ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনালে আসলে কী হচ্ছে, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনালে আসলে কী হচ্ছে, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী কর্মকা-ে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ার উদ্বেগের মধ্যেই এবার মৌলবাদীদের খপ্পরে পড়েছে রাজধানীর নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ‘কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল’। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় যেখানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার কথা বলা হচ্ছে, যেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ জাতীয় দিবস পালনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কর্তৃপক্ষ উগ্রবাদকে মদদ দিচ্ছে। তথ্য-প্রমাণসহ নানা অভিযোগ এনে নিজের সন্তান ও প্রতিষ্ঠান রক্ষায় থানায় জিডি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের সহায়তা কামনা করেন অভিভাবকরা। এদিকে এসব বিষয়ে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ এম এম খায়রুল বাশার বলেছেন, বিজয় দিবসের দিন স্কুল বন্ধ ছিল, তাই জাতীয় দিবস পালন করা হয়নি। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। এছাড়া স্কুলের সিলেবাসেও পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে সরকারী দলের স্থানীয় কয়েক নেতা ও কয়েক অভিভাবক মিলে আমাদের স্কুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারাই নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। পত্রিকায় স্কুলের নামে বিজ্ঞাপন দেয়া হলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করেন। পরিচালনা পর্ষদ ও অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রগতিশীল দক্ষ শিক্ষকদের বহিষ্কার, উগ্রবাদী পাঠ্যক্রম পড়তে বাধ্য করা, ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করে টাকা আদায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তার আস্থাভাজন এক শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের লাঞ্ছিত করা, পরিচালনা পর্ষদে জামায়াতপন্থী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিসহ অন্তত ১৫টি অভিযোগ এনেছেন অভিভাবকরা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরে তারা মৌলবাদী-দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগনামায় অভিভাকরা বলেছেন, তাদের আর্থিক ক্ষতি হলেও আগামী সেশন থেকে সন্তানদের এখানে আর পড়াবেন না, অনত্র ভর্তি করাবেন। স্কুলটির অস্থায়ী প্রিন্সিপাল এ এম এম খায়রুল বাশারের অপসারণ চেয়ে কয়েকদিন আগেও ৩০০ অভিভাবকের স্বাক্ষরসহ একটি দরখাস্ত স্কুলের পরিচালক পর্ষদের কাছে দেয়া হয়। থানায় জিডিও করা হয়েছে। তবে কিছু পরিচালকের যোগসাজশে অভিযুক্ত অস্থায়ী প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং সরকারবিরোধী একটি বিশেষ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিতে চাচ্ছে। এর ফলে মালিকদের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। জানা গেছে, ২০১৫ সালের শুরুতেও এই স্কুলের চারটি ক্যাম্পাসে এক হাজারের ওপর শিক্ষার্থী থাকলেও দুই বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থী সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০০ তে। এমনকি স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এক ব্যবসায়ীকে। সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকার পরও পালন করা হয় না জাতীয় দিবস। স্কুলের সিলেবাস থেকে ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম বাদ দেয়া হয়েছে। স্কুলটির অভিভাবকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠার পর হতে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস পালন হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে স্কুলের পক্ষ থেকে কোন জাতীয় দিবস পালন করা হয়নি। এমনকি উক্ত দিবসগুলোতে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ এম এম খায়রুল বাশার স্কুল ছুটি দিয়ে দেন এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে নিষেধ করেন।
×