ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে জাফর ইকবালকে সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে জাফর ইকবালকে সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিজ্ঞানের মতো জটিল বিষয় তিনি উপস্থাপন করেছেন সহজ ও সাবলীলভাবে। তাঁর হাত ধরেই এদেশে ভিত্তি পেয়েছে কল্পবিজ্ঞানবিষয়ক সাহিত্য। তাঁর লেখা সায়েন্স ফিকশন ঘরানার উপন্যাসগুলো শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে পরিণত পাঠকদের কাছেও। জনপ্রিয় সেই কল্পবিজ্ঞান লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে প্রদান করা হলো সংবর্ধনা। সায়েন্স ফিকশন রচনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লেখককে সংবর্ধনা প্রদান করে বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি। সোসাইটি আয়োজিত সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালের সমাপনী দিন শনিবার এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেলে রাজধানীর সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে লেখককে জানানো হয় এ সম্মাননা। অনুষ্ঠানে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিশিষ্টজনদের নিবেদিত আলোচনায় লেখকের প্রতি নিবেদন করা হয় অকৃত্রিম ভালবাসা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সময়ের জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক। জাফর ইকবালকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন তাঁর সহধর্মিণী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক এবং অনুজ লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে বর্ণিল আলোর খেলায় লেজার শো এবং এলিয়েন উৎসবসহ নানা আয়োজনে জমে ওঠে এ উৎসবের সমাপনী দিনটি। সংবর্ধনাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে বানিয়ে বানিয়ে আমি অনেক লেখা লিখেছি। এই লেখালেখির সুবাদে আমার জীবনের ৫০ এবং ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুইবার সংবর্ধনা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেসব আয়োজনে আমি অংশ নেইনি। এই প্রথম কোন সংবর্ধনা গ্রহণ করলাম এবং বেশ বিব্রত হলাম। এরপর রসিকতা করে মিলনায়তন পরিপূর্ণ শ্রোতাদের মাঝে হাসির রোল তুলে এ লেখক বলেন, আমার কাছে মনে হয় মানুষ মরে গেলে সাধারণত এ ধরনের আয়োজন করা হয়। তাই অন্য লেখকদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, ভুলেও এ ধরনের কোন সংবর্ধনা গ্রহণ করবেন না। তবে এ ধরনের আয়োজনে একটা আন্তরিকতা উপলব্ধি করছি। এর মাধ্যমে আমার প্রতি অনেকের ভালবাসার প্রকাশটা উপলব্ধি করতে পারলাম। তিনি আরও বলেন, মূলত আমি ছোটদের জন্য লেখালেখি করি। আর কোন লেখা ভাল হলে এই খুদে পাঠকদের যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটে তার কোন তুলনা নেই। আবার খারাপ হলেও তারা অকপটে বলে ফেলে, স্যার কী লিখেছেন, পড়ে বসে এসে পড়ে বলে সমালোচনাও করে। এসব কিছুর পর আমার মনে হয়েছে, জীবনে যা কিছু পাওয়া দরকার তার চেয়ে বেশি কিছু পেয়েছি। আর আমার লেখালেখিসহ সকল কর্মকা-েই সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, জাফর ইকবালের প্রতি পাঠকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের অনুরাগের প্রকাশ ঘটেছে এ আয়োজনে। একজন লেখকের জন্য এটা অবশ্যই প্রেরণাদায়ী। লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন তিনি। কল্পবিজ্ঞান ছাড়াও তাঁর বিভিন্ন লেখায় অবিরত প্রকাশ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সেটা তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এছাড়া শিশু-কিশোরদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবাল। তাঁকে পেলে শিশুরা যেভাবে উল্লসিত হয়ে ওঠে অন্য কিছুতে তারা তেমন উচ্ছ্বসিত হয় না। এটাও এ লেখকের অনন্য একটি অর্জন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জাফর ইকবাল যখন দামী চাকরি ফেলে আমেরিকা থেকে ফিরে এলো তখন খুব অবাক হয়েছিলাম। এরপর আবার যখন তাঁর লেখা পড়তে শুরু করলাম তখন মুগ্ধ হলাম। তাঁর আগে কল্পবিজ্ঞান নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তেমনভাবে কেউ লেখালেখি করেননি। তাঁর লেখালেখির আগে আমরা বিদেশী লেখকদের কল্পবিজ্ঞানের বই পড়তাম। সেই হিসেবে জাফর ইকবাল হচ্ছেন এদেশের কল্পবিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে অগ্রগণ্য। নাটক লেখার ক্ষেত্রে জাফর ইকবালের দক্ষতা রয়েছে। তাই তিনি নাটক লিখলে উপকৃত হতো এদেশের নাট্যাঙ্গন। আনিসুল হক বলেন, আমি জাফর ইকবালের অনেক কিছুই অনুসরণ করি। গৎবাঁধা কথার বাইরে অনেক কিছু উঠে আসে তাঁর লেখায়। নিজের বিবেকের যা বলে সেটাই লেখেন তিনি। লেখক পরিচয়ের বাইরে মানুষ হিসেবে তিনি সাহসী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করার জন্য সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছেন এবং রাখছেন। অনুষ্ঠানে মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাতে সংবর্ধনার স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সেই সঙ্গে তাঁকে পরিয়ে দেয়া হয় উত্তরীয়। সম্মাননা প্রদানের পর ছিল লাল-নীল বাতির খেলায় লেজার শো। এছাড়াও এদিন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় এলিয়েন উৎসব। শিক্ষার্থীদের স্বহস্তে তৈরি কিংবা আঁকা এলিয়েনের মধ্য থেকে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ এলিয়েন নির্মাণকারী শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয় বিশেষ পুরস্কার। সব শেষে এলিয়েনদের উড়িয়ে দেয়া হয় মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে! এর মাধ্যমে দুদিনের এ উৎসবের সমাপ্তি করা হয়। পৌষমেলার দ্বিতীয় দিন ॥ পৌষমেলা উদ্যাপন পর্ষদের আয়োজন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে তিনদিনের পৌষমেলা। শনিবার দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের প্রথম পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সুরবিহার। একক আবৃত্তি করেন রেজীনা ওয়ালী লীনা। দলীয় আবৃত্তি করে ঢাকা স্বরকল্পন। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে দিব্য ও নৃত্যালোক। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন দিল আফরোজ রেবা, খগেন্দ্র নাথ সরকার, আরিফ রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস কাকলী, দিবাকর, মাহজাবিন শাওলী ও নাসিমা শাহিন ফ্যান্সী। বিকেলে দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে মরমী লোকগীতি শিল্পীগোষ্ঠী, গীতি শতদল ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। দলীয় আবৃত্তি করে কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন এনামুল হক বাবু, মাশকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও তামান্না সারোয়ার নীপা। পুঁথি পাঠ করেন অলোক বসু। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ, নৃত্যাক্ষ ও বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন লিলি ইসলাম, মহাদেব ঘোষ, শহীদ কবির পলাশ, সফিউল আলম রাজা, এসএম মেজবাহ ও আবদুল হালিম খান। এছাড়াও এম আর ওয়াসেকের নির্দেশনায় ছিল নৃত্যনাট্য ‘মহুয়া’। আজ মেলার শেষ দিনে চলবে সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। জাদুঘরে ইউপিএলের প্রকাশনা উৎসব ॥ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে প্রকাশিত রনি নূরের ‘স্লাইস অব হেভেন এ্যান্ড আদার এসেজ’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো শনিবার। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী চিত্রশালায় আয়োজিত প্রকাশনা উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। আলোচনা করেন অধ্যাপক ড. বিনয় বর্মন, অধ্যাপক আহমেদ রেজা ও অধ্যাপক নুরুল করিম নাসিম। বইটিতে প্রাবন্ধিক রনি নূর ধর্ম ও দার্শনিকতা নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। দোতারার তারে তারে সুরসন্ধ্যা ॥ দোতারার সুর ছড়ানো চমৎকার এক আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো শনিবার সন্ধ্যায়। দোতারার তারে তারে সুরেলা শব্দধ্বনি তুলে শ্রোতাকে মুগ্ধ করছেন দোতারাবাদক যন্ত্রশিল্পীরা। রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বরূপ দোতারা সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। দোতারা আমাদের লোকসংস্কৃতি ও মাটি-মানুষের ঐতিহ্য। এই শিল্পের লালন ও পরিচর্যায় এখন প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াস। এই প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় ‘দোতারার তারে তারে’ শীর্ষক দোতরা বাদন সন্ধ্যা। এই আয়োজনে দোতারা বাজিয়ে শোনান ঢাকা ও পার্শ্ববর্র্তী বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন স্বরূপ দোতারা সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি নির্মল কুমার দাস। আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, আমাদের দেশ ছিল নদীমাতৃক। আমার জন্ম ও বড় হওয়া শহরে। ছোটবেলায় নৌকায় নানারবাড়ি যেতাম। নদীপথে বিনোদন ছিল একতারা-দোতারা। এখানে এসে এই স্মৃতি খুব মনে পড়ছে। দোতারা নিয়ে এ ধরনের আয়োজন শুধু ঐতিহ্য রক্ষাই নয়, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করারও ব্যাপার। শহুরে সমাজে দোতারাকে নিয়ে আসার এই উদ্যোগে আমি আনন্দিত। মির্জা আজম বলেন, কালের বিবর্তনে দোতারা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল স্বরূপ দোতারা সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত। আলোচনা শেষে দোতারার তারে তারে গ্রামছাড়া এই রাঙ্গামাটির পথসহ বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন সুর ও সেমি ক্লাসিক্যাল সুর তোলেন দোতারা শিল্পী নির্মল কুমার দাস, নাসির উদ্দিন, নিজাম শিকদার, আশুতোষ শীল, রতন কুমার রায়, শেখ জালাল, অনুপম বিশ্বাস, মোকাদ্দেস আলী, সোলেমান, অরুপ কুমার শীল, আব্দুর রউফ, হবি মিয়া, হাবিবুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, তানভীর আহমেদ সামদানী, দিলীপ কুমার শীল, সুমন শীল, রনজিৎ কুমার বৈরাগী এবং তবলায় সহযোগিতা করবেন স্বপন কুমার নাগ, একরাম হোসেন, পল্লভ শেনাল, চন্দন দত্ত ও লিটন দাস। এছাড়াও দোতারার সুরের সঙ্গে ছিল আইরীন পারভীন পরিচালিত সমবেত নৃত্য পরিবেশনা।
×