ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃহস্পতিবার শুরু

ওয়েলিংটন পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

ওয়েলিংটন পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে সিরিজের পর টি২০ সিরিজেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এ কারণে হোয়াইটওয়াশ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়নি। উভয় সিরিজে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার পরীক্ষা শুরু মুশফিকুর রহীমের অধীনে। টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি এখন লড়বেন কিউইদের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজে। আগের সিরিজেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়ার পর এখন টেস্ট ক্রিকেটেও দলকে নিয়ে ভাল কিছু পওয়ার প্রত্যাশা বেড়েছে। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দলের বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে এখন সেই স্বপ্নগুলোও শঙ্কা নিয়েই দেখতে হচ্ছে। তবে একটি অর্জন হাতছানি দিচ্ছেÑ একটা টেস্ট জিতলেই প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বরে উঠবে বাংলাদেশ দল। বৃহস্পতিবার প্রথম টেস্ট শুরু হবে ওয়েলিংটনে। সোমবার সকালেই এ শহরে পৌঁছেছেন মুশফিকরা। টেস্ট লড়াইয়ে কিউইদের বিরুদ্ধে নামার আগে বড় চিন্তা ইনজুরি নিয়ে। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস সর্বশেষ টি২০ ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েছেন। আর ওয়ানডে সিরিজেই ইনজুরিতে পড়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম নিজেই। তামিম ও ইমরুলের ইনজুরি তেমন বড় ধরনের না হলেও টেস্ট খেলার জন্য পরিপূর্ণ স্বাভাবিক থেকে নামতে পারবেন কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। অবশ্য এ দু’জনের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানানর জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় নিয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। সবকিছু ঠিক থাকলে পূর্ণ শক্তি নিয়েই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামতে পারবে বাংলাদেশ দল। মুশফিকের ইনজুরিটাও ওয়েলিংটন টেস্টের আগেই ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। দলের অন্যতম এ ব্যাটিং স্তম্ভ না থাকার কারণে টি২০ সিরিজে অভাবটা বেশ ভালভাবেই টের পেয়েছে বাংলাদেশ দল। মুশফিকের ব্যাকআপ হিসেবে ঘোষিত টেস্ট দলে রাখা হয়েছে তরুণ উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানকে। ইতোমধ্যেই টি২০ সিরিজে মুশফিকের পরিবর্তে উইকেটের পেছনে বেশ ভালই সার্ভিস দিয়েছেন এ তরুণ। তবে ব্যাট হাতে খুব বেশি ভাল করতে পারেননি। টানা হারে হতাশায় ডুবে থাকা দলটিকে এবার দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলতে হবে যার শুরুটা ওয়েলিংটনে। সোমবার সকালেই (বাংলাদেশ সময় ৮টা) ওয়েলিংটন পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। সীমিত ওভারের অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে সরাসরি অকল্যান্ড গেছেন। সেখানে হাতের কব্জির জন্য ডাক্তার দেখিয়ে তারপর স্ত্রী সন্তানসহ অবকাশ যাপন করতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি চলে যাবেন। আর শুভাগত হোম, তানভির হায়দার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও এবাদত হোসেন দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরেছেন সোমবার সকালে মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে। সর্বশেষ খেলা টেস্ট সিরিজের দলে আবারও কিছু পরিবর্তন এসেছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয়ের ম্যাচে চমক দেখান তরুু অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মান দলে আছেন। তবে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে সুযোগ করে নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ফিরেছেন টি২০ সিরিজে দারুু বোলিং করা অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেন। দলে এসেছেন ওপেনার সৌম্য সরকার আবারও। সর্বশেষ দুই টি২০ ম্যাচে দারুু ব্যাট করে রানে ফিরেছেন এ তরুণ। এ সিরিজে দলীয় এক অর্জন হাতছানি দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বরে ওঠার সুযোগ দলের সামনে। সেজন্য নিউজিল্যান্ডকে যে কোন এক টেস্টে হারাতে হবে। তবে সেটা বাস্তব করে তোলা বেশ কঠিন বাংলাদেশের জন্য। প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ দল সর্বশেষ কোন টেস্ট সিরিজ খেলেছে বিদেশের মাটিতে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরেছিল। এরপর গত আড়াই বছরে মাত্র ১০ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ এবং সবগুলোই দেশের মাটিতে। এই ১০ টেস্টে অবশ্য বাংলাদেশের ফলাফলটা দারুণ সন্তোষজনক। জিম্বাবুইয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পর পাকিস্তানের কাছে ১-০ ব্যবধানে ২ টেস্টের সিরিজে হারে বাংলাদেশ। এরপর আর কোন জয় বা পরাজয় নেই। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের দুুটি সিরিজই হয়েছে ০-০ সমতায় শেষ এবং এরপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-১ সমতায় ড্র করেছে বাংলাদেশ। আর এমন ফলাফলই এখন টেস্ট দলের কাছ থেকেও দারুণ কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা তৈরি করেছে। টেস্ট সিরিজে প্রত্যাশাটা থাকলেও সেটা অমূলক হয়ে গেছে সীমিত ওভারের ফরমেটে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি। ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ও টি২০ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ দল। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও হেরে গিয়েছিল সফরকারীরা অচেনা সব ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া নিউজিল্যান্ড একাদশের কাছে। সবমিলিয়ে টানা ৭টি হার দেখেছে মাশরাফিরা যে দলটি এ ফরমেটে ভয়ঙ্কর একটি দলে পরিণত হয়েছিল। অথচ কিউইদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধই দেখা যায়নি। একেবারেই হেসে খেলে জিতে গেছে নিউজিল্যান্ড। এ কারণে ঘরের মাঠে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজগুলোতে দারুণ কিছু করলেও আসন্ন সিরিজে স্বপ্নটা ম্লানই থাকছে। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে ঘরের মাটিতে আরও দুরন্ত কিউইরা। দারুণ ফর্মে থাকা পাকিস্তান দলকে সম্প্রতিই তারা ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে সেটার প্রমাণ দিয়েছে। তাই কঠিন অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে বাংলাদেশ দলকে। সর্বশেষ ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। সবমিলিয়ে ৩ বার নিউজিল্যান্ড সফরে ৫ টেস্ট খেলে সবগুলোতেই বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে সফরকারীরা। এ কারণে এবার জেতাটাও বড় চ্যালেঞ্জের। কিন্তু এক ম্যাচে হারালেই রেটিং ৫ বেড়ে ৭০ হবে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে ৬৯ রেটিং নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ নম্বরে নেমে আসবে। তবে সিরিজ হারলেই অবস্থান পরিবর্তন হবে না।
×