নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ৮ জানুয়ারি ॥ সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ৬ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রবিবার গাইবান্ধার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সুন্দরগঞ্জ) বিচারক মইনুল হাসান ইউসুফ শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তারা হলেন সুন্দরগঞ্জের রামভদ্র কদমতলা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হাজী মোঃ ফরিদ মিয়া (৭৫), নিচপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে সামিউল ইসলাম (৩২), খামার পাঁচগাছী গ্রামের একরামুল হোসেনের ছেলে হাদিসুর রহমান (৩০), উত্তর হাতিবান্দা গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান (৩২), রামভদ্র খানাবাড়ী গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে শিবিরকর্মী হজরত আলী (৪৪) এবং পূর্ব শিবরাম গ্রামের সাবু খন্দকারের ছেলে নবিনুর খন্দকার (৪৫)।
এর আগে, লিটন হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার বিকেলে ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবু মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান। এমপি লিটনের আইনজীবী মোঃ আবদুল হালিম এ তথ্য জানান।
এদিকে লিটন হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রবিবার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক জাতীয় পার্টি ও বর্তমান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আহসান হাবীব মাসুদ ও উপজেলা (পূর্ব) জামায়াতের আমীর শ্রীপুর ইউনিয়নের চেংমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ম-লকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আহসান হাবীব মাসুদ ইতোপূর্বে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগদান করেন বলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দহবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুল জানান। তবে তিনি সুন্দরগঞ্জের এমপি লিটন বিরোধী আওয়ামী লীগ দলের একজন সক্রিয় নেতা। তদুপরি দীর্ঘদিন থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে একজন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতেও দেখা গেছে। পুলিশ ধারণা করছে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে। এজন্য আদালতে হাজির করে তার রিমান্ডের আবেদনও করা হবে বলে জানা গেছে।
১০ জানুয়ারির মধ্যে খুনীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম ॥ এমপি লিটন হত্যার প্রতিবাদে রবিবার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক জুড়ে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। বামনডাঙ্গা ফুটবল ও ক্রিকেট ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীটি বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। এই এলাকার ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেন। এসময় বক্তব্য রাখেন বামনডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ইমান হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সমেস উদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহীদ, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হবি, কামরুল হাসান কাজল, মুশফিকুল হাসান পিয়াল, মাহবুবার রহমান খান, ফয়সাল শাকিদার আরিফ, আশিকুর রহমান শাওন, আরিফুল ইসলাম রাশেদ প্রমুখ।
সমাবেশে বিক্ষুব্ধ বক্তারা ১০ জানুয়ারির মধ্যে এমপি লিটন হত্যার খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। অন্যথায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে এবং প্রতিটি ঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচী পালিত হবে।
লিটন হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘শহীদ লিটন মঞ্চ’ ॥ সুন্দরগঞ্জে এমপি লিটনের এই হত্যাকা- স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষকে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। এক সপ্তাহের অধিককাল অতিক্রান্ত হলেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উদঘাটন বা হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় তরুণ সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। সেজন্য লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করতে সর্বস্তরের মানুষের সমন্বয়ে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রবিবার প্রতিষ্ঠিত হলো শহীদ লিটন মঞ্চ। এই মঞ্চেই প্রতিদিন প্রতিবাদ সমাবেশসহ লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হবে।
