ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুজন গ্রেফতার

আদনানকে পিটিয়ে, দেহে স্ক্রু ঢুকিয়ে হত্যা করেছে কিশোর সন্ত্রাসীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

আদনানকে পিটিয়ে, দেহে স্ক্রু ঢুকিয়ে হত্যা করেছে কিশোর সন্ত্রাসীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান কবির (১৪) খুনের ঘটনায় সাদাফ জাকির ও নাসির মোঃ আলম নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে তাদের আটক করা হয়। এদিন সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আদনানের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। স্বজনের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহত আদনান কবির উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে সে বসবাস করত। উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক জানান, এলাকাভিত্তিক সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল। ঘটনার সময় শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে স্কুলছাত্র আদনানকে একা পেয়ে প্রতিপক্ষ তাকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ আদনানের দেহের বিভিন্ন স্থানে স্ক্রু ঢুকিয়ে দেয়। পরে তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় সেখানে ফেলে যায়। স্থানীয়রা আদনানকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাতেই উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তিনি জানান, আদনান খুনের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে, শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আদনানের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনের কান্নায় মর্গের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহত আদনানের মামা জিয়াউল হক জানান, শুক্রবার বিকেলে ভাগ্নে আদনান র‌্যাকেট হাতে বাসা থেকে বের হয়। এরপর সে লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে। শনিবার সকালে মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে জিয়াউল কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ওকে (আদনান) আমি কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। সে এখন চোখের সামনে লাশ হয়ে পড়ে আছে। এমন দুর্ভাগ্য যেন আর কোন মামার না হয়। তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ভাগ্নে আদনান কবিরের মৃতদেহ গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপেক্ষা করছিলেন তার স্বজনরাও। নিহতের মামা জিয়াউল হক আরও জানান, আমি পুরান ঢাকায় থাকি। ওরা (আদনান) উত্তরা থাকে। শুক্রবার এশার নামাজের পর খবর পাই এ মমার্ন্তিক ঘটনা। খবর পেয়েই উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের লুবনান হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু ততক্ষণে আদনান বেঁচে নেই। তিনি জানান, আদনানের বাবা ব্যবসায়ী কবির হোসেন ও মা কাওসার বেগম। তিন ছেলের মধ্যে আদনান ছিল মেজ। তার বড় ভাই দশম শ্রেণী আর ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। জিয়াউল হক জানান, আদনান শান্ত-চুপচাপ স্বভাবের ছিল। প্রায়ই অসুস্থ থাকত। তাই ওর প্রতি সব সময়ই আমাদের আলাদা খেয়াল ছিল। ওকে নিয়ে টেনশন হতো সবার। ওই টেনশন আর করতে হবে না। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি জানান, ওর মা আমার বড়। বড় বোনের বাচ্চারা এমনিতেই মামা-খালাদের খুব আদরের হয়। আদনানও তাই ছিল। লেখাপড়ায় ভাল ছিল। জিয়াউল হক জানান, শুনেছি ৩-৪ মাস ধরে উত্তরায় এই কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দুদিন আগেও তারা আরেকটি ছেলেকে মেরেছে। ওই ছেলেটিও শুনেছি রাজনীতি করে। তাদের হয়ত অন্য কোন হিসাব ছিল। কিন্তু আমার ভাগ্নে তো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। নিহতের চাচা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ওরা আদনানকে কিভাবে নির্মমভাবে খুন করেছে তা লাশ দেখলে বুঝতে পারবেন। এভাবে তারা আদনানকে মারতে পারল? ওকে দুটি থাপ্পড় দিলেই আর উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। ওরাও (হামলাকারীরা) তো কারও সন্তান, কারও ভাই। তারা কি জানে তাদের ছেলে আরেকটা মায়ের কোল খালি করে দিল? রফিকুল ইসলাম বলেন, খেলার মাঠে যারা সিনিয়র ছিল তাদের সঙ্গে বাইরের কোন এক গ্রুপের সঙ্গে বিরোধ ছিল। ওদের কথা কাটাকাটিতে এক সময় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় বড়রা দৌড়ে পালিয়ে গেলেও আমাদের ছেলেটা পালাতে পারেনি। ওকে ধরতে পেরে ইচ্ছামতো কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
×