বন্দুকযুদ্ধে আরও দুই জঙ্গী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের একজনের নাম মারজান, অন্যজন হলো সাদ্দাম। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে বধ্যভূমির প্রবেশমুখে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হয় এই দুই জঙ্গী। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী মারজান ছিল গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় দেশে-বিদেশে সাড়া জাগানো জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়ক। উল্লেখ্য, ১ জুলাই রাতে ওই রেস্তরাঁয় কয়েক জঙ্গী হামলা চালিয়ে ২০ দেশী-বিদেশী নাগরিককে হত্যা করে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গীদের বোমায় নিহত হন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে কয়েকজন জঙ্গীও নিহত হয়। এরপর থেকেই গুলশান হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের খোঁজা হচ্ছিল কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অভিযানে কয়েকজন ধরাও পড়ে। কেউ কেউ হয় আত্মঘাতী এবং কেউ কেউ নিহত হয় বন্দুকযুদ্ধে। যা হোক, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে নাম প্রকাশ পায় মারজানের এবং সে নব্য জেএমবির অন্যতম সংগঠক ও সমন্বয়কারী। ইতিপূর্বে মারজান ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। অন্যদিকে, নিহত জঙ্গী সাদ্দাম রংপুরে নিহত জাপানি নাগরিক কোনিও হোশিসহ উত্তরাঞ্চলে সংঘটিত দশটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। সাদ্দামের পরিবারের দাবি, তাকে কয়েক মাস আগে পুলিশের পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, সাদ্দাম ছিল নিখোঁজ। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দাবি অনুযায়ী গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এমন ১৭ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হয়েছে গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। বাকিদেরও খোঁজা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, বাকিদেরও ধরা হবে শীঘ্রই।
বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সবরকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি এবং জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনোই শিকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময় সময় বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএসআই, আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ এবং মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনোই প্রমাণ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎস, উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে শনৈঃ শনৈঃ গতিতে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য।
শীর্ষ সংবাদ: