ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোবটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

রোবটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জাতিসংঘ

সবার জন্যই একটা সুখবর আছে। খবরটা এই যে জাতিসংঘ খুনে রোবোটের বিরুদ্ধে কিছু একটা ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি জেনেভায় প্রচলিত অস্ত্র সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে অংশগ্রহণকারী ১২৩টি দেশ প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা অর্থাৎ সোজা কথায় ‘খুনে রোবোট’ এর বিপদ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। খুনে রোবট হলো কৃত্রিম বুদ্ধি নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র যা মানুষের কোন রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই আক্রমণে টার্গেট ঠিক করে তাকে আঘাত হানতে সক্ষম। কৃত্রিম বুদ্ধি নিয়ন্ত্রিত মারাত্মক অস্ত্রের ওপর আগাম নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিতে বর্তমানে যে আন্দোলন উত্তরোত্তর জোরদার হয়ে উঠছে ওপরে বর্ণিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের মতৈক্যটা হচ্ছে সেই আন্দোলনের সর্বশেষ সংযোজন। গত বছর এলোন মুষ্ক এবং গুগল ও মাইক্রোসফটের প্রতিনিধিরাসহ এক হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী ও শিল্পপতির এক জোট এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে লেখা একটা আনুষ্ঠানিক পত্রে স্বাক্ষর করেন। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তটা তাৎপর্যপূর্ণ এই দিক দিয়ে যে ওতে এই বিষয়টির ওপর ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এভাবে একটা উদ্যোগ ঘরোয়া পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে চলে যাওয়াটাই এক ধাপ বাস্তব অগ্রগতি বলে মনে করেন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর অস্ত্রবিষয়ক পরিচালক ও ‘স্টপ কিলার রোবোট’ আন্দোলনের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা স্টিফেন গুজ। গুজ বলেন, ‘মূলত তারা বিষয়টিকে টকশো পর্যায় থেকে এ্যাকশনের পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে সুনির্দিষ্ট ফলাফল ঘটবে বলে আশা করা যায়।’ এটা বহুল স্বীকৃত সত্য যে সারা বিশ্বের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উদ্ভাবনে আগে থেকেই লেগে আছে। গত আগস্ট মাসে চীনা কর্মকর্তারা জানান যে, চীন আগামী প্রজন্মের ক্রুজ মিসাইলে কৃত্রিম বুদ্ধি ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ব্যবহারের সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখছে। গুজ বলেন চীনের এমন পরিকল্পনা ভয়াবহ মনে হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরাইল ও অন্যরা অনুরূপ যে সব উদ্যোগ নিয়েছে তার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক নয়। যুক্তরাষ্ট্র তো এদিক দিয়ে অন্য যে কোন রাষ্ট্রের তুলনায় বেশিই এগিয়ে আছে। সবচেয়ে অগ্রসর সামরিক বাহিনীগুলো অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে। খুনে রোবোট নানা আকারের, নানা সাইজের হতে পারে। এমনকি এত ক্ষুদ্র আকারের হতে পারে যে বড় বড় ঝাঁকে আক্রমণ চালাবে। সেই আক্রমণ বিমান থেকে, স্থলভাগ থেকে, সাগর থেকে এমনকি সাগরতল থেকে হতে পারে। এসব অস্ত্রের মূল ইস্যুটি হচ্ছে মানুষের সংশ্লিষ্টতা না থাকা। প্রচলিত সাধারণ অস্ত্র কিংবা ড্রোনের মতো আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে পুরোদস্তুর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মৌলিক পার্থক্যটা এইখানে সে কি বা কাকে টার্গেট করা হবে এবং কখন আঘাত হানা হবে সে বিষয়গুলো আর মানুষ ঠিক করবে না। কৃত্রিম বুদ্ধি ও সেন্সর ব্যবহার করে খোদ অস্ত্রই রণাঙ্গনের এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। এতে যুদ্ধের প্রকৃতিটাই একেবারে বদলে যাবে। এতে যে মানুষের ভাল হবে তা নয়। বিজ্ঞান ও শিল্পের নেতৃবৃন্দের চাপ এবং স্টিফেন হকিংয়ের কিছু ভয় ধরানো হুঁশিয়ারি জাতিসংঘকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কাজ ঠেলে দিয়েছে। গুজ বলেন, বৈজ্ঞানিক সমাজ পুরোদস্তুর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উদ্ভাবনের বিরোধিতায় যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ। তারা এই ভেবে ঐক্যবদ্ধ যে পুরোদস্তুর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বের করা হলে কৃত্রিম বুদ্ধি উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী সমাজের সুনাম ক্ষুণœ হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিকে কল্যাণকর কাজে ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গুজ আরও বলেন যে, খুনে রোবোট ক্ষেপে গিয়ে উল্টোপাল্টা তা-ব চালাতে পারে এমন আশঙ্কা তো আছেইÑ তাছাড়া এমন রোবোট তৈরি করা হলে রোবোটিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে এবং তাতে বিপন্ন হতে পারে আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। তিনি উল্লেখ করেন যে পুরোদস্তুর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বিপদ দৃষ্টিগ্রাহ্য। তাই সাধারণ নাগরিক, সৈনিক ও এই গ্রহের ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কা রোধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অনুবাদ : এনামূল হক সূত্র : লাইভ সায়েন্স
×