ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভাবনা নতুন বছরের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

শিক্ষার্থীদের ভাবনা নতুন বছরের প্রত্যাশা

শীতের পাতার মতো বছরের প্রতিটি দিন ঝরে যায়। সব বর্তমানই মিলিয়ে যায় কালের গহ্বরে। সময়ের মতো মিশে যায় মানুষের স্মৃতি-বিস্মৃতির বহমান ধারা। দিন আসে দিন যায়, তেমনি বছরও। এভাবেই রাত ও দিনের পালা বদলে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে আরেকটি বছর। নতুন বছর নানা শ্রেণীর মানুষ ভাবছেন নানাভাবে, শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়। নতুন বছরের ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। লিখেছেন-দীপঙ্কর দাস ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র তপন কান্তি রায় বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাশা প্রথমত, স্বাধীনভাবে যেন লিখতে, পড়তে ও চলাচল করতে পারি। দ্বিতীয়ত. দেশের সহজ সরল মানুষগুলোর সোজাসাপ্টা হাসিটা সবসময় দেখতে চাই। তৃতীয়ত. দেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন ও হামলা বিগত বছরে হয়েছে নতুন বছরে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল সেই সম্প্রীতি সবসময় অটুট থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা। চতুর্থত. দেশের মুক্তচিন্তার মানুষগুলো যেন আর অপশক্তির দ্বারা আক্রান্ত না হয়। দেশের মানুষের মাঝে মুক্তবুদ্ধির চর্চা বৃদ্ধি পাবে। দেশ কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামি থেকে মুক্ত হবে। দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন হবে। ২. ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মাসুমা মুমু বলেন, আমরা যখন দিনবদলের কথা শুনি, তখন মনটা ভরে যায়। স্বপ্ন দেখি সামনের দিনগুলো অনেক বেশি ভাল যাবে। কিন্তু আমাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন না হয়Ñ এমন প্রত্যাশা করি। ৩. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র রিয়াজুল করিম বলেন, আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে শিক্ষাদান জরুরি। নতুন বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন দেখতে চাই। শিক্ষাব্যবস্থায় কেবল প্রতিযোগিতার মানসিকতা। তাতে স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতার বীজ নিয়েই বড় হবে শিশু। আর বৃহত্তর সমাজবাস্তবতায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার ভেতরে পরিপুষ্ট এসব বীজ শক্তি নিয়েই প্রকাশিত হবে। প্রতিযোগিতার কুফলের হাতেনাতে প্রমাণ পাই উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ে। প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরিসংখ্যান চমকপ্রদ দেখালেও উচ্চশিক্ষার মান বিচারের সময় ধরা পড়ে যায় ফাঁক ও ফাঁকি। এভাবে আমরা শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। তাই নতুন বছরে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। ৪. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী জেরিন তাসনিম অদিতি বলেন, যে কোন মূল্যে আমরা সুন্দর একটা আগামী চাই। সুন্দর আগামী মানেই আমাদের ভালভাবে বাঁচা। আর ভালভাবে বাঁচতে পারা মানেই একে অপরের জন্য কিছু করতে পারা। আর আমরা যখন একে অপরের জন্য কিছু করতে পারব, তখন এমনিতেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা নতুন করে পথ চলতে পারব। নতুন স্বপ্নের কথা বলতে পারব। সবধরনের প্রতিকূলতা মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে পারব সামনে। ৫. