ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রামপালে কয়লা আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

রামপালে কয়লা আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা  ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া  থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা আসবে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। রবিবার এক বৈঠকে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা আমদানির বিষয়ে ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। গত বছরের শেষদিকে ভারতের জ্বালানি সচিব অনীল স্বরূপ বাংলাদেশে কয়লা বিক্রি করার বিষয়ে ভারতের প্রচেষ্টার কথা দিল্লীতে সংবাদমাধ্যমকে জানান। এরপর থেকে দেশের পরিবেশবাদীরা বিষয়টির সমালোচনা করে আসছিলেন। বৈঠকে ওই এলাকায় বিপুল শিল্পায়ন হলে সুন্দরবনের ওপর কী প্রভাব পড়বে তা নিরূপণের জন্য সমীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাপমাল বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে বাগেরহাটের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বিপুল শিল্পায়ন হবে। বাগেরহাটের মংলায় একটি ইপিজেড রয়েছে। কিন্তু শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সংস্থান না থাকায় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে খুলনার শিল্পায়নও বিদ্যুতের জন্য বিঘিœত হচ্ছে। বৈঠকে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রামপাল প্রকল্প সামগ্রিকভাবে সুন্দরবনের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী কী প্রভাব ফেলবে তা নির্ণয়ের জন্য দ্রুত সমীক্ষা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বৈঠকে বলেন, পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলায় সকল বিষয় মাথায় রেখে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। রামপালে যে বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে সে বিষয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের ভালভাবে জানা প্রয়োজন। স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে কেউ কিছু জানতে চাইলে বলা যাবে না। বৈঠকে উদ্যোক্তা কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। এতদিন বিদ্যুত কেন্দ্রটির কয়লা আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল না। এতে বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ভারতের কয়লা ব্যবহার করা হবে বলে জোর প্রচারণা ছিল। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জ্বালানি সচিব বলেন, তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছে। ভারতে কয়লার চাহিদা বেশ পড়ে যাওয়া এবং প্রায় আট কোটি টন কয়লা মজুদ হওয়ার মধ্যে তা বাংলাদেশে রফতানির এ উদ্যোগ বলে জানানো হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। রবিবারের বৈঠকে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, কয়লা আমদানির জন্য তারা তিনটি দেশকে নির্ধারণ করেছে। এক উপস্থাপনায় কয়লার মানের বিষয়ে বলা হয়, কয়লার গ্রস ক্যালরিফিক ভ্যালু (জিসিভি) হবে ৫২০০ থেকে ৬৩০০ কেসিএল। কয়লায় ৪ থেকে ১৮ ভাগ এ্যাশ (ছাই), আর্দ্রতা ৭ থেকে ২৪ ভাগ এবং সালফার দশমিক ৫ থকে দশমিক ৯ ভাগ। উপস্থাপনায় কয়লা আমদানির সম্ভাব্য রুট তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, আকরাম পয়েন্টে বড় জাহাজে কয়লা আসবে। এরপর প্রতিদিন একটি বা দুটি ঢাকনাযুক্ত জাহাজে করে মংলা বন্দরের হারবারিয়া পয়েন্ট দিয়ে কেন্দ্রে কয়লা আনা হবে। বৈঠকে বিদ্যুত বিভাগের বিভিন্ন দফতর এবং সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে রামপাল প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জল কান্তি ভট্টাচার্য্য। উপস্থাপনায় বিদ্যুত কেন্দ্রটির উপকারিতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় নেয়া কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। বৈঠকে বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. কায়কাউস আহমদ বলেন, বিভ্রান্তি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তথ্য জানা থাকলে বিভ্রান্তি কম হবে। সবাইকে রামপাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে জানানো হয়, বিদ্যুত উৎপাদনের পর ছাইরে শতকরা ৯৯ ভাগই ধরা হবে। এ ছাই উচ্চমূল্যে বিক্রি হবে। কোম্পানিটি যে বাজার জরিপ করেছে তাতে স্থানীয় শিল্পে বিপুল পরিমাণ ছাইয়ের চাহিদা রয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি বাতাসে যে পরিমাণ সক্সস নক্সস এবং অন্যান্য উপাদান ছাড়বে তা পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে কম হবে। সব সময় এসব বিষয় অনলাইনে মনিটর করবে পরিবেশ অধিদফতর। সাধারণ মানুষও চাইলে সব সময় এসব তথ্য দেখতে পারবেন। রামপাল প্রকল্প হলে সুন্দবরবন ধ্বংস হবে বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা সত্য নয়। এ ধরনের কোন আশঙ্কা নেই বলে বৈঠকে জানানো হয়।
×