সাজু আহমেদ ॥ উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী। নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারে গত প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা, প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে তাদের নন্দিত প্রযোজনাগুলো মঞ্চায়ন করেছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গুণী শিল্পীদের মূল্যায়নে বিশেষ সম্মাননা দিয়ে আসছে। এ সংগঠনের তৈরি অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে ভূমিকা রাখছেন। বগুড়ার কৃতী সন্তান বরেণ্য লেখিকা রোমেনা আফাজের ৯০তম জয়ন্তী স্মরণে তারই নামে স্মৃতি স্বর্ণপদক দিয়েছে সংগঠনটি। এবার এ আয়োজনটি নিয়ে ঢাকায় হাজির হয়েছিল সংগঠনটির কর্মীরা। বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দিল ঢাকার দর্শকদের। এ আয়োজনের মাধ্যমে এবার রোমেনা আফাজ স্মৃতি স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী এবং সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আনিসুল হককে। এ উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান এবং সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি লিয়াকত আলী লাকী ও সাহিত্যিক আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রোমেনা আফাজ স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রদান পর্ষদের আহ্বায়ক লায়ন মোজাম্মেল হক লালু। উপস্থিত ছিলেন পদক প্রদান পর্ষদের সদস্য সচিব আব্দুল মোবিন জিন্নাহ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘আনন্দ লোকে মঙ্গলালোকে’ নৃত্যগীতে ফুলের মালা, উত্তরীয় ও পদক দিয়ে অতিথি ও পদকপ্রাপ্তদের বরণ করে নেয়া হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন অতিথিরা।
এ সময় লেখিকা রোমেনা আফাজ ও আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বগুড়ার মাটি ও মানুষ উভয়ই উর্বর। তারা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শ্রেষ্ঠত্বের অংশীদার। বিশেষ অতিথি আব্দুল মান্নান এমপি বলেন, রোমেনা আফাজ আমাদের অহঙ্কার। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী বগুড়ার সংগঠন হলেও তারা জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে। শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদকে ভূষিত লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমাদের সাহিত্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে রোমেনা আফাজ একজন মহীয়সী লেখিকা। তার স্মৃতি ধরে রেখে পথ চলছে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী। সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদকে ভূষিত লেখক আনিসুল হক রোমেনা আফাজ স্মৃতিপদক দিয়ে গুণীর কদর করায় আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে লায়ন মোজাম্মেল হক বলেন, বগুড়ায় জন্ম হলেও লেখিকা হিসেবে রোমেনা আফাজ সারাদেশে সমাদৃত। একই সঙ্গে বগুড়ার আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীও দেশ-বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। সংগঠনটি ভবিষ্যতেও তাদের এ ধারা অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি। পদক প্রদান ও আলোচনা শেষে লালনফকিরের জীবনী অবলম্বনে ‘বারামখানা’ নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন করে ঢাকার দর্শকদের মুগ্ধ করে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। দর্শক চাহিদার কারণে একই মঞ্চে পরপর দু’বার নৃত্যনাট্যটি মঞ্চায়ন করে তারা। নৃত্যনাট্য ‘বারামখানা’ পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুস সামাদ পলাশ। প্রযোজনাটির নাট্য পরিচালনায় ছিলেন আব্দুল মোবিন, সঙ্গীত পরিচালনায় ইবরার টিপু। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন ঠা-ু রায়হান। নৃত্যনাট্যে অংশ নেন- আব্দুস সামাদ পলাশ, সোহাগ, মম, অর্চি, ঐন্দ্রিলা, স্রোত, শাহীন, খোকন, ঐশ্বর্যসহ আরও অনেকে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন তানজিলা সেলিম। ‘বিশাল বিশ্বে অসংখ্য ভিড়ের মাঝে/কে কার মনে রয়/পড়ে থাকে শুধু তার কাজ/নাহি তার কোন ক্ষয়/’- এ চরণের মতোই কালজয়ী লেখিকা রোমেনা আফাজের ৯০তম জয়ন্তী উপলক্ষে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর এ আয়োজন রাজধানীর দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়। এ আয়োজনের সাফল্য তাদের আরও অনেক দুর নিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: