ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ যুগের মহৌষধ বোটক্স?

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

এ যুগের মহৌষধ বোটক্স?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বলিরেখা দূর করতে, হতাশা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, ঘর্মাক্ত হয়ে পড়া, পাগলামি করা, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিসহ ৭৯৩টি রোগ মুক্তি দেবে বলিরেখা চিকিৎসায় পরিচিত ওষুধ বোটক্স। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। তারুণ্য ধরে রাখার পাশাপাশি বোটক্স সক্রিয়ভাবে হতাশা দূর করতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০১৪ সালে, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রোজেনথ্যাল ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক মনোবিজ্ঞানী ড. এরিক ফিনজির এক গবেষণায় দেখা যায়, তারা দুজনেই হতাশা দূর করতে রোগীদের বোটক্স প্রেসক্রাইব করেন। এরপর ৬ সপ্তাহের মধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট রোগীদের পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন বোটক্স ইনজেক্ট করার ফলে তাদের শরীরের অন্যান্য রোগ থেকেও তারা মুক্তি পেয়েছেন। সম্প্রতি, টাইম ম্যাগাজিনের এক সংবাদ নিবন্ধে নিজের এই অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে রোজেনথ্যাল বলেছেন, ‘আমি সবসময় খুঁজেছি, হতাশার জন্য সবচেয়ে প্রায়োগিক জিনিসটি। অবশেষে আমি পেয়েছি ‘বোটক্স’। এটি সত্যিই হতাশা নির্মূলসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু এখনও অনেকেই এটি সম্পর্কে জানে না।’ অন্যান্য রোগের প্রতিরোধক হিসেবে বোটক্স পরিচিত না হলেও রিংকেলসের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত হলো বোটক্স। এটি বয়সজনিত বলিরেখা কমানোর কাজেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বোটক্স হলো এক ধরনের টক্সিন, এটি পেশির মধ্যে ইনজেক্ট করতে হয়। বোটক্স মূলত একটি টক্সিন উৎপাদনকারী আমেরিকান কোম্পানি। তাই লোকমুখে এই চিকিৎসার নামও বোটক্স হয়ে গেছে। এটি এক ধরনের ইনজেকশন। সাধারণত মুখের বলিরেখা কমানোর জন্য ছোট সুচের মাধ্যমে এটি দেয়া হয়। মুখের পেশিতে এই ইনজেকশন দিয়ে পেশিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে মুখের ভাঁজ অনেক কমে আসে। ছ’মাস বোটক্সের প্রভাব থাকে তারুণ্য ধরে রাখতে। এরপর মুখের বলিরেখা আবার আগের মতোই ফিরে আসে। তাই, তারুণ্য ধরে রাখতে প্রতি ছয় মাস এই বোটক্স মুখে ইনজেক্ট করতে হয়। বলিরেখার জন্য ব্যবহার করা হলেও এটি শরীরে অন্যান্য রোগের ওপরও প্রভাব ফেলে প্রতিরোধ করে। বোটক্স ব্যবহারে খানিকটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সাধারণত মুখেই এটি দেয়া হয়। পেশির সঞ্চালনের কারণে যে অংশে বলিরেখা পড়ে, সেখানেই এটি প্রয়োগ করা হয়। তাই বলে এই নয় যে শরীরের সব জায়গাতেই এটি ব্যবহার করা যাবে। অনেকেরই ভুল ধারণা থাকে যে, ঠোঁটের পাশে বা গালের নিচের অংশে বলিরেখা দেখা গেলে মানেই সেখানে বোটক্স করিয়ে নেয়া যায়। চিকিৎসকরাই পরীক্ষা করে দেখেন যে, ঠিক কোন অংশে বোটক্সের প্রয়োজন। হাতে বা পায়েও বোটক্স দেয়া হয়। এছাড়াও অনেক সময় আন্ডারআর্মে ঘামের জন্যও বোটক্স দেয়া যেতে পারে। তখন এসব জায়গায় ফিলিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে পূর্ণ করা হয়। সেগুলো চামড়ার মধ্যে যে গঠন আছে, সেগুলো দিয়ে তৈরি। এফডিআইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, বোটক্স সবসময় কালো বাক্সে রেখে বহন করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে বোটক্স যদি ঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তবে এটি ভাল ফল দেবে। বোটক্সের দাম নির্ধারণ করা আছে, ইউএস ৩৫০-৫০০ ডলারের মধ্যে। তবে প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা ইউনিট বোটক্স প্রয়োজন হয়। তাই খরচও আলাদাই হয়ে থাকে। বোটক্সের ইউনিট প্রতি দাম হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বোটক্সের ব্যবহার এখনও সীমিত পরিসরেই। তবে এই ইনজেকশনের নাম অনেকেরই জানা আছে। ১৯৯১ সালে এ্যালেগ্রান নামক এক ব্যক্তি ছোট আয়তনে বোটক্স ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি খোলেন। তারপর থেকে বোটক্স একে একে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ২৮ বছর ধরে বোটক্স কোম্পানি বোটক্স ওষুধের আকাশছোঁয়া ব্যবসা করছে। তবে এটি এখন বিশ্বের সব দেশে সমানভাবে পরিচিতি লাভ করেনি।
×