ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অচীন দ্বীপের উপাখ্যান’ আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অচীন দ্বীপের উপাখ্যান’ আজ

সাজু আহমেদ ॥ দেউন্দি চা-বাগানকে ৩০ বছর ধরে মুখরিত করে রেখেছে প্রতীক থিয়েটার। জীবনমুখী নাটক মঞ্চায়নের জন্য নন্দিত এই নাট্য সংগঠনটি এবার ঢাকায় তাদের নাটক মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছে। দল সুত্রে জানা গেছে আজ বাংলাদেশ জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘অচীন দ্বীপের উপাখ্যান’ নাটকের মঞ্চায়ন করবে তারা। ড. মুকিদ চৌধুরী রচিত ও নির্দেশিত ‘অচীন দ্বীপের উপাখ্যান’ নাটকটি শেক্সপিয়রের ‘দি টেম্পেস্ট’ থেকে অনুসৃত। আর নাটকটি ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পশৈলীর আওতায় মঞ্চস্থ হবে। নাটকে ব্যবহৃত চা-বাগান নিয়ে আবহ সঙ্গীত রচনা করেছেন ডা. সুনীল বিশ্বাস। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন সুনীল বিশ্বাস, আমদ মাল, বিদ্যা বাক্তী, শিমুল দাস, প্লাবন বিশ্বাস, পপি বাউরী, মিলি ভূমিক, দীপ্ত বাক্তী, সুনীল বাউরী, প্রান্তিক বাক্তী, পিয়ন্ত বাক্তী, বিজিৎ আচার্য, পঞ্চম বাউরী, চন্দন মহালী, শাকিল বাউরী, তুষার রাজঘর, প্রান্থ বাক্তী প্রমুখ। ‘অচীন দ্বীপের উপাখ্যান’ নাটকের গল্পে দেখা যাবে রাঢ়ের অধিপতি বিজয় সিংহ রাজত্ব থেকে নির্বাসিত হলে কন্যা সুকৃতির সঙ্গে তাকে ভাসিয়ে দেয়া হয় বঙ্গোপসাগরে। ভাসতে ভাসতে তারা সিংহল দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন। দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক বছর। একদিন, হঠাৎ, যুবরাজ সুখময়সৈন্য, রাজভ্রাতা দয়ালসৈন্য, অঙ্গরাজ্য রাঢ়ের অধিপতি সুমিত্র সিংহ (বিজয় সিংহের ভ্রাতা), প্রবীণ অমাত্য গঙ্গা আর অনেক দলবল সহ প্রাচ্য-গঙ্গার মহারাজাধিরাজ উগ্রসৈন্যের বিশাল নৌকা বঙ্গপোসাগরে, সিংহলের পথে, প্রচ- ঝড়ের মুখে পড়ে। চারদিকে মেঘের গুরু গর্জন। সারেঙ অধৈর্য হয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে শ্বাস টানতে টানতে মাঝিদের তাড়া দিতে শুরু করে। মহারাজাধিরাজ ও তার দল অতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। একসময় বিশাল নৌকা থেকে আরোহীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সমুদ্রের বুকে যখন এই ঘটনাটি ঘটে চলেছে ঠিক তখনই আরোহীদের চিৎকারে রাঢ়ের প্রকৃত রাজা বিজয় সিংহকে তার কন্যা সুকৃতি অনুরোধ জানায় তাদের রক্ষা করার জন্য। এর পরই নাটক মোড় নেয় নতুন বাঁকে। ‘অচিন দ্বীপের উপাখ্যান’ নাটকের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয় যে, নাটকই গণমানুষের মুক্তির হাতিয়ার। নাটক প্রসঙ্গে ড. মুকিদ চৌধুরী বলেন, এ নাটকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখানো হয় যে, একই ঐতিহাসিক ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায় ভিন্ন-ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, জাতিগত মানদ- ও মূল্যবোধ অনুসারে। যেখানে গৃহীত মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয় পুনঃস্থাপনের ওপর ভর করে, যা চিহ্নিত করে একটি পুনর্নিমাণ কাঠামো। আর এই পুনর্র্নিমাণ কাঠামো তৈরি হয় একটি সংস্কার-ধারার মাধ্যমে। ‘অচিন দ্বীপের উপাখ্যান’ নাটকের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, ‘নাটকই গণমানুষের মুক্তির হাতিয়ার’। ‘দুটো পাতা, একটি কুঁড়ি’র দেউন্দি চা-বাগানের কোমলমতি শ্রমজীবী মানুষরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা-পাতা তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আবার সাংসারিক কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়। এভাবে সকাল-সন্ধ্যা কর্মব্যস্ত তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এসব অবহেলিত চা-বাগানের শ্রমিকের প্রতি অফুরান্ত ভালবাসা থেকেই ‘অচিন দ্বীপের উপাখ্যানী’ নাটকটি তৈরি করা হয়। চা-বাগানেও যে ‘বাঙালি মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পধারায় একটি অসাধারণ নাটক তৈরি করা যায় তা আমি কাজ না করলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। এই কাজ নিঃসন্দেহে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে তুলনীয়। দরিদ্র চা-জনগোষ্ঠী শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতিতে একদিন বাঙালীর সামনে দাপটের সঙ্গে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করবে সেটাই হবে সেটাই এ নাট্য প্রযোজনার অন্যতম প্রত্যাশা।
×