ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হোয়াইটওয়াশের লজ্জা আবারও

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

হোয়াইটওয়াশের লজ্জা আবারও

মিথুন আশরাফ ॥ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর টি২০ সিরিজেও টালমাটাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকেই মিলেছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টি২০ সিরিজেও একই দশা হয়েছে। রবিবার তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে ২৭ রানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মাশরাফিবাহিনী। নিউজিল্যান্ডের করা ১৯৪ রানের জবাব দিতে নেমে ১৬৭ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তৃতীয় টি২০’র আগে প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটে ও দ্বিতীয় টি২০তে ৪৭ রানে হেরে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টি২০ সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। রবিবার হোয়াইটওয়াশই হলো নিয়তি। শুধু কি হোয়াইটওয়াশ হলো, টেস্ট সিরিজের আগে বড় ধরনের ধাক্কাও খেল দল। মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরিতে পড়লেন। যদিও তিনি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নেই। কিন্তু আছেন ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। এ দুইজনই ইনজুরিতে পড়ে গেলেন। দুইজনই ফিল্ডিং করতে গিয়ে ব্যথা পেলেন। তামিম ব্যথা পেলেন বাম হাতের আঙ্গুলে। ইমরুল ব্যথা পেলেন বাম পায়ের হাঁটুতে। দুইজনের অবস্থায়ই পর্যবেক্ষণ করা হবে ৪৮ ঘণ্টা পর। দল যখন হারে, তখন সব বিপদ ঘাড়ে চেপে বসে। এ বিপদও সেই ঘাড়ে চেপে বসার মতোই। ক্রিকেটারদের মুখে একটি কথা খুব জোরেশোরেই বারবার শোনা গেছে। ‘দলগত নৈপুণ্য দরকার’। তৃতীয় টি২০’র আগে তামিম বলেছিলেন, ‘একা নয়, পুরো দলকেই ভাল খেলতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘আমি একা ভাল খেললে কি আর হবে? আমরা সবাই ভাল খেললেই দল জেতে। আমি চাই পুরো দল ভাল খেলুক। তাহলেই দেখবেন সাফল্য ধরা দেবে।’ দ্বিতীয় টি২০’র আগে সাব্বির রহমান রুম্মন বলেছিলেন, ‘আমরা দল হিসেবে পারফর্ম করতে চাই।’ সাব্বিরের আগে মাশরাফি, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও একই কথা বলেছিলেন। মাশরাফি বলেছিলেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলে তা যে কোনভাবে কাজে লাগানোর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না। ব্যক্তিগত কিছু পারফর্মেন্স হয়েছে। কিন্তু যেটা হলে দলের জন্য কার্যকর হতে পারত বা ওদের দলকে ভোগাতে পারত, তেমন পারফর্মেন্স হয়নি। যেটা হয়ত আমরা আমাদের ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশাকরি।’ মাহমুদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন দল হিসেবে পারফর্ম করা। আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি টিম পারফর্মেন্স দেখাতে পারি, দল হিসেবে খেলতে পারি তাহলে সাফল্য আসবে।’ সাকিব বলেছিলেন, ‘আমাদেরও সামর্থ্য আছে ভাল খেলার এবং জেতার। যেহেতু সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, তাই ছন্দ ধরে রাখা জরুরী। কোন কারণে ছন্দ হারিয়ে বসলে আর রক্ষা নেই। সব সম্ভাবনা ও সুযোগ হাতছাড়া হবে। সবাই মিলে ভাল খেলেই জিততে হবে। জিততে হলে আমাদের সবাইকে মিলে ভাল খেলতে হবে।’ সেই ভালর দেখা, দলগত নৈপুণ্যের দেখা তৃতীয় টি২০ ম্যাচেও মিলল না। আর তাই হারও হলো। অবশ্য এরআগে যে তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ, তৃতীয় টি২০তে এসে ব্যাটিংয়ে একটু উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছে বলা যায়। হারের ব্যবধানও তাই একটু কম হয়েছে। ম্যাচটি বলতে গেলে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেই হেরেছে বাংলাদেশ। যেটি টেস্ট সিরিজের আগে প্রেরণাদায়কও বলা যায়। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড চার উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯৪ রান করে। জবাবে ছয় উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৬৭ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দলীয় পঞ্চম ওভারে দারুণ খেলতে থাকা তামিম ইকবাল বিদায় নেন। ১৫ বলে তিন চার এক ছয়ে ২৪ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের বলে আউট হন তিনি। অবশ্য একই ওভারে বাংলাদেশের দলীয় অর্ধশতক আসে। নবম ওভারে ফর্মে ফেরা সৌম্য সরকার উঁচু ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ইস সোধির বলে আউট হওয়ার আগে ২৮ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৪২ রান করেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। সৌম্যের এ স্কোরটিই শেষ পর্যন্ত ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে থাকে। ১৩ ওভারের প্রথম বলে দলীয় শতক আসে বাংলাদেশের। তবে আগের ওভারে কেন উইলিয়ামসনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির রহমান। তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। ১৬তম ওভারে ইস সোধির দ্বিতীয় শিকার হন মাহমুদুল্লাহ (১৮)। ১২ রান করে মিচেল স্ট্যান্টনারের বলে আউট হন মোসাদ্দেক হোসেন (১২)। আর ২০তম ওভারে ৩৪ বলে চারটি চারে ৪১ রান করা সাকিব আউট হয়ে যান। বোল্টের বলে এ্যান্ডারসনের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। এরআগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৯৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন কোরে এ্যান্ডারসন। বাংলাদেশের হয়ে তিন উইকেট দখল করেন রুবেল হোসেন। দলীয় পঞ্চম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন বাংলাদেশী পেসার রুবেল। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পান ডানহাতি এ পেসার। ওপেনার জেমস নিশামকে (১৫) এলবিডাব্লিউ করেন। ওভারের শেষ বলে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কলিন মুনরোকে (০) সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করে প্যাভিলিয়নে পাঠান রুবেল। সপ্তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। নতুন ব্যাটসম্যান টম ব্রুসকে (৫) ইমরুলের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ১৪তম ওভালে দলীয় শতক আসে নিউজিল্যান্ডের। একই ওভারে টি২০ ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কেন উইলিয়ামসন। পরে ৫৭ বলে ছয় চার ও এক ছয়ে ৬০ রান করে রুবেলের বলে বোল্ড হন কিউই অধিনায়ক। ম্যাচে বাংলাদেশ পরে আর কোন সাফল্য পায়নি। উল্টো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিকরা। ঝড়োগতির ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোরি এ্যান্ডারসন। শেষে মাত্র ৪১ বলে দুটি চার ও ১০টি ছক্কায় ৯৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন এ বাঁহাতি। অপরদিকে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। টাইগার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন রুবেল। চার ওভার বল করে ৩১ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট তুলে নেন তিনি। বাকি একটি উইকেট পান মোসাদ্দেক। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসেই তামিম, ইমরুল, মাশরাফি ব্যথা পান। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হতেই বোঝা যায়, জয় অসম্ভব। তামিম ঠিকমত ব্যাটিং করতে পারবেন না। ইমরুলতো ব্যাটিংই করতে পারলেন না। মাশরাফিও ব্যাটিং করতে পারতেন না। তাহলে কিভাবে জেতার আশা করা যায়? শেষ পর্যন্ত হারই হলো। টি২০ সিরিজেও টালমাটাল বাংলাদেশ দলকেই মিলল। টি২০ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
×