ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফের হামলার আশঙ্কায় যুবকরা ফিরছে না

পাকিস্তানের গ্রামে সামাজিক বয়কটের মুখে আহমদিয়ারা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

পাকিস্তানের গ্রামে সামাজিক বয়কটের মুখে আহমদিয়ারা

পাকিস্তানের চাকওয়াল জেলার দুলমাইল গ্রামের আহমদিয়াদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হচ্ছে। গত মাসের ১২ তারিখ তাদের উপাসনালয়ে হামলার পর তারা ওই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। এখন তারা সেই গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। ফিরে এসে দেখে তারা বয়কটের মুখে পড়েছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। দুলমাইল গ্রামের বেশিরভাগ দোকানি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কাছে কিছু বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত ওই গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেছেন যে, স্থানীয় লোকজন তাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নয়। ১২ ডিসেম্বর হামলার পর কর্তৃপক্ষ সেখানে কার্ফু জারি করে এবং ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। ওই ঘটনায় একজন আহমদী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, একজন প্রতিবাদকারী নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। কর্তৃপক্ষ এরপর গ্রাম ছেড়ে যাওয়া লোকজনকে সেখানে ফিরে আসার আহবান জানায় এবং হামলার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা নেই তাদের গ্রেফতার না করার আশ্বাস দেয়। ঘটনার পর ১০ দিন সেখানে সেনা মোতায়েন ছিল। নতুন করে যেন কোন অঘটন না ঘটে সেজন্য প্রায় ১শ’ পুলিশ এখন ওই গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রামটির মোট লোকসংখ্যা ১২ হাজার; এর মধ্যে আহমদিয়ার সংখ্যা ৬শ’র মতো। চাকওয়াল জেলার জামাত আহমদিয়ার প্রধান মালিক জাহিদ হামিদ এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের আহবানে ১২৮ জনের মতো আহমদী গ্রামে ফিরেছে। যারা ফিরে এসেছে তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু কিংবা বয়স্ক লোক। স্থানীয় লোকজনের হামলার আশঙ্কায় কোন তরুণ বা যুবক গ্রামে ফেরেনি। তিনি আরও জানান, স্থানীয় লোকজন তাদের এড়িয়ে চলছে। কোন দোকানদার তাদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করছে না, এমনকি কোন গোয়ালাও তাদের কাছে দুধ বিক্রি করছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে চাকওয়াল শহরে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, স্থানীয় স্কুলেও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সবাই দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আরেকজন বলেছেন, আহমদিয়া-অআহমদিয়া সবাই মিলেমিশে গ্রামটিতে বসবাস করত। এমনকি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। কিন্তু ১২ ডিসেম্বর হামলার পর সবকিছু যেন বদলে গেছে। আহমদিয়ারা প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। তিনি বলছেন, আহমদিয়ারা যদি এখন পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি বিক্রি করতেও চায় কেনার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। চাকওয়ালের ডেপুটি কমিশনার বলেছেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে সামাজিকভাবে বয়কট ঠেকাতে সরকারের কিছু করার নেই। তবে তিনি একথাও বলেছেন যে, কাউকে নিজ হাতে আইন তুলে নিতে দেয়া হবে না। ১২ ডিসেম্বরের ঘটনায় নিহত নাইম শফিকের ভাই হাবিবুর রহমান টেলিফোনে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেছেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আহমদিয়াদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, তার ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় লোকজন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ক্ষুব্ধ, এটি ঠিক, তবে তাদেরকে কেউ সামাজিকভাবে বয়কটের আহবান জানায়নি। তারা যেকোন দোকানে যেতে এবং জিনিসপত্র কিনতে পারে।
×