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী তিথি সরকার বলেন, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পরস্পরে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় দেশগড়ার মূলমন্ত্রের জাদুটনিক জাগ্রত হবে দেশের কর্ণধারদের মস্তিষ্কে। পাল্টে যাবে দেশের ভাবমূর্তি। মুক্তি পাবে ক্ষুধা-আতুর, দারিদ্র-পীড়িত মানুষেরা অভাবের যাঁতাকল থেকে। বেকার যুবকরা খুঁজে পাবে কাজের সন্ধান। শ্রমজীবী মানুষেরা পাবে তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য। ছাত্রছাত্রীরা পাবে তাদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। যেখানে তারা জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করবে নিশ্চিন্তে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরীরা আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে দেশকে মুক্ত রাখবে বহি:শত্রুর শকুনের থাবা থেকে। আকাশ সংস্কৃতির রাহুকবল থেকে বেঁচে থাকবে এদেশের মানুষ। সন্ত্রাস, সুদ ও ঘুষের মূলোৎপাটন হবে। নতুন বছরে এমনই প্রত্যাশা। ৬. রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাশেদ রাজু বলেন, ২০১৫ সালের শুরুটা হয়েছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। সাধারণ মানুষের উপর বোমা হামলা, ধর্মঘট, মানুষ পোড়ানো ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে মানুষের প্রাণ প্রায় উষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। ২০১৬ সালে এর পরিসংখ্যান কম হলেও নানা স্থানে জঙ্গিবাদের তৎপরতা ছিলো, ছিলো সাম্প্রদায়িক হামলা। তবে বছরটি শেষ হয়েছে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার মধ্যদিয়ে। নতুন বছরেও আমরা এই শৃঙ্খলা ও শান্তির অব্যাহত ধারা দেখতে চাই। ৭. জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অর্ণব আল-আমিন বলেন, নতুন বছরে তারুণ্য জেগে উঠুক নবউদ্যমে। নতুন বছরে তরুণরা নেতিবাচক বিষয়গুলো দূরে রেখে ইতিবাচক বিষয় খুঁজে বের করবে। বাস্তবতা যত বৈরি হোক তরুণ প্রজন্মকে ধৈর্য ধরে তা মোকাবেলা করবে। আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতি আমার অনুরোধ সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি না করে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য আমাদের শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশা করি নতুন বছরে এ ধরনের কোন কার্যকলাপ থাকবে না। এমনটাই প্রত্যাশা। ৮. মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হোসাইন তুর্য বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারমুক্ত একটি দেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ, ধর্ম যার যার দেশটা সবার। বর্তমানে বিশে^ জঙ্গীবাদের যে থাবা তা থেকে মুক্তি পেতে তরুণদেরই কাজ করে যেতে হবে। ধর্মকে পুঁজি করে যারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে তাদের মূলোৎপাটন হবে। সমাজ থেকে ধর্মীয় গোড়ামি ও কুসংস্কার দূর হবে এই প্রত্যাশায় সবাইকে নতুন বছরের শুভ কামনা। ৯. জাতীয় কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ তুহীন। তিনি বলেন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার স্বপ্ন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটসহ সব আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে কাজ করা। আর তাই আমি বছরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও স্থানীয় এলাকার সর্বত্র উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করতে চাই। বর্তমানে আমাদের দেশ আউটসোর্সিং এ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত জনবল তৈরি করা সম্ভব হলে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও সম্ভব। আর এভাবে সবাই যদি একটু একটু করেও এগিয়ে আসে তবেই স্বপ্নের ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। ১০. সরকারী তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কামরুল হাসান সেলিমের মতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শিক্ষাব্যবস্থার গতি মন্থর করে। যা একজন ছাত্র হিসেবে কখনই কাম্য নয়। আমরা নিশ্চই চাইব না নির্ধারিত সময়ের পরীক্ষা অন্য সময় হোক। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে আমাদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে চাই। নতুন বছরে এটা আমার একান্তই কাম্য। কারণ সময় মতো শিক্ষা জীবন শেষ করতে না পারলে ক্যারিয়ার গোছানো বেশ কঠিন। অর্থাৎ ক্যারিয়ার পছন্দ করা এবং সেটাকে গুছিয়ে তোলার পর্যাপ্ত সময় হাতে পাওয়া যায় না। ফলে আমার সব সময়ের চাওয়া শুধু শিক্ষাঙ্গন নয় পুরো দেশটাই যেন বিশৃঙ্খলা ও হানাহানি থেকে দূরে থাকে।
×