ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছর ৮ লক্ষাধিক কর্মীকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

এ বছর ৮ লক্ষাধিক কর্মীকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব  হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৭ সালে ৮ লক্ষাধিক কর্মী বিদেশে প্রেরণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। একই সঙ্গে ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে আরও বেশি সংখ্যক দক্ষ কর্মী বিদেশে প্রেরণের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। রবিবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য অর্জন ও কার্যক্রম সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করাই মন্ত্রণালয়ের কাজ। ২০১৬ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বমোট ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বর্তমানে ১৬২টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। নতুন এই বছরে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস খাত ছাড়াও সম্ভাবনাময় খাতে দক্ষ মহিলা কর্মী প্রেরণের উদ্যোগের কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৩৬.৩১ শতাংশ বেশি কর্মী বিদেশে গমন করেছেন। ২০১৬ সালে ওমানে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী গমন করেছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৭ জন এবং সৌদি আরবে গমন করেছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৩ জন। গত বছর কুমিল্লা জেলা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৬ হাজার ৩৫২ জন কর্মী বিদেশে গমন করেছেন। আর হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে ৪৫ হাজার ৭৮০ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। রেমিটেন্স নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে ২ হাজার ৯৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারপরই এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২ হাজার ৫৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রচলিত শ্রম বাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের কথাও বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চলছে। বৈধ পথে কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়াতে অবৈধ পথে কর্মী যাওয়া এখন বন্ধ বলেও জানান তিনি। দক্ষ কর্মী তৈরি ও প্রেরণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে ৬টি আইএমটি ও ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ মোট ৭০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৪৯ জন কর্মীকে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান লাভের উদ্দেশ্যে ৪৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৮১৬ জন মহিলা কর্মী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ১৯.৩৭ শতাংশ বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে ৪০টি উপজেলায় ৪০টি টিটিসি স্থাপনের কাজ চলছে এবং আরও ৫০টি উপজেলায় ৫০টি টিটিসি স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৬৩৮ জন কর্মী প্রফেশনাল, ৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৫১ জন দক্ষ, ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৬ জন আধা-দক্ষ এবং ৩ লাখ ১৪ হাজার ২৯৬ জন স্বল্প-দক্ষ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকার নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী রয়েছে তাদের সেবা এবং কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে শ্রমউইং খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ২৯টি শ্রমউইং কাজ করছে। আরও কয়েকটি দেশে শ্রমউইং খোলা হবে বলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান। বর্তমানে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। তবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। সেই সঙ্গে কোন এজেন্সি এই টাকায় লোক পাঠাচ্ছে তাও বলতে পারেননি মন্ত্রী। মন্ত্রী দাবি করেন কোন অভিযোগ এলে তার ব্যবস্থা তিনি নেন। মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে শুরু করা হবে। তিনি বলেন, বিএমইটি ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুর, যশোর ও বরিশাল থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুু কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অসুস্থ, মৃত কর্মী ও তাদের পরিবারের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হতে একটি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই সেবা যুক্ত করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশী কর্মীরা যেন সরাসরি তাদের অভিযোগ ও সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করতে পারেন সে লক্ষ্যে প্রবাস বন্ধু কল (+০৯৬৫৪৩৩৩৩৩৩) সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে সৌদি আরব, জর্ডান মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ২৫ লাখ কর্মী সরাসরি এ সেবা পাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশেও এ সেবা চালু করা হবে। তাছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান দূতাবাসে হটলাইন চালু হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। এছাড়াও বিদেশের কর্মরত নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। যে সকল অভিযোগ পাওয়া গেছে তার ৬৫ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। মালয়েশিয়া বিষয়ে প্রশ্নগুলো অনেকটাই এড়িয়ে গেছেন মন্ত্রী। শুধু বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি চাহিদা পেলে সবই হবে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুুন নাহার, অতিরিক্তি সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক, জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×