ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

দেশ এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে সচেতন নাগরিক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলা-২০১৭’র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশকে এগিয়ে নিতে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আছেন সর্বস্তরে। সংসদ সদস্য থেকে একেবারে ইউনিয়ন পরিষদ ও ওয়ার্ড মেম্বাররা প্রত্যেকেই, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণ রয়েছেন, আমাদের প্রশাসনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্থার সদস্যরা- সকলেরই একটি সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে পরে এই বাংলাদেশকে আমরা অতি দ্রুত দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী আয়োজিত এই উন্নয়ন মেলা দেশের ৬৪টি জেলা এবং ৪৯০টি উপজেলায় একযোগে উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে মেলার উদ্বোধন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সকল জেলা ও উপজেলায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা মেলার উদ্বোধন করেন। এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশের চলমান উন্নয়ন সাফল্যকে জনগণের সামনে তুলে ধরে তাদের সরকারের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা। পাশাপাশি সরকারের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সরকারের সাফল্য প্রচার এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি যুক্ত ছিল টাঙ্গাইল, বরিশাল, খুলনা ও গোপালগঞ্জ জেলা। মেলার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এসব জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবার্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক আব্দুল হালিম অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মেলার আয়োজন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অন্যান্যের মধ্যেÑ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ আব্দুল মালেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়। উন্নয়ন মেলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারী দফতর, সংস্থা, ব্যাংক ও বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা মেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলায় প্রতিদিন সভা, সেমিনার, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন, ছবি ও পোস্টার প্রদর্শন এবং দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। মেলায় একটি বাড়ি একটি খামার, কমিউনিটি ক্লিনিক, নারীর ক্ষমতায়ন, সবার জন্য বাসস্থান, শিক্ষা সহায়তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবেশ সুরক্ষা, বিনিয়োগ বিকাশ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, ঘরে ঘরে বিদ্যুতসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সরকারী কর্মকর্তাগণের পরস্পরের মতবিনিময়ের মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনাসমূহ চিহ্নিতকরণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নেও এই মেলা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশাকরি এই মেলাটা যেন সফল হয়। কারণ বাংলাদেশকে আমরা খুব দ্রুত দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনা থেকে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে তাদের একদিনের বেতন অনুদান হিসেবে দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করে তারা খুলনাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। তিনি বলেন, এক সময় যে ভিক্ষা করত আজকে সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনেকরি সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাহী কর্মকর্তা যদি এভাবে উদ্যোগ নেন তাহলে প্রতিটি জেলা-উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত হতে পারে এবং প্রতিটি মানুষ একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন। তার ভেতরেও একটি আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ঠিক এমনিভাবে বরিশালেও এটা শুরু হয়েছিল, টাঙ্গাইলে যেটি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপ’ সৃষ্টি করে মরে যাওয়া লৌহজং নদীতে পানির প্রবাহ সৃষ্টির উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। তারা একদিকে যেমন নদীকে দখলমুক্ত করেন অন্যদিকে নদী পুনঃখনন করে নদীতে জলাধারা আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এ ধরনের উদ্যোগ দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করে খুলনায় পুনর্বাসিক ভিক্ষুক আম্বিয়া বেগমের সঙ্গে ভিপিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। আম্বিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি সেলাই মেশিন এবং নগদ কিছু অর্থ সাহায্য পাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজে আয় করে চলছেন শুনে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
×