ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদপত্রে ‘মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন’ ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

সংবাদপত্রে ‘মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন’ ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। বাঙালী জাতির হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি নাম। পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এ দিনেই তাদের বিজয় রচিত হয়েছিল। বিজয়ের সেই লগ্নটিকে রোমন্থন করে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিজয় দিবসে গোটা দেশই আনন্দে মেতে উঠেছিল বাঁধভাঙ্গা বিজয়োৎসবে। বিজয়ের আনন্দে নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসও ছিল প্রচ-। এর সঙ্গে ছিল একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা-ধিক্কার আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গঠনের নতুন প্রত্যয়। রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথ নিয়ে এ বছর বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্তি উদযাপন করে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। বিজয়ের এই দিনটিকে নানা বর্ণাঢ্য আয়োজন আর উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যম’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ‘তথ্য ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী’। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোর সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে এ আয়োজন করেছে প্রেসক্লাব। পাকহানাদার বাহিনী আর পাকিস্তানের দোষর আলবদর-আলশামসদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করতে তৎকালীন সাংবাদিকরা বিভিন্ন সংবাদপত্রে লেখনীর মাধ্যমে যে অবদান রেখেছিলেন সেসব পত্রিকার কাটিং নিয়ে এ আয়োজন করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া। উদ্বোধনের সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সাংবাদিকদের ভূমিকা তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরায় তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের সেই রক্তঝরা দিনগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন না করলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা তারা মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেনি। দুই দিনব্যাপী ‘আলোকচিত্র ও তথ্যচিত্র’ প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিদের নৃশংস বর্বরতা সম্পর্কে তৎকালীন বিশ্বনেতাদের দেয়া বক্তব্য ও রণাঙ্গনে পাকিদের বিরুদ্ধে বীরসেনাদের বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ সংবলিত ভিডিওচিত্র নিয়ে ‘নাইন মান্থস টু ফ্রিডম’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীও করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিনগুলো নিয়ে আয়োজিত প্রোগ্রামে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ছাড়াও বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যাও কম ছিল না। দুই দিনের দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল তিন হাজারেরও অধিক। এদের মধ্যে শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের উপস্থিতি ছিল। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বাহার সুমন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূঁমিকা নিয়ে আয়োজিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ কারা সম্ভব হয়নি। এমন আয়োজনের মাধ্যমে মনে হচ্ছে একাত্তরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে ফিরে গেছি। প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ ইকবাল বলেন, আমাদের বীরসেনারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তবে তাদের দোসররা এখনও এদেশে ঘাপটি মেরে বসে আছে। যারা বিভিন্ন অপপ্রচারের মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে। তরুণদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে আমাদের এই আয়োজন। আশা করি বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জেনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ হবে। হোসাইন ইমরান
×