ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় শেখ হাসিনা;###;দুই বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা

সন্ত্রাসী, জঙ্গী ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারীদের রেহাই নেই ॥ গণআদালতে বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

সন্ত্রাসী, জঙ্গী ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারীদের রেহাই নেই ॥ গণআদালতে বিচার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায় দাঁড়িয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। জনসভায় লাখো মানুষের স্রোত নামিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ দিয়ে সরকারের তিন বছর পূর্তির ঠিক একদিন আগে মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন-সফলতা, অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতার বাকি দুই বছর মেয়াদে তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও জাতির সামনে তুলে ধরেন। বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়- তাদের মুখে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্র সুরক্ষার কথা মানায় না। এরা হত্যাকারী, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী। সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদ ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য দেশের জনগণ একদিন গণআদালতে তাদের (বিএনপি-জামায়াত) বিচার করবে। বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই ইনশাল্লাহ। ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের পর রাজধানীতে আওয়ামী লীগের এটাই ছিল কোন বড়ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচী। এ কারণেই এ জনসভা দলের নেতারা অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করে। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে টানা বৈঠক, প্রস্তুতি সভা ও কর্মিসভা করার ফলও হাতে হাতে পায় দলটি। জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়ে জনপ্রিয়তার পরীক্ষাতেও বেশ ভালভাবেই উত্তীর্ণ হয় আওয়ামী লীগ। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ শান্তি ও স্বস্তিতে রয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, তখন খালেদা জিয়ার মনে অন্তরজ্বালা শুরু হয়। যিনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা চুরি করে খায়, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে তার কাছ থেকে রাজনীতি শিখতে হবে, গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবে- এটা কখনোই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। দেশের জনগণের কাছে যে ওয়াদা করি, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গড়ার। আমরা জাতির পিতার সেই লক্ষ্য ও স্বপ্ন পূরণে তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশের প্রতিটি গ্রামকে নগর হিসেবে গড়ে তুলব। সমগ্র বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায়। আজকের ঐতিহাসিক এই দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা-জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা বাংলাদেশকে তাঁর স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব, দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন প্রমুখ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জনসভা পরিচালনা করেন। দুপুর আড়াইটায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। এর আগে থেকেই মূল মঞ্চ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, দেশাত্ববোধক ও লোকজ সঙ্গীত পরিবেশন হতে থাকে। বেলা একটার পর জনস্রোত ক্রমেই বাড়তে থাকে। দুইটার পর থেকে একদিকে মৎস্যভবন, শিক্ষাভবন হয়ে দোয়েল চত্ব¡র, টিএসসি, শাহবাগ, বাংলামটর, কাঁটাবন এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এই পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জনসভার শুরুর পর পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় মানুষের ঢলে তা রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন থেকে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশে মিছিল আসতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাদ্য-বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে নেতাকর্মীরা যোগ দেন আওয়ামী লীগের জনসভায়। ঢাকা মহানগরের ১৫টি নির্বাচনী আসন এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও হাজার হাজার মানুষের মিছিল যোগ দেয় জনসভায়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে আসা সুবিশাল বর্ণাঢ্য মিছিল সবার নজর কাড়ে। এছাড়া জাতীয় পতাকা সদৃশ্য গেঞ্জি ও টুপি নিয়ে যুবলীগ, লাল রঙের টুপি ও হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ছাত্রলীগ এবং হলুদ গেঞ্জি ও নীল-লালের সমন্বয়ে করা গেঞ্জি পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মিছিল জনসভায় সবার নজর কাড়ে। এছাড়া শফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি মিছিলও ছিল উল্লেখ করার মতো। নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে তিনটার কিছু আগে যখন জনসভাস্থলে পৌঁছান তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে চতুর্দিকে টানানো মাইকের সামনে দাঁড়িয়েই হাজার হাজার মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শুনতে দেখা যায়। আর তীব্র এ জনস্রোত সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমতো বেগ পেতে হয়। তবে আওয়ামী লীগের এ জনসভাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে তীব্র যানজটের কবলে পড়ে মানুষকে ভোগান্তিও পোহাতে হয়। সভাপতির বক্তব্যে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়, আর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলেই