ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় দুঃসহ মাত্রায় শব্দ দূষণ- শিশুরা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

ঢাকায় দুঃসহ মাত্রায় শব্দ দূষণ- শিশুরা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত

শাহীন রহমান ॥ রাজধানী ঢাকায় মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা। গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা তিন থেকে চারগুণেরও বেশি। প্রধান সড়কের পাশাপাশি মহল্লার মধ্যে ও আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ শব্দ দূষণ ঘটছে। বিশেষ করে শিশুরা যখন ভোরে ঘুমিয়ে থাকে তখন মহল্লার মধ্যে বিকট শব্দে যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া রাজধানীর প্রায় এলাকায় ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনী ইট রাতের বেলায় বহন করার সময় নীরবতা ভেঙ্গে রাতের ঘুমকে হারাম করে দিচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছে শব্দ দূষণ রোধে সরকারের আইন রয়েছে। অথচ এর প্রতিকার না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে রাজধানীর উত্তরাতে শব্দ দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে কম। অথচ সেখানেও শব্দ দূষণের মাত্রা রয়েছে ১২০ ডেসিবল। অথচ দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী শব্দের সহনীয় মাত্রার পরিমাণ ২০ ডেসিবল। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে মহানগরী ঢাকায় সহনীয় মাত্রার দেড় থেকে দুইগুণ বেশি শব্দ বিরাজ করছে। আর এ শব্দ দূষণের কারণে উচ্চরক্তচাপ, অনিদ্রা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মনোসংযোগ কমে যাওয়া, মাথাব্যথা ও মাথা ধরার জটিলতায় ভুগছে নগরবাসী। শুধু তাই নয়, রাজধানীবাসীকে খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তি বোধসহ অস্বাভাবিক আচরণ করার মতো মানসিক ও দৈহিক নানা সমস্যার পড়তে হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, স্থানীয় সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকলে এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। পরিবেশ সংগঠন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান জানান, রাজধানীতে নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৫ থেকে ৯৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৬ থেকে ১০৭ ডেসিবল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড়গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৩ থেকে ১০২ ও ডেসিবল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড়গুণের বেশি। আর বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭১ থেকে ১০৭ ডেসিবল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড়গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শব্দ দূষণের জরিপ হতে প্রাপ্ত যে ফলাফল মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এভাবে শব্দদূষণ চলতে থাকলে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। আর লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশীর সঙ্কোচন করে। পরিপাকে বিঘœ ঘটায়। কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার ও মস্তিষ্কের রোগও হতে পারে। হঠাৎ খুব জোরে শব্দ, যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচ- চাপ দেয়। উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
×