ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪ লাখ গ্রাহক আড়াই হাজার আউটলেটে লেনদেন করছেন ;###;এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা বাড়ছে

এজেন্টের মাধ্যমে গ্রামে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

এজেন্টের মাধ্যমে গ্রামে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা

রহিম শেখ ॥ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। মূলত গ্রামে যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছেনি ওইসব এলাকায় ব্যাংকগুলো এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ১০টি ব্যাংক প্রায় দেড় হাজার এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। আর তাদের মধ্যে আউটলেট খোলা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এসব আউটলেটের মাধ্যমে চার লাখ গ্রাহক প্রতিদিন লেনদেন করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পৌঁছে দিতে চালু করা হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। দিন দিন বাড়ছে এর পরিসর। যে কারণে প্রয়োজন পড়েছে একটু বিস্তৃত আকারে নতুন নীতিমালার। ইতোমধ্যে নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের সীমাও পরিবর্তন করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৩টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর লাইসেন্স পেলেও কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে ১০টি। এগুলো হলো ডাচÑবাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। যে ৩টি ব্যাংক এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সেগুলো হলো- ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক। এছাড়া বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ১০টি ব্যাংকের সারাদেশে ১শ’ এজেন্ট ও প্রায় ২ হাজার ৫শ’ সাব এজেন্ট রয়েছে। জানা গেছে, গ্রামে ব্যাংকের শাখা খোলা ব্যয়বহুল। কারণ, কোন ব্যাংক শহরে একটি শাখা খুলে যত তাড়াতাড়ি মুনাফায় আসে, গ্রামে একটি শাখা খুলে মুনাফায় আসতে তার কয়েকগুণ সময় লাগে। এ কারণে গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকগুলো শাখা খুলতে গড়িমসি করে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আছে শহরে দুটি শাখা খুললে গ্রামে একটি শাখা খুলতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যাংকিং সেবা দৌরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যয়সাশ্রয়ী এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালায় ১২ ক্যাটারির ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এজেন্ট হতে পারবেন। এর মধ্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নিবন্ধিত এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন কারবারি প্রতিষ্ঠান, তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক ব্যবসায় পরিচালনায় সক্ষম এমন শিক্ষিত ব্যক্তি ইত্যাদি। ব্যাংকের মতো ব্যাংক মনোনীত এজেন্টরা ব্যাংকের মতো যাবতীয় লেনদেন করতে পারবে এবং প্রায় সব ধরনের সেবা দিতে পারে। তবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজন গ্রাহক এককালীন চার লাখ টাকার বেশি অর্থ জমা দিতে পারবেন না। আবার এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাংকের মতোই নিরাপদ। যে ব্যাংকের এজেন্টের কাছে গ্রাহক ব্যাংক হিসাব খুলবেন মূলত তিনি সে ব্যাংকেরই গ্রাহক। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের যাবতীয় নিরাপত্তা ও দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। তবে গ্রাহককে প্রতিটি লেনদেনের সিস্টেম জেনারেটেড ডকুমেন্টস এজেন্টের কাছ থেকে গ্রহণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রথম বছরে মাত্র ২৭টি আউটলেট খোলা হয়েছিল। এখন আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২২টি। এজেন্ট ব্যাংকিং হলো, সমঝোতা স্মারকের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেয়া। কোন ধরনের চার্জ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া কোনভাবেই গ্রাহক যেন প্রতারিত না হন সে জন্য প্রতিনিধি নিয়োগের আগে অবশ্যই তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, বিশ্বস্ততা ও সততার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হয়। প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়া হলেও পরে পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। আরও তিনটি ব্যাংক যারা অনুমোদন পেলেও কার্যক্রমে আসেনি ওই ব্যাংকগুলো হলো সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। জানা গেছে, নতুন নীতিমালা চুড়ান্ত হলে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে এজেন্ট-সাব এজেন্ট এর কাঠামোগত পরিবর্তন। নিরাপত্তা বাড়াতে আরও বেশি করে দেখে শুনে নিয়োগ দিতে হবে এজেন্ট-সাব এজেন্ট। এদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা সেটাও আনা হবে এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে কতদিনের অভিজ্ঞতা লাগবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এতে করে নিরাপত্তা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক বর্তমানে সর্বোচ্চ দুইবার লেনদেন করতে পারে। প্রতিবার আবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারে। পরবর্তীতে প্রতিটি লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা ১ লাখ বা তারও বেশি হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
×