ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ি ভাংচুর লুটপাট

শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ১৫

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ১৫

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১০ জানুয়ারি ॥ জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের রঞ্চন ছৈয়ালকান্দি গ্রামে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে বোমা হামলায় হোসেন খান (২৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত হোসেন খান বড়কান্দি ইউনিয়নের মীর আলী মাদবরকান্দি গ্রামের জলিল খানের ছেলে। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করতেন। মঙ্গলবার সকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বড়কান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান শফিজ উদ্দিন খলিফার সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা দুজনই জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। আহত তিনজনকে ঢাকায় প্রেরণ ও তিনজনকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনার জের ধরে ওই এলাকায় দুই পক্ষের ৩০টি বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার তানভীর হায়দার শাওন ও জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জনকে আটক ও এলাকা থেকে কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আধিপত্য বিস্তার ও গত ইউপি নির্বাচন নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান শফিজ উদ্দিন খলিফার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। রবিবার একই ইউনিয়নের স্থানীয় দুর্বাডাঙ্গা বাজারে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সিরাজ সরদারের সমর্থকরা পরাজিত হয়। সোমবার রাতে সিরাজের সমর্থকরা রঞ্চন ছৈয়ালকান্দি গ্রামে শফিজ উদ্দিন খলিফার সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। মঙ্গলবার সকালে সিরাজ সরদারের সমর্থক বাবুল বেপারীর নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের দল রাম দা, টেঁটা, সরকি ও বোমাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মীর আলী মাদবরকান্দি গ্রামে শফিজ উদ্দিনের সমর্থকদের ওপরে হামলা চালায়। তারা ওই গ্রামে বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। এ সময় বোমার আঘাতে হোসেন খানের ডান পাশের কান ও চোখ উড়ে যায়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হোসেন খান শফিজ উদ্দিন খলিফার সমর্থক ছিলেন। এক আত্মীয়র বিয়ে উপলক্ষে তিনি সোমবার গ্রামে আসেন। বিয়ে অনুষ্ঠান শেষে বুধবার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত জাহাঙ্গীর মাদবর, নুরু মিয়া খান, ইলিয়াছ দড়িকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তারা শফিজ উদ্দিন খলিফার সমর্থক। সেকেন্দার ছৈয়াল, রজব আলী মাদবর ও নুর হোসেন খানকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাহাবুবুল আরেফিন বলেন, মৃত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। নিহত হোসেন খানের স্ত্রী মেরিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী এলাকায় কোন দলাদলির মধ্যে ছিলেন না। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করতেন। দেড় বছর বয়সের শিশুপুত্রকে নিয়ে এখন আমি কোথায় আশ্রয় নেব। নিহত হোসেন খানের মা ইয়ারুন নেছা বলেন, সোমবার রাতে আমার ছেলে ঢাকা থেকে আমার নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ি আসে। মঙ্গলবার ভোর বেলা মেম্বার বাবুল বেপারী, সাবেক মেম্বার দিলু বেপারী ও তার ভাইয়েরা, জালাল বেপারীর ছেলেরা, হযরত আলী বেপারী, আজিজ ফকির ও মোক্তার বেপারী আমার ছেলেকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে মাথায় বোমা মেরে খুন করেছে। আমার ছেলের খুনীদের আমি ফাঁসি চাই। ঘটনার পর থেকে সিরাজ সরদারকে এলাকায় দেখা যায়নি। মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। শফিজ উদ্দিন খলিফা বলেন, সিরাজ সরদার সব সময় আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। ২০১৩ সালেও সে আমার একজন কর্মীকে হত্যা করেছে। শরীয়তপুরের সহকারী পুলিশ সুপার তানভীর হায়দার শাওন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার পর এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
×