ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিকের বই নিয়ে দেশজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়

এবার মাধ্যমিকের বই সুখপাঠ্য করার উদ্যোগ সরকারের

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

এবার মাধ্যমিকের বই সুখপাঠ্য করার উদ্যোগ সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুলে ভরা আর মৌলবাদীদের দাবি অনুসারে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই এবার মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে আরও সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করতে দুটি কমিটি করেছে সরকার। শিক্ষাবিদদের সুপারিশের ভিত্তিতে কমিটি পাঠ্যপুস্তক সুখপাঠ্য করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটিকে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যমান পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন ও পরিমার্জনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মোঃ মশিউজ্জামান সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদে কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে কমিটি করা হলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল চলমান সমস্যার বিষয়ে নয়, সকল পাঠ্যক্রমের বিষয়েই বিশেষজ্ঞ কমিটি দুটি সুপারিশ করবে। শিক্ষাবিদদের সুপারিশের ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে আরও সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করতেই কমিটি করা হয়েছে। তবে কমিটিতে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তাদের কয়েকজনকে নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য কারিকুলাম (প্রাথমিক) এবং সদস্য কারিকুলামের (মাধ্যমিক) দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কর্মকা- বইয়ের চলমান সঙ্কটের জন্য দায়ী। সঙ্গে আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন অতিরিক্ত সচিব। এই কর্মকর্তারা সকলেই বিএনপি-জামায়াত জোটের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এরাই এনসিটিবির বিশেষ একটি গোষ্ঠীর মাধ্যমে কারিকুলামকে উগ্রবাদী রূপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় তাদের নিয়েই আবার নতুন কমিটি গঠন করায় প্রশ্ন উঠেছে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক কর্মকর্তারা। এনসিটিবিতে থাকা চিহ্নিত সরকারবিরোধী কয়েক কর্মকর্তার বিষয়েও আপত্তি তুলেছেন শিক্ষা ক্যাডারের প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তারা। জানা গেছে, দুটি কমিটির একটি ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে পাঠ্যবই আরও পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দেবে। আরেক কমিটিকে নবম-দশম শ্রেণীর কয়েকটি বই পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়াতে কিছু বিষয় বাদ দেয়া, অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া, প্রশ্ন ব্যাংক তৈরিসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষাবিদদের ওই সুপারিশের ভিত্তিতেই পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা এবং নবম-দশম শ্রেণীর কয়েকটি বই পরিমার্জনে কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রায় দেড় যুগ পর ২০১২ সালে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে সরকার। ওই পাঠ্যক্রমের আলোকে ২০১৩ সালের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা। ২০১২ সালের ওই পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবই অধিকতর পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দিতে নতুন একটি কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনজুর আহমদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তানজীল আশ্রাফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাও এই কমিটির সদস্য। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মোঃ মশিউজ্জামান সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদে কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। নবম-দশম শ্রেণির নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার লক্ষ্যে আরেক কটিমির সদস্য করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম, উদ্দীপন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাকেও এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ইনামুল হক সিদ্দিকীকে এই কমিটির সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×