ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝুঁকিমুক্ত আর্থিক খাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

ঝুঁকিমুক্ত আর্থিক খাত

ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার পথে দেশের অন্যতম বড় একটি খাত। আর এই ইতিবাচক উদ্যোগটি দেশকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করার ক্ষেত্রে অনন্য আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবেই বিধৃত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার তেত্রিশ বছর পর ইতিবাচক ধারায় যাত্রা শুরু হলো প্রতিষ্ঠানটির। দেশের আর্থিক খাত ও রাজনৈতিক পরিম-ল থেকে একটি দুঃসহ ভার নেমে গেল। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠানটি। একচেটিয়াভাবে দেশবিরোধী রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত ব্যাংকটিকে রাহুমুক্ত করার পথ অনেকটাই পাড়ি দেয়া হয়েছে। ক্রমশ এটিকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে এখন। বেসরকারী খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে সংস্কার কার্যক্রম যেভাবে শুরু হয়েছে, তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে গ্রাহক ও আমানতকারীরা মনে করছেন। স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী হিসেবে ব্যাংকটির ভূমিকা বরাবরই বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থানে। জামায়াত-শিবিরপন্থী না হলে ব্যাংকটিতে চাকরি পাওয়া যেমন ছিল অসম্ভব তেমনি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক নেতাদেরও এ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি মিলত না। ব্যাংকে কর্মরতদের পঁচানব্বই শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ‘ব্যাক গ্রাউন্ড’ জামায়াত-শিবিরের। দেশের একটি বড় ব্যাংক স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশজুড়ে অরাজকতা, নাশকতা সৃষ্টিতে ব্যাংকটির আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছিল জামায়াতীরা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাপর দেশব্যাপী যে মারাত্মক সহিংসতা, আগুন-সন্ত্রাস, সড়ক অবরোধ, বৃক্ষ কর্তন এবং পেট্রোল বোমা, জীবন্ত মানুষ হত্যাসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানো হয়েছিল তাতে জড়িত জামায়াত, শিবির ও জঙ্গীদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক যোগানদাতা হিসেবে ব্যাংকটি চিহ্নিত হয়ে আসছিল। লাভের টাকায় জনগণের সম্পদ নষ্টের তৎপরতায় ব্যাংকটি জড়িত হয়ে পড়েছিল জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত থাকায়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর তেত্রিশ বছর পরে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এই ব্যাংক একচেটিয়াভাবে ব্যাংকিং খাতে ব্যবসা করে আসছিল। জামায়াতী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ বিনিয়োগে এগিয়ে ছিল। একটি ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকটি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছিল, তা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় সাবকমিটির সিনেটে পেশ করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল : বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন বিশ্বজুড়ে ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে সহায়তা করে আসছে এবং জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। ইসলামী ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশ শেয়ারের মালিক সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান ব্যাংক আল রাজি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গী তৎপরতায় ভূমিকা রেখে আসছে। ইসলামী ব্যাংকটি অর্থ পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশে কাজ করে। বোমা হামলার মতো সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত ব্যক্তিকেও এ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়। অর্থ পাচারবিরোধী নীতি ভঙ্গ করে জঙ্গীদের সহায়তা করার দায়ে ব্যাংকটিকে এর আগে তিনবার জরিমানা দিতে হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংক বহু আগে থেকেই ব্যাংকের পর্ষদে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। ব্যাংকটিতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত জামায়াতে ইসলামীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল বরাবরই। তারাই পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল। ব্যাংকটির লভ্যাংশ বিপুল পরিমাণ হলেও তার ব্যাপক অংশই ব্যবহৃত হয়েছে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী অর্থায়নে; অথচ দেখানো হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। এসব প্রেক্ষাপটে ব্যাংকটির বিদেশী উদ্যোক্তারা তাদের মালিকানার অংশ ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারও ব্যাংকটিকে নেতিবাচক ধারা থেকে ফিরিয়ে আনার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সাধুবাদযোগ্য। আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষাসহ ব্যাংকটিকে স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতায় জড়িত শক্তির হাতমুক্ত করে নিয়মতান্ত্রিক ধারা বহাল করবেন বলে গণপ্রত্যাশা।
×