ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী তৈরির কারখানা লাইফ স্কুলে পড়াত মুসা ও ফয়সাল

প্রকাশিত: ০৮:২১, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

জঙ্গী তৈরির কারখানা লাইফ স্কুলে পড়াত মুসা ও ফয়সাল

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর উত্তরার লাইফ স্কুলটি ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের নামে মাদ্রাসা যা শিশুদের জঙ্গী হিসেবে তৈরির কারখানা। এই স্কুলটিতেই শিক্ষকতা করেছে আশকোনার সূর্য ভিলা নামক জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া মোস্টওয়ান্টেড শীর্ষ জঙ্গী মাঈনুল ওরফে মুসা। মুসার সহযোগী অপর স্কুল শিক্ষক ফয়সালও শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী। রাজধানীর উত্তরার ধর্মভিত্তিক ইংরেজী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাইফ স্কুলের দুই শিক্ষকসহ ১০ জনকে মঙ্গলবার রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এই কথা স্বীকার করেছে তারা। রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামক জঙ্গী আস্তানায় আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জঙ্গী জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষামনি দুইজনকেই কারাগারে পাঠানোর আগে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে নব্য জেএমবির জঙ্গী তৎপরতা, অর্থ, অস্ত্র, গোলাবারুদের উৎস ও মাঈনুল ওরফে মুসা কোথায় আত্মগোপন করে আছে সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট র‌্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, রাজধানীর উত্তরার লাইফ স্কুলটিতে শিশুদের জঙ্গী তৈরি করার কারখানা ও জঙ্গী উস্কানিদাতা প্রতিষ্ঠান করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া দশ জঙ্গীকে মঙ্গলবার রিমান্ড দিয়েছে আদালত। গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী মামলা দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফায়রুস তাসনিম এই দশ জঙ্গীকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দেন। তাদের আদালতে পাঠিয়ে প্রত্যেকের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। গ্রেফতার হওয়া দশ জঙ্গীর মধ্যে নারী জঙ্গী জান্নাতুল মহাল ওরফে জিন্নাহকে ২ দিন ও বাকিদের প্রত্যেককে ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। যাদের চারদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে তারা হচ্ছেন নব্য জেএমবির সদস্য আবু সাদাত মোঃ সুলতান আল রাজি ওরফে লিটন, আল মিজানুর রশিদ, মোঃ জিয়াউর রহমান, মোঃ কৌশিক আদনান সুবহান, মিজানুর রহমান, মেরাজ আলী, মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ, শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান, শরিফুল ইসলাম। ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবীর বাবুল জানান, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-৪ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার উনু মং বিকেল তিনটায় এই দশ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। পরে তাদের প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত নারী জঙ্গীকে ২ দিন ও বাকিদের ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা ও কলাবাগান এলাকা থেকে নব্য জেএমবির ১০ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের সবাই নব্য জেএমবির তামিম আহমেদ চৌধুরী গ্রুপের সদস্য বলে র‌্যাবের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে লাইফ স্কুলটির সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম ও বর্তমান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান দুইজনই স্বীকার করেছেন, পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির দুই শীর্ষ জঙ্গী মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম ও তানভীর কাদেরীরও এই স্কুলে যাতায়াত ছিল। ওই স্কুলের কাছাকাছি ছিল তাদের বাসা। নব্য জেএমবি যখন গোপনে দেশে জঙ্গী তৎপরতার বিস্তার ও বিস্তৃতি ঘটাতে শুরু করে সেই ২০১৩ সালেই রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর সড়কে ভাড়াবাড়িতে লাইফ স্কুলটি চালু হয়। লাইফ স্কুলে শিক্ষকের চাকরি নেন জঙ্গী তৈরির শিক্ষক মাঈনুল ও ফয়সাল। এই স্কুলটির সাবেক দুই শিক্ষক ফয়সাল হক ও মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসাই এখন পুলিশের মোস্টওয়ান্টেড জঙ্গী। মাঈনুল ওরফে মুসা এখন নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই দুই শীর্ষ মুসা ও ফয়সাল কোথায় আছে সেই বিষয়ে রিমান্ডে আনার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট র‌্যাব সূত্র জানান, লাইফ স্কুলটির উদ্যোক্তা ৮ জন। এর মধ্যে একটি বেসরকারী মুঠোফোন কোম্পানির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা হচ্ছেন ৪ জন। লাইফ স্কুলের প্রধান উপদেষ্টা হচ্ছেন ঢাকার নাজিরাবাজার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। স্কুলটির এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১০। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ মোট শিক্ষক ২৩ জন। এ বছর অষ্টম শ্রেণী চালু হয়েছে। ইংরেজীর সঙ্গে ইসলামিক পাঠ্যক্রম সংমিশ্রণে কোমলপতি শিশুদের পাঠদান করার মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয় বলে তদন্তকারীদের দাবি।
×