ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজে শিল্পী না হয়েও দেশের চারুশিল্পের বিকাশে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। সাহিত্যের প্রতি ভালবাসায় লিখেছেন গল্প ও উপন্যাস। আধুনিক কবিতা রচনায়ও রেখেছেন সৃজনশীলতার স্বাক্ষর। শিক্ষাবিদ হিসেবেও তিনি আজও বিশিষ্টজনদের পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। এভাবেই বহুমাত্রিক পরিচয়কে ধারণ করেছেন অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। নানা মাধ্যমে কাজ করে পেয়েছেন অজস্র মানুষের ভালবাসা। সোমবার ছিল এই খ্যাতিমান লেখক, শিল্প সমালোচক ও শিক্ষাবিদের ৮২তম জন্মদিন ও ৮১তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকেলে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বরেণ্য এ ব্যক্তিত্বকে জানানো হয় অপার ভালবাসা। ফুলেল শুভেচ্ছার পাশাপাশি তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে কথা বলেছেন শুভাকাক্সক্ষীরা। সবার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেছেন তাঁর কবিতা, গল্প-উপন্যাসহ লেখালেখির ক্ষেত্রে মূল প্রেরণার কথা। সাধারণ মানুষের প্রতি আপন অনুভূতি ও ভাবনার কথা। সবার ভালবাসায় সিক্ত বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আজ এ আয়োজনে এসেছি একটু পেছনে ফিরে তাকানোর জন্য। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে আমরা যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হলাম তারা সবাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। মনে রাখতে হবে, আমরা তেভাগা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছি। তারপরই শুরু হয়েছে ভাষার আন্দোলন। আমরা ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম, যে সাহিত্যচর্চা আমরা করছি তার জন্য বাংলার কাছে যেতে হবে। সেই সূত্রে আমরা পাাকিস্তানের বিরোধিতা শুরু করলাম। ওই সময় আমাদের লেখকদের সঙ্গে পরিচয় হয় শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা ভাসানীর। এভাবেই লেখক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি হলো। আমাদের সবার ভেতরে একটি বিষয় কাজ করেছে যে, বিদ্রোহের বীজ বুনে দিতে হবে স্বাধীনতার জন্য। আর ওই কাজটি করবেন রাজনীতিবিদ ও লেখকরা। এভাবেই পরবর্তীতে আমরা এগিয়ে গেলাম মুক্তিযুদ্ধের দিকে। সে কারণেই মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ কোন ব্যাপার না। পাকিস্তানীরা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে জামায়াত। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ের প্রসঙ্গে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, পাকিস্তানের উত্তরসূরি হিসেবে স্বাধীনতার পরও জামায়াত কাজ করে গেছে। পরবর্তীতে দেখলাম বিএনপির মধ্যেও একই সুর। খালেদা জিয়া ও জামায়াত এক সময় আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল আমরা সেই বেগবান স্রোত, যাদের কেনভাবেই সরিয়ে দেয়া যায় না। চাইলেও রাজনীতি ও সংস্কৃতি থেকে আমাদের সরানো যায় না। আজ তো তারাই আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আজ আমাকে যে সম্মাননা জানানো হয়েছে তা আমাকে নয়, পক্ষান্তরে এ দেশের মানুষকেই জানানো হয়েছে। আমরা গণতন্ত্র চাই কিন্তু ষড়যন্ত্রের গণতন্ত্র চাই না। আনন্দানুষ্ঠানের শুরুতেই বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় জাতীয় কবিতা পরিষদ, ইতিহাস সম্মিলনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, ফারমার্স ব্যাংক, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকা আর্ট কলেজ, সুবর্ণ, চারুকলা শিক্ষক পরিষদ, বাংলাদেশ চর্চাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা জানান ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, কবি নাসির আহমেদ প্রমুখ। লেখকের ছোট ভাই ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের চরিত্রের একটি বড় দিক হচ্ছে তাকে কখনও কেনকিছুতেই ম্রিয়মাণ হতে দেখিনি। তিনি শত বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়েও একটি আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছেন। শিল্পী হাশেম খান বলেন, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে তিনি সারাজীবন কাজ করে চলেছেন। নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের জনগণের জন্য তার সমগ্র কাজ। শিল্পীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিষ্ঠাবান লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। শিল্প সমালোচনায় মাধ্যমে তিনি শিল্পীদের পূর্ণাঙ্গ রূপে তুলে ধরেছেন। রফিকুন নবী বলেন, শিক্ষাজীবনেই বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের নামের সঙ্গে আমার পরিচয়। কোনো পত্রিকায় তার লেখা চিত্র সমালোচনা প্রকাশ পেলেই পড়ে দেখতাম, তাতে নিজের নাম আছে কি-না। নাম থাকলে আনন্দিত হতাম। আজ কিছু হয়েছি, তার প্রথম উৎসাহদাতা কিন্তু তিনিই। