

শনিবার থেকে তীব্র শীত নামবে, বইবে শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

শনিবার থেকে তীব্র শীত নামবে, বইবে শৈত্যপ্রবাহ

শাহীন রহমান ॥ আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে দেশে শীতের মাত্রা বৃদ্ধির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে, দেশে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টির কারণে ওই এলাকায় বর্তমানে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাতেও এসে পড়ছে। আগামী শনিবার নাগাদ সারাদেশের তাপমাত্রা আরও কমে আসবে। এ সময় সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাবে। ফেব্রুয়ারি মাসেও স্বাভাবিক শীত অনুভূত হতে পারে বলে তারা জানিয়েছে। এবার শীতকালে শুরু থেকেই শীতের দেখা নেই বললেই চলে। আবহাওয়া অফিসের হিসেব মতে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে এবং জানুয়ারির ৭-৮ তারিখে দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও সাগরে নিম্নচাপ ও লঘুচাপের কারণে শীত অনুভূত হয়নি। দেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাধারণত শীত মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। আবহাওয়া অধিদফতর জানুয়ারি পর্যন্ত যে গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে, তা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবারে শীতের শুরুতে শীত কম অনুভূত হচ্ছে। তারা জানিয়েছে সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনে এবার ডিসেম্বরের শুরু থেকেই আবহাওয়ায় উষ্ণতা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর মধ্য ডিসেম্বর থেকে দেশে স্বাভাবিক শীত আসে। কিন্তু এবার ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাগরে নিম্নচাপ থাকায় তাপমাত্রা ছিল বেশি। এ কারণে পৌষের শুরুতে খুব একটা শীত পড়তে দেখা যায়নি। ঢাকা শহরের অবস্থা ছিল আরও ব্যতিক্রম। এছাড়াও সাগরে লঘুচাপ থাকায় পুরো পৌষ শীত অনুভূত হয়নি। এই লঘুচাপের কারণে থাইল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে। সাগরে লঘুচাপের কারণেই পৌষের শীত এবার নেই বললেই চলে। আবহাওয়া অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সাধারণত সাগরে নিম্নচাপ ‘ভার্দা’ কেটে যাওয়ার পর আশা করা হয়েছিল তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীত আসবে। কিন্তু এবারে সাগরে লঘুচাপ বিরাজ করায় তা হয়নি। তারা বলেন, সাধারণত এই সময়ে লঘুচাপ দেখা যায় না। কিন্তু এবার ছিল ব্যতিক্রম। এই লঘুচাপে থাইল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে দেশের উত্তর- পশ্চিমের জেলাগুলোতে গত মঙ্গলবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলে প্রচ- ঠা-া নেমেছে। বৃষ্টির কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশের তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে আরও বেশি শীত নামতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকাল ক্রমেই বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ছে। প্রতিবছর আবহাওয়ার ধরন পাল্টানোয় শীত ঋতুতেও এর প্রভাব পড়ছে। ফলে কোন বছর অধিক শীত আবার কোন বছর শীত নেই বললেই চলে। ঋতুবৈচিত্রের ধরন অনুযায়ী প্রতিবছর প্রকৃতিতে শীত এলেও তার ধারাবাহিকতা থাকছে না। কোন বছর কনকনে ঠা-ায় মানুষজন যেমন জবুথবু হয়ে পড়ছে। আবার কোন বছর প্রকৃতিতে শীত ঋতু যে চলছে তা বোঝাই মুশকিল হয়ে পড়ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত শীতের আধিক্য থাকে প্রকৃতিতে। এই সময়টাই বাংলায় শীত ঋতুর পৌষমাস। এই সময়টাতে স্বাভাবিক নিয়মে প্রকৃতিতে শীত নামে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রকৃতি থেকে পৌষ বিদায় নিতে চলেছে। তারপরও দেখা মেলেনি শীতের। শুধু গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও শীতের দেখা মিললেও দেশের অধিকাংশ এলাকায় এবার পৌষে শীত ছিল না বললেই চলে। ফলে শীতের গরম কাপড়েরও আধিক্য দেখা যায়নি। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জানান, শীত ঋতুর ধরন অনুযায়ী প্রতিবছর আবহাওয়া অফিস থেকে একটি মডেলিং তৈরি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় কোন্ সময়টাতে কেমন শীত পড়বে। তাপমাত্রা কত কমতে পারে বা বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। তার ওপর ভিত্তি করেই মূলত মডেলিং তৈরি করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে এবার শীতে মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার শৈত্যপ্রবাহের আভাস দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিস থেকে এ ধরনের মডেলিং তৈরি করা হলেও অনেক সময় মডেলিংয়ের সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে না। বিভিন্ন সময় আবহাওয়ার আচরণগত পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। এবার আবহাওয়া অফিস থেকে জানুয়ারিতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাসসহ তাপমাত্রা ৬ থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসার কথা বলা হলেও মূলত আবহাওয়ার আচরণগত পরিবর্তনের কারণে এবার ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটছে। গত মাসে আবহাওয়া অফিসের বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে জানুয়ারিতে দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়। অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক শেষে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, জানুয়ারিতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) অথবা তীব্র (৪ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস) এবং অন্যত্র দু’একটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মেঘলা আবহাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। উত্তুরে হাওয়ায় ঢাকায়ও এসেছে কনকনে শীতের আমেজ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী, রংপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায়। এতে তাপমাত্রা কমে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়া অফিস বলছে, মেঘলা আবহাওয়া কেটে গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পৌষের শেষ সপ্তাহে এসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তাপমাত্রা কমছে। কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে মেঘলা আকাশে সূর্যের দেখা না মেলায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। এ কারণে রাজধানীসহ অনেক এলাকায় উত্তুরে হাওয়া বাড়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। মেঘলা আবহাওয়া কেটে গিয়ে আজ থেকে উত্তর-পশ্চিাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
×