ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাফল্যে গাথা তিন বছর

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

সাফল্যে গাথা তিন বছর

আসুক যত বাধা-বিপত্তি, থাকুক যত প্রতিবন্ধকতা, সবকিছুকে মাড়িয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। অগ্রগতির চাকাকে নিতে হবে এগিয়ে। কোথাও থেমে থাকা যাবে না কোনভাবেই। এমন ব্রত নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় তিনগুণ বেড়ে হয়েছে এক হাজার চার শ’ ছেষট্টি মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার কমে চব্বিশ শতাংশে নেমে এসেছে। রফতানি বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ আর প্রবাস আয় সোয়া তিনগুণ বেড়েছে। প্রায় নয় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে বত্রিশ বিলিয়ন ডলার। জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে সাত দশমিক এগারো শতাংশ। এই বৃদ্ধির মাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ব্যক্তিগত প্রবৃদ্ধির সুবাদে রাজস্ব আয় প্রত্যাশিত হারেই বেড়েছে। অবকাঠামোসহ নানা খাতে ব্যয় হচ্ছে লাখো কোটি টাকার বেশি। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। কৃষি খাতে হয়েছে অভূতপূর্ব উন্নতি। সামাজিক নিরাপত্তাসহ বেশকিছু খাতে মানুষের সক্ষমতাও বেড়েছে। বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। কৃষি নির্ভরতাকে ছাড়িয়ে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ঘটছে বিস্তার। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। অর্থনীতিতে নারীর অবদানও বাড়ছে। কৃষি, শিল্প ও সেবায় নারী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নারী ক্ষেতে খামারে, ফ্যাক্টরি, শিল্প, অফিস সর্বত্র আজ কর্মজীবী। এটা বিরাট শক্তি যোগাচ্ছে অর্থনীতিতে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বদৌলতে। দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দদলীয় জোট সরকারের তিন বছর পূর্তি আজ বারো জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। দুই মেয়াদে আট বছরে পদার্পণ করেছে সরকার। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচী, সকলের জন্য বিদ্যুত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য বিমোচন। দুটি খাতেই হয়েছে প্রভূত উন্নতি। যেমন- কর্মসংস্থান, মজুরি, খাদ্যশস্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানিসহ সকল অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি বজায় রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা। সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যের হার কমার পাশাপাশি বৈষম্যও হ্রাস পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে, সেই সঙ্গে অতিদারিদ্র্যের হার কমে বারো দশমিক আট শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশকে এক সময় যারা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলত সেই তারাই এখন বলছে প্রচ- সম্ভাবনার দেশ। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন ‘এমার্জিং টাইগার’। কারও সাহায্য-সহায়তা ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার প্রমাণ করছে, বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল দেশে উপনীত আজ। দেশে আজ ভাতের অভাব নেই, আমজনতার গায়ে পোশাক আছে, পায়ে রয়েছে স্যান্ডেল বা জুতা। এ সবই নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে এ দেশে। শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস পেয়ে বিশ্বে উদাহরণে পরিণত আজ দেশ। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন আরেক যুগান্তকারী উদাহরণে পরিণত করছে। বাংলাদেশ আজ আর ঋণ করে ঘি খায় না। বরং নিজেরাই উৎপাদন করছে ঘি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান। তবে এই সরকার যাত্রা শুরু করেছিল এক নারকীয় কা-কারখানার প্রেক্ষাপটে। প্রায় তিন মাস ধরে চলে সেই আগুন সন্ত্রাস। পঁয়তাল্লিশ দিনের ওপর ছিল হরতাল ও অবরোধ। আজ এসব শুধুই ভয়াল স্মৃতি। জঙ্গীবাদের উত্থানরোধে সাফল্য অনেক। গুলশান হলি আর্টিজানের ঘটনা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানকে চিহ্নিত করেছে জঙ্গী আক্রান্ত দেশ হিসেবে। সে সব মোকাবেলা করে বাংলাদেশ জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশে পরিণত হওয়ার সাধনায় নিমগ্ন। নানা মত ও পথের মানুষ দেশের উন্নয়নে এক কাতারে আজ। স্বল্পোন্নত দেশের তকমা ঝেড়ে ফেলে মধ্যম আয়ের দিকে ধাবিত আজ দেশ। আর দু’বছর পর একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সরকারের সদিচ্ছা বার বার প্রতিফলিত হচ্ছে। আগামী দু’বছর বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে দেশ আরও এগিয়ে যাবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×