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, এ দেশে শিক্ষক, লেখক ও গবেষকদের মধ্যে কেউ যদি প-িত হন সেটা হলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। আমাদের জ্ঞানের চর্চা কম, কাগজে ডিগ্রী সমতুল্য বলে আমরা তার লেখা বুঝে উঠতে পারি না। অথচ লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি অনেক বেশি পরিশীলিত ও তীক্ষè। এ কারণে তাঁকে লেখকদের লেখক বলা যায়। কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর হচ্ছেন একুশের সন্তান। ভাষা আন্দোলন থেকে মূলত তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তাঁর যে সম্মান পাওয়ার ছিল সেটা তাঁকে দেয়া হয়নি। বরং তাঁর চেয়ে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিও নানাভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়ে তিনি সব সময়ই নির্বিকার ছিলেন। তার কাছে মানুষের ভালবাসাটাই বড়। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, তিনি দার্শনিকের মতো নিজের বোধ দিয়ে কথা বলেন। ফলে তিনি যা বলেন সব সময়ই নতুন বলেন। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি শিক্ষকেরও শিক্ষক। চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ বলেন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের বই পড়ে আমি চিত্র সমালোচনা বুঝতে চেষ্টা করেছি। তাঁর লেখার ভাষা কঠিন। এ কারণে তার লেখা বুঝতে হলে পাঠকের পড়াশোনা থাকতে হবে। তিনি লেখকদের লেখক। সভাপতির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমরা সব সময় আমাদের চিন্তা-চেতনায় রাখতে চাই আমাদের শিল্প-সাহিত্যের জগতে যারা লড়াই করেছেন তাদের। ভবিষ্যত প্রজন্মকে আলোকিত করতে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মতো মানুষদের কর্মকে আমরা ধরে রাখতে চাই। নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্মবার্ষিকী উদযাপন ॥ শিল্পীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। সোমবার এই নৃত্যাচার্য প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠন বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাফার আন্তঃশাখা সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও বাফার প্রয়াত শিক্ষকদের নামে পদক প্রদান করা হয়। গত পহেলা জানুয়ারি ছিল তাঁর জন্মদিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহাহিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাফার সভাপতি হাসানুর রহমান বাচ্চু। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাফার সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান পলাশ। বক্তব্য রাখেন- ঢালী মোঃ দেলোয়ার, ফজলুর রহমান, দিলীপ চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনায় বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্যশিল্পী ও লেখক বুলবুল চৌধুরীর বাফা প্রতিষ্ঠা আরেকটি অনন্য অবদান। সংগঠনটি ষাটের দশকে বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। বুলবুল একাডেমি আগামীতেও শিশু-কিশোরদের মাঝে সংস্কৃতির আলো জ্বালিয়ে যাবে। বক্তারা সংগঠনটির সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। পরে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চারুকলার ৫০তম ব্যাচের প্রদর্শনী ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রদর্শনী শুরু হলো সোমবার। এতে ২৩ জন শিল্পীর ৩০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। সোমবার বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারযের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অনুষদের সাবেক ডিন শিল্পী মতলুব আলী ও অরগ্যান প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান প্রিন্স। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন- সুনীতি কুমার, পীযূষ কান্তি সরকার, নাজিয়া মাসুদ খান, মেহেদী হাসান, আসমিতা আলম শাম্মী, জলি, নাজমুন কাকলি, কান্তি দেব অধিকারী, দেওয়ান আতিকুর রহমান, প্রকাশ বণিক, তাহমিনা হাফিজ লিসা, প্রভাতী ঝর্ণা, সৌল হাচ্ছা, মেহজাবিন রহিম মৈত্রী, আলী সাগর সালাহউদ্দিন, শামীম আকন্দ, রুবাইয়াত শায়লা, শারমিন ফাতেমা, আনারুল হক আনার, চিন্ময়ী শিকদার, ইকবাল হায়দার রিপন, সাব্বির আহমেদ ও মোর্শেদ। প্রদর্শনী চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
×