ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুশ নেতার নির্দেশেই সাইবার হামলা ॥ মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট

হিলারির ক্ষতি চেয়েছিলেন পুতিন

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

হিলারির ক্ষতি চেয়েছিলেন পুতিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত এবং হিলারি ক্লিনটনের প্রার্থিতার ক্ষতি সাধন করার নির্দেশ দেয়ার দায়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে শুক্রবার অবমুক্ত করা এক গোপনীয় মার্কিন দলিলে। এর আগে দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এ রিপোর্ট নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পেশ করা হয়। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক পোস্ট, ফক্স নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্টের। সিআইএ, এফবিআই ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির তৈরি করা ২৫ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়: আমরা উচ্চ আস্থার সঙ্গে মূল্যায়ন করছি যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে লক্ষ্য করে প্রভাব বিস্তারের অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সর্বদাই এর লক্ষ্য ছিল মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের আস্থাবোধ বিনষ্ট করা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির অমর্যাদা করা এবং তার নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাহানি ও প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনার ক্ষতিসাধন করা।রিপোর্টে বলা হয়, ওই অভিযানে সাইবার তৎপরতা ও অন্যান্য চেষ্টা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওই সিদ্ধান্তের সমর্থনে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট তথ্যকে গোপন রাখতে হবে বলে কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন। রিপোর্টে বলা হয়, এ দলিলের সিদ্ধান্তগুলো খুবই গোপনীয় মূল্যায়নের সমতুল্য, কিন্তু এ দলিলে প্রভাব বিস্তারের বড় বড় দিক সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যসহ পূর্ণ সহায়ক তথ্য অন্তর্ভুক্ত নেই। এ রিপোর্ট ২০১৬ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ডেমোক্র্যাটিক দলকে প্রভাবিত করেছিল এমন ই-মেইল হ্যাকিংয়ে রাশিয়ার জড়িত থাকাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কে নতুন করে ইন্ধন যোগাচ্ছে। ট্রাম্প রাশিয়া জড়িত বলে দেখানোর সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে ইতোপূর্বে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলেন এবং শুক্রবার এ তদন্তকে প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ট্রাম্প ও গোয়েন্দা সম্প্রদায় ব্রিফিংয়ের পর কিছুটা একমত হয় বলে মনে হয়। ট্রাম্প ও রিপোর্ট উভয়েই জানায় যে, রুশরা ভোট সংখ্যাকে লক্ষ্য করে তৎপরতা চালায়নি। ট্রাম্প এক বিবৃতিকে আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ভোটিং মেশিনে আদৌ কোনরূপ কারচুপি করাসহ নির্বাচনের ফলের ওপর একেবারেই কোন প্রভাব ফেলা হয়নি। রিপোর্টে নির্বাচনের ফলের ওপর রুশ তৎপরতার প্রভাবের কোন মূল্যায়ন করা হয়নি। কেউ কেউ রুশ হস্তক্ষেপের দাবিকে ট্রাম্পের বিজয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে কাজে লাগান। শুক্রবার নির্বাচনী কলেজের ফলের সার্টিফিকেশনের সময় প্রতিনিধি পরিষদের ফ্লোরে বিক্ষোভ দেখিয়ে লোকজন ব্যর্থ হন। পরিষদের স্পীকার পল রায়ান এক বিবৃতিতে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিরপেক্ষ ও সন্দেহাতীতভাবে এ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু রিপোর্টে মস্কোর কার্যত প্রভাব বিস্তার তৎপরতার নতুন ও ভীতিকর বিস্তারিত দিক তুলে ধরা হয়। রায়ান ও অন্যরা এ তৎপরতার নিন্দা করেন। রিপোর্টে দেখানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি পুতিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের সমালোচনা করার পর পুতিন কয়েক বছর ধরে হিলারির প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে এসেছিলেন। এতে বলা হয়, পুতিন খুব সম্ভবত হিলারির মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে চেয়েছিলেন। কারণ, পুিতন তার শাসনের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ উস্কে দেয়ার দায়ে ২০১১ সাল থেকে হিলারিকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করেন। রিপোর্টে বলা হয়, পুতিন ট্রাম্পকেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে কথা বলেছিলেন এবং তিনি ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক অংশীদার হবেন। এক লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প স্বীকার করেন রাশিয়া, চীন ও অন্যরা ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কমিটিসহ আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাইবার অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলতে অনবরত চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে নির্বাচনের ফলের ওপর একেবারেই কোন প্রভাব পড়েনি। ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন সাইবার হামলার বিরুদ্ধে লড়াই করে তা রোধ করা এবং তিনি দায়িত্ব নেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে তাকে একটি পরিকল্পনা দিতে তিনি একটি টিম গঠন করবেন। তিনি বলেন, আজ থেকে দু’সপ্তাহের মাথায় আমি আমার পদের শপথ গ্রহণ করব এবং আমেরিকার নিরাপত্তাই আমার প্রথম অগ্রাধিকারের বিষয় হবে। রুশরা ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি ও হিলারির সহকারী জন প্যাডেস্টার কম্পিউটারে সাইবার হামলায় সহায়তা করেছিল এবং হ্যাক করাই ই-মেইলগুলো উইকিলিকস, জিসিলিকস ও রুশ সম্পৃক্ত হ্যাকার সুসিফারের কাছে পাঠিয়েছিল। রিপোর্টে একথা বলা হয়।
×