দেশ পিছিয়ে যায়। বিএনপির দোসর হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত। যেসব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদ- হয়েছে, সেই দ- কার্যকরও করা হয়েছে- খালেদা জিয়া তাদেরকেই তাঁর ক্যাবিনেটে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন! কীভাবে একজন মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়? এরা কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? ক্ষমতায় থেকে এরা খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, অর্থ ও অস্ত্র পাচার, দুর্নীতি ছাড়া দেশকে আর কিছুই দিতে পারেনি। এরা লুটপাটেই ছিল ব্যস্ত, দেশের উন্নয়ন করবে কী। আমরা বিদ্যুত দিয়েছি, আর বিএনপি দিয়েছে খাম্বা। খাম্বা আছে বিদ্যুত নেই- এটাই ছিল ওই সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃত চেহারা। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও নাশকতার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আন্দোলন মানেই মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ আর নাশকতা। নির্বাচন ঠেকানোর নামে নির্বিচারে পুড়িয়ে তিনি মানুষ খুন করিয়েছেন। হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে ২০১৫ সালে আবার শুরু করলেন তা-ব। গুলশানের বাসা ছেড়ে গুলশানের অফিসে উঠলেন এবং খালেদা জিয়া বললেন, সরকার উৎখাত না করে উনি ঘরে ফিরবেন না। এরপরই উনি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করলেন। ২৩১ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন খালেদা জিয়া। সেই ভয়াবহ তা-বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু হত্যাযজ্ঞই নয়, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত ২৯টি রেলের বগি, ১১টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করেছে, ফিশপ্লেট উপড়িয়ে নাশকতা চালিয়েছে, ২৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে পর্যন্ত তারা হত্যা করেছে। এমনকি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আগুন দিয়ে শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। এটাই ছিল খালেদা জিয়ার আন্দোলন। কিন্তু জনগণ যখন তাদের প্রতিহত করা শুরু করল, জনগণের ধাক্কায় খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয় ছেড়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। যারা এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়, নাশকতা চালায় তাদের মুখে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের কথা শুনতে চায় না। দেশের সব ইমাম-মোয়াজ্জিন, শিক্ষক, অভিভাবকসহ দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কেউ যাতে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে না পড়ে, বিপথে চলে না যায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। ইসলামে মানুষ হত্যা শেখায় না। শেষ বিচারের মালিক একমাত্র রাব্বুল আল-আমিন। ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে, আত্মঘাতী হচ্ছে তারা কখনোই বেহেস্তে যাবে না, তারা যাবে দোজখে। কারণ ইসলাম কখনও আত্মঘাতী, সন্ত্রাস বা মানুষ খুন করাকে প্রশ্রয় দেয় না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে- এটাই আমরা চাই। এজন্য সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ জানুয়ারি বাঙালীর জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিল। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন, বাঙালী জাতি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তিনি বলেন, ইয়াহিয়া খান ফাঁসি দিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বিশ্বজনমতের চাপে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছে নয়, ছুটে গিয়েছিলেন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, তাঁর প্রিয় জনগণের কাছে। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তবে বাংলাদেশ ২৫/৩০ বছর আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত। দেশের মানুষ উন্নত জীবন পেত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলছিলেন তখনই তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পরই শুরু হয় হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে মুক্তি দেয়, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন। প্রতি রাতে কার্ফিউ দিয়ে দেশ চালান এবং হাজার হাজার সেনা অফিসারকে হত্যা করেন। বঙ্গবন্ধুৃকে হত্যার পর হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা কখনও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়নি। কারণ তারা বাংলাদেশে অবস্থান করলেও মনেপ্রাণে ছিল পাকিস্তানী। পরাজিত হানাদারদের পদলেহন করেই ক্ষমতায় থেকেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে রূপরেখা দিয়েছিলেন। বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে দেশকে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আমরা বাংলাদেশকে ঠিক সেভাবেই উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এই সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করতে চাই দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে, যেখানে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিসহ প্রত্যেক ছেলে মেয়ে শিক্ষিত হবে, উন্নত জীবন পাবে, সবার মুখে হাসি ফুটবে। প্রতিটি গ্রামেই একটি নগর হিসেবে গড়ে উঠবে। গ্রামের মানুষও উন্নত জীবন পাবে। সমগ্র বাংলাদেশই হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার দেশ। বঙ্গবন্ধুর কাছে আমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞা- আমরা এই দেশকে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবোই ইনশাল্লাহ।
×