ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াবাহিনী প্রধানসহ ১২ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

নোয়াবাহিনী প্রধানসহ ১২ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৭ জানুয়ারি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পৃথিবীবিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন অপার সম্ভাবনাময় সুন্দরবন মাওয়ালী, বাওয়ালী ও জেলেদের জীবিকার অবলম্বন। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক যাচ্ছে, সেইখানে জলদস্যু আক্রমণ করলে আমাদের বাহিনী বসে থাকবে না। সবসময় টহল থাকবে। থাকবে পাহারা। মানব পাচার, জলদস্যুতা হতে দেয়া হবে না। শনিবার দুপুরে কুয়াকাটায় সুন্দরবনের জলদস্যুপ্রধান বাকি বিল্লাহ ওরফে নোয়াবাহিনী প্রধান নোয়াসহ তার ১২ সদস্যের র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলে জলদস্যুদের রাজত্বের দিন শেষ। এখনও যারা আত্মসমর্পণ করেনি তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, অযথা রক্তক্ষয় করতে চাই না। তিনি বলেন, জলদস্যুর আটটি দল আত্মসমর্পণ করেছে। জাহাঙ্গীর বাহিনীসহ যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেনি তাদের আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনামতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেসব জলদস্যু র‌্যাবের কাছে ইতোপূর্বে আত্মসমর্পণ করেছে তাদের নগদ অর্থ ও কম্বল দেয়া হচ্ছে। করা হবে পুনর্বাসন। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ও আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, নিরাপদ সুন্দরবন চাই। প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাসী থাকতে পারবে না। জলদস্যুসহ সন্ত্রাসীদের আগাছা উল্লেখ করে এসব সমূলে নির্মূল করার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি এখনও যেসব জলদস্যু রয়েছে তাদের অপকর্ম পরিত্যাগ করে ভাল পথে আসার পরামর্শ দেন। জলদস্যু যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেনি তারা র‌্যাবের নজরদারিতে রয়েছে দাবি করে বেনজীর আহমেদ বলেন, অচিরেই সুন্দরবনকে নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা হবে। তিনি হুঁশিয়ার করে জলদস্যুদের বলেন, হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়ত ভয়াবহ পরিণতি বহন করতে হবে। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র‌্যাব-৮ বরিশালের অধিনায়ক কর্নেল মোঃ আনোয়ারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরিশাল পুলিশের ডিআইজি শেখ মোঃ মারুফ হাসান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী, পুলিশ সুপার মোসফিকুর রহমান। এসময় আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু বাহিনী প্রধান বাকি বিল্লাহ নোয়া এবং নির্যাতিত জেলে আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন। র‌্যাবসূত্র জানায়, বাকি বিল্লাহ ওরফে নেয়া বাহিনী পশ্চিম সুন্দরবনে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের একটি সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী ছিল। এই বাহিনী বিভিন্ন সময় অপহৃত জেলেদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। র‌্যাব-৮ এর অভিযানের পরে এ বাহিনী অভিযানিক দলের কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিনাশর্তে ৬ জানুয়ারি, শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় পুটিয়ার খালের কাছে অস্ত্র নিয়ে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থেকে আত্মসমর্পণ করে। এ দলের আত্মসমর্পণ করা অন্য সদস্যরা হচ্ছে মনিরুল শেখ, মানজুর মোল্লা ওরফে রাঙ্গা, মুক্ত শেখ, তরিকুল শেখ, আকবর শেখ, কিবরিয়া মোড়ল, জাহাঙ্গীর শেখ ওরফে মেজ ভাই, আল-আমিন শিকদার, ইউনুচ শেখ ওরফে দুলাল ঠাকুর, মিলাদুল মোল্লা ওরফে কালু, মোশারফ হোসেন। এদের কাছ থেকে সাতটি বিদেশী একনলা বন্দুক, আটটি বিদেশী দোনলা বন্দুক, দুটি ২২ বোর বিদেশী এয়ার রাইফেল, তিনটি শুটার গান, একটি বিদেশী থ্রিনট থ্রি রাইফেল, একটি ২২ বোরের বিদেশী রাইফেল, তিনটি কাটা রাইফেলসহ ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১০৫ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গুলি জব্দ করা হয়।
×