ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরার লাইফ স্কুল ছিল জঙ্গী সংগ্রহের কেন্দ্র

রাজধানীতে র‌্যাবের অভিযানে নব্য জেএমবির আরও ১০ জঙ্গী আটক

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

রাজধানীতে র‌্যাবের অভিযানে নব্য জেএমবির আরও ১০ জঙ্গী আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে র‌্যাবের ঝটিকা অভিযানে ধরা পড়েছে নব্য জেএমবির আরও ১০ জঙ্গী। রবিবার রাতে উত্তরা ও কলাবাগান এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তারা সবাই নব্য জেএমবি তামিম-সারওয়ার গ্রুপের সদস্য। উত্তরার ‘লাইফ স্কুল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে তারা জঙ্গী সংগ্রহের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। আটককৃতরা হলেন আবু সাদাত মোঃ সুলতান আল রাজি ওরফে লিটন (৪১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), মোঃ জিয়াউর রহমান (৩১), মোঃ কৌশিক আদনান সুবহান (৩৭), মিজানুর রহমান (৪৩), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭), শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬), শরিফুল ইসলাম (৪৬)। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার সোমবার আবারও জঙ্গীদের বিক্ষিপ্ত হামলা চালানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। সোমবার বিকেলে কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেশন) কর্নেল মোঃ আনোয়ার লতিফ খান বলেন, যাদের জঙ্গী মতবাদে আকৃষ্ট করা যাবে বলে মনে হতো কেবল তাদের সন্তানকেই লাইফ স্কুলে ভর্তি করা হতো। স্কুলের সঙ্গে আগে একটি নামাজের ঘর ছিল, পরে মসজিদে পরিণত করা হয়। সেখানেই অভিভাবকদের মোটিভেট করা হতো। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লাইফ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তারা প্লে গ্রুপ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় কেম্ব্রিজ ও ইসলামিক কারিকুলাম অনুযায়ী। ওই স্কুলের সাবেক দুই শিক্ষক ফয়সাল হক ও মাঈনুল ইসলাম এখন নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যার জানায়, উত্তরা ও কলাবাগানে অভিযান চালিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক করা হয়েছে। উত্তরার ওই লাইফ স্কুলে বসেই তারা জঙ্গী কর্মকা- পরিচালনা করতেন। ওই স্কুলে হজের প্রশিক্ষণের আড়ালেও নব্য জেএমবির তাত্ত্বিক নেতৃবৃন্দ জঙ্গী কর্মকা- পরিচালনা করতেন। এদের সঙ্গে বেশ কজন নারী জঙ্গীরও যোগাযোগ ছিল। তাদের একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। র‌্যাব জানায়, গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের সময় পাঁচতলা থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। তিনি নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা। সারোয়ার জাহানই শায়খ আবু ইব্রাহীম আল হানিফ নামে নব্য জেএমবি গঠন করে আমিরের দায়িত্ব নেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। অবশ্য পুলিশের দাবি, সারোয়ার ছিলেন জেএমবির তৃতীয় সারির নেতা। সারোয়ার নিহত হওয়ার আগে ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় এক জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে নিহত হন তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন। তামিমকেই নব্য জেএমবির মূল ব্যক্তি বলে আসছে পুলিশ। জেএমবির এই গ্রুপকেই গুলশান ও শোলাকিয়াসহ সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলাগুলোর অধিকাংশ ঘটনায় দায়ী বলে জানিয়েছে র‌্যাব। বিক্ষিপ্ত হামলার আশঙ্কা ॥ এদিকে দেশে বড় ধরনের হামলার শক্তি জঙ্গীদের নেই বলে জোর দিয়ে বললেও বিক্ষিপ্ত নাশকতার শঙ্কা উড়িয়ে দেননি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। সোমবার রাজধানীতে ডিএমপি কার্যালয়ে জঙ্গী হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের অনুদান দেয়ার এক অনুষ্ঠানে তিনি এই শঙ্কা প্রকাশ করেন। আছাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন-জঙ্গীদের বড় ধরনের নাশকতা করার শক্তি আছে বলে বিশ্বাস করি না। বিক্ষিপ্তভাবে এখন দুই-একটা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অন্ধগোষ্ঠী, বিপথগামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোন মানবতা নেই, ধর্ম নেই, তারা মানবতার শত্রু। সুতরাং যারা মসজিদে মানুষ মারে, গির্জায় মানুষ মারে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, এই পাপিষ্ঠরা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটাবে না- সেই নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। তবে সে ব্যাপারে পুলিশ অত্যন্ত সতর্ক আছে বলে আশ্বস্ত করেন ডিএমপি কমিশনার। গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-আমরা পর্যাপ্ত আলামত ইতোমধ্যে জব্দ করেছি। ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিকল্পনাকারী ও তাদের সহযোগীরা কোন্ বাসায় ছিল, কোথায় পরিকল্পনা করেছে, কার সঙ্গে করেছে সেগুলোও আমাদের অনুসন্ধানে আছে। পুরো গ্যাংকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সমন্বিত করে সময়মতো ওই ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযানে নিহত গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড নুুরল ইসলাম মারজান ও সাদ্দামের সঙ্গে থাকা পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দারা কাজ করে যাচ্ছে। সোমবারের অনুষ্ঠানে ‘সাইফ পাওয়ার টেক’ নামে একটি ব্যব্সায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হলি আর্টিজান হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান তুলে দেয়া হয়। নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণ করে তিনি বলেন-সাহসিকতার সঙ্গে তারা ওই দিন জঙ্গীদের মোকাবেলা করেছে। তারা অনুপ্রেরণার উৎস, তাদের অনুপ্রেরণা নিয়েই পুলিশ জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে।
×