ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাস্টিন গোমেজ

জয় করুন ভয়

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

জয় করুন ভয়

ভূমিকম্পই একমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার কোন পূর্বাভাস বা পূর্ব-সংকেত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ যাকে বলে আকস্মিক দুর্যোগ। তাই নিজ দায়িত্বে মোকাবেলা করতে হয় এ দুর্যোগের ঝুঁকি। ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের দিক থেকে বাংলাদেশ ঝুঁকিপ্রবণ এক জনপদ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি স্বল্প ও মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প আমােদর দেশের প্রতিটি নাগরিককে বেশ শঙ্কিত করে তুলছে। হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিয়ানমার ও ইতালিতে সদ্য ঘটে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাই ভূমিকম্প নামের এই মহাদানব সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতিই এ দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য উত্তম হাতিয়ার। অর্থাৎ পূর্ণ-সচেতনতা ও পূর্ব-প্রস্তুতিই একমাত্র করণীয়। তাই ভবন নির্মাণের সময় ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী নির্মাণ করা উচিত। পরিবারের সকল সদস্যকে ভূমিকম্পেরর ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত করুন। জরুরী অবস্থায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সম্ভাব্য একাধিক পথসহ বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গা পরিবারের সকলকে দেখিয়ে রাখা উচিত। ঘরের ভারি আসবাবপত্র যাতে ভূমিকম্পে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য সেগুলোকে পেছন থেকে আংটা লাগিয়ে দেয়ালের সঙ্গে আটকিয়ে রাখুন। ফায়ার স্টেশন, হাসপাতাল, স্বস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি জরুরী টেলিফোন নম্বরগুলো বাড়ির প্রকাশ্য স্থানে রাখুন। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার ভূমিকম্প সাধারণত ৩০-৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এবং তা বুঝতেই ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড চলে যায়। তাই ভূমিকম্পের সময় ভবন থেকে দৌড়ে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় শান্ত থাকুন, আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করবেন না। যদি মনে করেন তাৎক্ষণিকভাবে ঘর থেকে বের হয়ে খোলা মাঠে পৌঁছাতে পারবেন তাহলে বের হয়ে যান। নতুবা ভূমিকম্পের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিন, অতঃপর টেবিল বা ডেস্ক বা শক্ত কোন আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং তা এমনভাবে ধরে থাকুন যেন মাথার ওপর থেকে সরে না যায়। এছাড়াও শক্ত দরজার চৌকাঠের নিচে ও পিলারের পাশে আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু মাথার ওপর নিরাপদমূলক কিছু রাখুন। আর আপনি যদি রান্না ঘরে থাকেন যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বের হয়ে আসুন। গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে আসুন। ভুলেও লিফট ব্যবহার করবেন না। যদি দুর্ঘটনাবশত ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন তাহলে বেশি নড়াচড়া করার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন যাতে শ্বাসনালীতে ধূলাবালি প্রবেশ না করে। উদ্ধারিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করুন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সক্ষমতা গড়ে তোলা জরুরী। অর্থাৎ ভূমিকম্প সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে। সরকারী- বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পূর্বেই নির্ধারণ করা এবং তা পালনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে হবে। ভূমিকম্পের পর দ্রুত আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং ধ্বংসস্তূপ অপসারণসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পুনর্নিমাণের ব্যবস্থা করতে হবে। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×