ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘সহিংসতার নানা ধরন’ শীর্ষক আলোচনায় আইনমন্ত্রী

বিত্ত-বৈভবের পেছনে ছুটতে গিয়ে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

বিত্ত-বৈভবের পেছনে ছুটতে গিয়ে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, শুধু শাস্তি দিয়ে অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরাধ বন্ধ করতে শাস্তির পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে বিত্ত-বৈভবের পিছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন কোথাও কোথাও দুর্বল বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবার ও সমাজ থেকে শিক্ষা নেয়া- যেটা আগে অনেক ছিল তা কোথাও কোথাও কমে গেছে। তাই আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করতে হবে। বিচ্ছিন্ন বন্ধন আবার জোড়া লাগাতে হবে। তাহলে সামাজিক অপরাধ অনেক কমে যাবে। অপরাধ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও বিচার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্রাইম এ্যান্ড জাস্টিস স্টাডিজ’র প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন আইনমন্ত্রী। শনিবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘সহিংসতার নানা ধরন : বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন তিনি। বিইসিজেএস এর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. মোকাররম হোসেনের সভাপতিত্বে করেন। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে টেনে তিনি বলেন, ‘সাইবার অপরাধ বলে নতুন একটি অপরাধের সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য অভিনব আইন তৈরি করা প্রয়োজন।’ সাইবার অপরাধ দমনে দেশীয় আইন ও বিচার কাঠামোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ গড়ে তোলার উপরও জোর দেন আইনমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন ও অপরাধ সংঘটনের কৌশল বদলে যাচ্ছে। এ সমস্ত অপরাধ দমনের জন্য বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সামাজিক অপরাধ দমনে সরকারের পাশাপাশি দেশের জনগণ ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ দেশ গড়ার মধ্যে সব সময় সমাজের একটা অবদান থাকে। সমাজ বিচ্ছিন্ন দেশ গড়া যায় না। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আদালতে ২৭ লাখ মামলা জটে আছে। কিন্তু অপরাধ বসে থাকবে না। অপরাধ বাড়লে মামলার সংখ্যাও বাড়বে। আমরা দেখেছি শত শত বছর ধরে শাস্তি দিয়েও অপরাধ দমানো যায়নি, যাচ্ছে না। আজকের পৃথিবীতে নতুন নতুন অপরাধ দেখছি, যা এক সময় চিন্তায়ও আসত না।’ পরিবার হচ্ছে শিক্ষার মূল কাঠামো। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মূল্যবোধ তৈরি করত। কিন্তু এখন পরিবার-সমাজের যোগসূত্রগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। চেন অব কমান্ড ভেঙে যাচ্ছে। ফলে অপরাধের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। একে সমুন্নত করতে হবে। নয়ত সহিংসতা, অপরাধ দমন বা প্রতিহত করা যাবে না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান মিয়া ও প্রফেসর ড. শাফিকুর রহমান। মোকারম হোসেন বলেন, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি থেকে একজন ব্যক্তি অপরাধ বা সহিংসপ্রবণ হয়ে ওঠে। তাই এর বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা প্রয়োজন। অপরাধ দমনই নয়, একইসঙ্গে অপরাধের কারণ, ধরন-প্রকৃতি বিশ্লেষণ, বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ সংঘটনের ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে হবে।
×