ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনভোগান্তি দূর করতে ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচী দেয়ার অনুরোধ

পুরানা পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল মোড় যেতে দুই ঘণ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

পুরানা পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল মোড় যেতে দুই ঘণ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মতিঝিল থেকে ১০ মিনিটের কম সময়ে পল্টন মোড়ে পৌঁছে নিউ ভিশন পরিবহনের বাসটি। অন্যদিন এটুকু রাস্তা আসতে সময় লাগে অন্তত এক ঘণ্টা। সময় কম লাগায় যাত্রীরাও খুশি। পল্টন মোড়ে পৌঁছানোর পর প্রেসক্লাবমুখী সড়ক বন্ধ। তখন বেলা ১১টা। রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। সব ধরনের পরিবহন ঘুরিয়ে দেয়া হলো নয়া পল্টনের দিকে। এবার পুরানা পল্টন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বাসটি আসতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার বেশি। এর পর বাসে আর কোন যাত্রী ছিল না। সড়কে তীব্র যানজট থাকায় ফার্মগেটমুখী যাত্রীরা হাঁটতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভার আয়োজন করা হয়। বেলা দুটায় সভা শুরুর কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক, পিকআপে এমনকি হেঁটে দলে দলে মিছিল আসতে থাকে উদ্যানের দিকে। ফলে তীব্র যানজট দেখা দেয় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। এক পর্যায়ে শহরজুড়ে ছড়িয়ে যায় যানজটের ভোগান্তি। রাত পর্যন্ত এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাফিক বিভাগের কন্ট্রোল রুম থেকে রাজধানীজুড়ে যানজটের কথা বলা হয়েছে। এদিকে জনদুর্ভোগ কমাতে ছুটির দিনে রাজধানীতে সভা-সমাবেশের অনুমতি দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সাধারণ মানুষ ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। মঙ্গলবারের এই সমাবেশের কারণে পুলিশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় গাড়ি না পাওয়ার দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এদিন সকাল থেকে রাজধানীর চিত্র অন্যদিনের মতো থাকলেও দুপুরের আগেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট যখন পুলিশ বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেয়। দুপুর ১টার দিকে ফার্মগেটমুখী গাড়ি চলাচল পুলিশ বন্ধ করে দেয় বিজয় সরণির মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে। এছাড়াও গুলিস্তানের জিপিও মোড় জিরো পয়েন্টে, প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড় থেকে মৎস্য ভবনমুখী রাস্তা, সোনারগাঁ থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা, এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড় থেকে শাহবাগ এবং দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ এবং হাইকোর্টের মাজার গেট পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এই গন্তব্য যাদের তাদের গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটেই চলতে হয়েছে। দুপুরে সাভারমুখী লাব্বায়েক পরিবহন দেখা যায় মগবাজার এলাকায়। কন্ডাক্টর আলাল জানালেন, রাস্তা বন্ধ থাকায় এদিকে এসেছি। যাত্রাবাড়ী থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত আসতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তিনি জানান, বনানী ওভারপাস হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে মিরপুর হয়ে সাভার যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে যাত্রীদের নেমে যাবার সুযোগ নেই। অন্যদিকে সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল থেকে পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, আসাদগেট থেকে এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড, ফার্মগেট- খামারবাড়ি থেকে বিজয় সরণি, মগবাজার থেকে কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, বেইলী রোড, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, মহাখালী, সাতরাস্তা, ধানম-ি, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশ সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট ও পরিবহন সঙ্কটের কারণে ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলা মানুষের স্রোত দেখা গেছে দিনভর। বেলা তিনটার দিকে রূপগঞ্জ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী কাকরাইল হয়ে সমাবেশের দিকে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল। যুবলীগ কর্মী লায়ন জানান, সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থক তারা। বাসে এসেছেন গ্রাম থেকে। এরপর সমাবেশের দিকে যাত্রা। হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ সড়কের বেশিরভাগ অংশজুড়ে সমাবেশের বাস রাখা হয়েছে। কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন, সমাবেশে শুধু ঢাকা মহানগরের কর্মীরাই যোগ দেননি। বৃহত্তর ঢাকার লোকজন এসেছেন। তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ পুরো ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সরকারী ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সভা-সমাবেশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্র্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। সোমবার নগরীর পান্থকুঞ্জ পার্কে নবনির্মিত অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ অনুরোধ জানান তিনি। সাঈদ খোকন বলেন, কিছু রাজনৈতিক কর্মী পুরো রাস্তা দখল করে সভা-সমাবেশ করায় নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর কবলে পড়ে পরীক্ষার্থী, গুরুতর অসুস্থ রোগীসহ সংশ্লিষ্টরা গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়েন। আমরা সবাই সচেষ্ট ও মানবিক হলে নগরবাসী এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। ডিএমপিকেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে আরও দ্রুত ও সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নগরবাসীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান ঢাকা দক্ষিণের মেয়র। এদিকে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে গাড়ি চলাচল করা বা রাস্তা বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা যথাযথ পালন সম্ভব হয় না। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, নেতাকর্মীর স্রোতের মুখে অনেক সড়ক ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও বন্ধ করে দিতে হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। তাছাড়া সমাবেশের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কোনভাবেই সম্ভব হয় না। যথাসময়ে সিগন্যাল ছাড়াও কঠিন। তাই এ রকম রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হবেই। তবে ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করলে জনদুর্ভোগ কমার বিষয়ে একমত ট্রাফিক কর্মকর্তারাও। ইজতেমায় পরিবহনের সহযোগিতা কামনা ॥ আসন্ন বিশ^ ইজতেমায় আগত মুসল্লি এবং জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘœ করতে পরিবহনের সহযোগিতা কামনা করেছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। মঙ্গলবার আব্দুল্ল্াহপুরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পরিবহন মালিক চালকদের এ আহ্বান জানানো হয়। সিনিয়র এসি ট্রাফিক উত্তরা জিন্নাত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডিসি ট্রাফিক উত্তর প্রবীর কুমার রায় পিপিএম। সভায় এডিসি ট্রাফিক উত্তর হুমায়রা পারভীন, টিআই মাহফুজার রহমান, নগর পরিবহনের মালিক চালক এবং ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
×