ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩২০ মেট্রিক টন সার আত্মসাত মামলায় চার্জশীট দাখিল

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

৩২০ মেট্রিক টন সার আত্মসাত মামলায় চার্জশীট দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) যশোরের চাঁচড়া রায়পাড়া গুদামের ৭৬ লাখ টাকার ৩শ’ ২০ মেট্রিক টন সার আত্মসাত মামলায় চার্জশীট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কমিশনের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী সোমবার যশোর চীফ জুডিশিয়াল আদালতে এ চার্জশীট প্রদান করেছেন। চোরাইভাবে সার বিক্রি ও সমুদয় টাকা পকেটস্থ করাসহ সব অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে তদন্তে। সার আত্মসাতে ব্যবস্থাপনা বিভাগ যশোরের যুগ্ম পরিচালকের দফতরের সাবেক সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন, সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলী, নওয়াপাড়ার মাহিন ট্রেডিংয়ের মালিক আব্দুল মতিন ও টিএস ট্রেডিংয়ের রাশেদ মাহমুদ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএডিসি যশোর শহরের রায়পাড়ার গোডাউন থেকে ৩শ’ ২০ মেট্রিক টন এমওপি সার গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করা হয়। সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগার আলী ও নেপথ্যে থাকা কয়েক অফিসার যোগসাজশে এ অনিয়ম চালিয়ে যান কয়েক বছর। আর তা ধরা পড়ে ২০১৫ সালে। প্রাথমিকভবে সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর অনৈতিকতা ধরা পড়লে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজ করার চেষ্টা চলে। এরই মধ্যে গোডাউনে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে যোগ দেন রতন কুমার ম-ল। আর সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তারাও কয়েক মাস ম্যানেজ হয়ে চলেন। তবে তাদের ম্যানেজ প্রক্রিয়ার সময় ব্যাপক অসঙ্গতি ও গুদাম স্টকের সঙ্গে অফিসের খাতা-কলমে বিশাল ব্যবধান থাকায় মোটা অঙ্কের সরকারী অর্থের সার চুরির ঘাপলা ফাঁস হয়ে পড়ে। ধরা পড়ে যায় রাশিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি করা অর্ধকোটি টাকার মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার চুরি কেলেঙ্কারির ঘটনা। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত চাক্ষুস যাচাই কমিটি গুদাম ভেরিফিকেশন করেন। ওই টিম বিএডিসির গোডাউনে ৩শ’ ২০ মেট্রিক টন এমওপি সারের হদিস পাননি। ওই রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর অভিযুক্ত সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর সাময়িক বহিষ্কার আদেশ আসে বিএডিসির সার ব্যবস্থাপনা মহা-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার নির্দেশনাও আসে। ওই বছরে নির্দেশে ৭ সেপ্টেম্বর বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার ম-ল সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর বিরুদ্ধে ওই সার আত্মসাতের ঘটনায় মামলা দেন। এদিকে বিশাল টাকার সরকারী সার চুরি কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে আসে আরও তথ্য। সার গুদামের চাবি আজগর আলীর কাছে থাকে, তিনিই সারের হিসেব রাখেন। কাজেই খাতা কলমে চুরির সব দোষ তার। তবে নেপথ্যে থাকা আসল সার চোর ধরার ব্যাপারে আরও একটি তদন্ত কমিটি করা দাবি ওঠে ওই সময়। জানা যায়, সার কেলেঙ্কারিতে ওই সময় দয়িত্বে থাকা উপ সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন সরাসরি জড়িত। সাবেক উপ সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন ও সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলী ২০১৩ সালে খুলনা থেকে আসা সার নওয়াপাড়ার দু’ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। ন’পাড়ার মাহিন ট্রেডিংয়ের আব্দুল মতিন ও টিএস টেডিংয়ের রাশেদ মাহমুদ ওই সার কেনেন। এদিকে ওই সার আত্মসাতের ঘটনায় বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার ম-ল সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তের জন্য দেয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে। কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী এক বছরেরও বেশি সময় তদন্ত করে চার্জশীট প্রদান করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী গাজী জানিয়েছেন, তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের চেষ্টা করেছেন। আসামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কথা বলেছেন বিএডিসির কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গেও। গুদামের স্টক নিয়েও খোঁজ খবর নিয়েছেন। সার আত্মসাতে ব্যবস্থাপনা বিভাগ যশোরের যুগ্ম পরিচালকের দফতরের সাবেক সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন, সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা মামলার এক মাত্র আসামি আজগর আলী, ন’পাড়ার মাহিন ট্রেডিংয়ের মালিক আব্দুল মতিন ও টিএসট্রেডিংয়ের রাশেদ মাহমুদ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
×