ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে যুবককে নির্যাতন

থানায় সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

থানায় সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে আবু সাঈদ নামে এক যুবককে আটকের পর থানায় উল্টো করে ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধরের ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হবার পর পুলিশ ক্ষেপেছে সাংবাদিকদের ওপর। এখন থানায় সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, কোতোয়ালি পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মানুষকে নির্যাতন করে টাকা আদায় করছে, কিন্তু তা প্রমাণ করা যাচ্ছিল না। এবার ছবির কারণে তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এক কথায় বলা যায়, যশোর পুলিশ জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ কর্মকা-ে। জানা গেছে, ঘুষ হিসেবে দাবি করা টাকা না দেয়ায় গত বুধবার আবু সাঈদকে নির্যাতন চালানো হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন তথ্য উঠে এলেও বর্তমানে তা অস্বীকার করছেন ওই যুবক ও তার স্বজনরা। তবে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পুলিশ সাঈদকে আটক করে নিয়ে যায় এবং টাকা দিয়ে সে মুক্তি পেয়েছে বলে তারা শুনেছেন। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে আবু সাঈদ তার স্ত্রী ও ভাইদের নিয়ে প্রেসক্লাব যশোরে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, বুধবার রাতে এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে থানায় নিয়ে আমি দুই নম্বর ব্যবসা করি কিনা জানতে চায়। আমি তো ওই সব দুই নম্বরি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। সে কারণে পরদিন রাত ৮টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমাকে কোন টর্চার করেনি পুলিশ। তিনি আরও জানান, ভাইরাল হয়ে যাওয়া ছবিটা তার নয়। এ বিষয়ে প্রমাণস্বরূপ তিনি তার হাত এবং পশ্চাৎদেশ সাংবাদিকদের দেখান। তিনি বলেন, ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি শারীরিকভাবে আমার চেয়ে মোটা। আর সেদিন রাতে আমাকে পুলিশ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় আটক করে। তাছাড়া ওই ধরনের জিন্স বা টি শার্ট তার নেই। এদিকে মারপিটের ছবি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের কারণে যশোর কোতোয়ালি থানায় সাংবাদিক ও জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। আকস্মিকভাবে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিক থেকে এ নিয়ন্ত্রণ চলছে। থানার প্রধান ফটকে আটকে দিয়ে তার পাশে একজন সাবইন্সপেক্টরকে বসিয়ে পাস দেয়া শুরু হয়েছে। সেখানে নাম, পরিচয় ও আসার কারণ উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নিতে হচ্ছে। আর সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে, উপরের অনুমতি ছাড়া কোনভাবে প্রবেশ করা যাবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে অন্যকোন ইনটেনশন নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও পুলিশ অপরাধ করলেও পার পেয়ে যায়। ফলে দিন দিন পুলিশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত বছরে ঝিকরগাছা পুলিশ সুইডিশ দম্পতিকে ৩ হাজার ডলারসহ আটক করে ঝিকরগাছার হাজের আলী থেকে। তারা ভারত থেকে নড়াইলের কালিয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরছিল। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও পুলিশ ওই ডলার কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে তাদের বাড়ি গিয়ে টাকা ফেরত দিলেও তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে। গত বছরের মাঝামাঝি বেনাপোল পোর্ট থানার এক কনস্টেবল ১২ পিস স্বর্ণের পিস নিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে সে চাকরিতে যোগদান করে। গত বছর বাঘারপাড়ার ভিটেবল্লা এলাকায় ছিনতাই করার সময় আটক হয় এক কনস্টেবল। পরে সে থানা থেকে পালিয়ে যায়। এভাবে যশোর পুলিশ একের পর এক অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। আর অধিকাংশ পুলিশ কাউকে আটক করে নাশকতার মামলায় চালান দেবার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ অভিযোগ প্রতিনিয়ত। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
×