ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় শুরু ম্যাচ

এবার মুশফিকবাহিনীর সামনে টেস্টের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

এবার মুশফিকবাহিনীর সামনে টেস্টের চ্যালেঞ্জ

মিথুন আশরাফ ॥ মাশরাফিবাহিনীর পালা শেষ। এবার মুশফিকবাহিনীর পালা। মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে টেস্ট সিরিজে নামার পালা বাংলাদেশের। তাদের সামনে এখন টেস্টের চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত হবে। নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সুখস্মৃতি পায়নি বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতি ম্যাচে হারের পর মাশরাফিবাহিনী তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৭ রানে ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের পর প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটে, দ্বিতীয় টি২০তে ৪৭ রানে এবং তৃতীয় টি২০তে ২৭ রানে হেরেছে মাশরাফিবাহিনী। নির্ধারিত ওভারের সিরিজগুলোতে শুধু দুঃখস্মৃতিই মিলেছে। এবার নির্ধারিত ওভারের চেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে। যে অপেক্ষা বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শেষ হবে। এবার মুশফিকবাহিনীর সামনে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ভাল কিছু পাওয়ার চ্যালেঞ্জ। মিলবে ভাল কিছু? নির্ধারিত ওভারের কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেল মার্কই মিলেছে। এবার কী দীর্ঘ পরিসরের খেলায় কোন পাস মার্ক মিলবে? কেউই আশা করছে না, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশ জিতে যাক। তবে সবার ভেতরই আশা আছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে দলটি টেস্টে জিতেছে; সেই দলটি অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে। একেবারে মুছড়ে পড়বে না। সেটি এখন কতটা দেখাতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা, সেদিকেই সবার নজর থাকবে। কোন ফরমেটেই প্রতিপক্ষকে হারানো বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব নয়। দলটি শুধু একটি ভাল মুহূর্তের অপেক্ষায় আছে। সেই অপেক্ষা টেস্টেও ধরা দিতে পারে। আর যদি কোনভাবে বাংলাদেশ টেস্টে জিতে যায়, তাহলেতো অনেক বড় সাফল্যই মিলবে। নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারাতে পারলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে র‌্যাঙ্কিংয়ে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। ওয়ানডের মতো টেস্টেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে উপরে যাওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের যে কোন একটিতে জিতলেই আইসিসি টেস্ট দলের র‌্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ ড্র করলেও নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আট নম্বরে উঠবে মুশফিকবাহিনী। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ড আছে ছয় নম্বরে। ৯৬ পয়েন্ট তাদের। বাংলাদেশ আছে নয় নম্বরে, ৬৫ পয়েন্ট বাংলাদেশের। চার পয়েন্ট বেশি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৬৯ পয়েন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আছে র‌্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বরে। ওয়েলিংটনে বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্ট ও ক্রাইস্টচার্চে ২০ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের মধ্যে যে কোন একটি টেস্টে জিতলে অথবা দুটি টেস্টেই বাংলাদেশ ড্র করতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলবে। ১-১ ব্যবধানে ড্র করতে পারলে ৫ পয়েন্ট পাবে মুশফিকের দল। তাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১ পয়েন্ট বেশি হয়ে যাবে। সেটি অর্জন করা কী সম্ভব? বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদের টেস্টে অভিষেক হয়ে যেতে পারে বৃহস্পতিবার। স্বপ্নপূরণ হলে আনন্দিত হবেনই। তবে উইকেট দেখে ভীষন খুশি তাসকিন। কারণ বল করার জন্য মনের মতো উইকেট যে পাচ্ছেন। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন জানান, ‘বোলাররা উইকেট দেখে খুব খুশি। সবুজ ও শক্ত উইকেট। বোলিংয়ের জন্য ভাল। আমারও ভাল লাগছে। এই উইকেটে বোলিংটা উপভোগই করব।’ অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা তাসকিন আরও জানান, ‘টেস্ট অভিষেক হলে একটা স্বপ্ন পূরণ হবে। নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে প্রথম টেস্ট খেলব, নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হচ্ছে। তবে অন্য যে কোন জায়গায় হলেও নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবতাম। কারণ আমার টেস্ট খেলাটাই তো সৌভাগ্যের ব্যাপার।’ কিউই ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলার কথাও বললেন তাসকিন, ‘আমাদের দলে বেশ কয়েকজন ভাল বোলার আছে। আমাদের বিশ্বাস, এই বোলিংশক্তি নিয়ে আমরা ভাল কিছুই করব। আমরা যে সেটি পারি, তা আগেও প্রমাণ করেছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘টেস্টে সুযোগ পেতে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিসিবি থেকে শুরু করে দলের কোচিং স্টাফরা সবাই অনেক সাহায্য করেছেন। আমার জন্য আলাদা প্রোগ্রাম পর্যন্ত করা হয়েছে। সেগুলো অনুসরণ করে বোলিং করার সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছি। সত্যি বলতে কি, এটা নিয়ে (প্রথম শ্রেণীতে কম খেলা) আমি একদমই চিন্তিত নই। আমি যদি একটা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচও খেলতাম, সেখানেও আমাকে ১৫-২০ ওভার বল করতে হতো। তখনও আমি নিজের সেরা বোলিংটাই করতে চাইতাম। কাজেই আমি মাত্র ১০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছি, অন্যরা বেশি খেলেছে, এটি নিয়ে অতটা চিন্তিত নই। এটি খুব বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না। আমি মাঠে শতভাগ দিয়ে বল করার চেষ্টা করব এবং মাঠের বাইরে নিজের যতœ নেব।’ তাসকিন আবার নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের প্রচ্ছন্ন হুমকিও যেন দিয়ে রাখলেন। বলেছেন, ‘আমাদের পেস আক্রমণও কিন্তু ফেলনা নয়। সবুজ পিচ দেখে আমাদের ফাস্ট বোলাররাও পুলকিত, রোমাঞ্চিত। আমাদেরও ভালমানের ফাস্ট বোলার আছে। যাদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকলেও মেধায় ঘাটতি নেই। আমাদের যা সামর্থ্য আছে, তার যদি যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে পারি, তাহলে যে কোন কিছু ঘটে যেতে পারে।’ তাসকিন আশায় আছেন, সামর্থ্য অনুযায়ী খেললে নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে বিপাকে ফেলা সম্ভব। বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্ট থেকেই তা হলে হয়।
×